বিশেষ সংবাদদাতা : যুদ্ধের দামামা, আর গোলাবারুদে যেখানে প্রতিনিয়ত হুমকিতে জীবন, সেই আফগানিস্তানই ক্রিকেটে এখন বড়দের আতঙ্ক। ওয়ানডে মর্যাদা পেয়েছে তারা ২০০৯ সালে। মাত্র ৭ বছরেই অন্য এক আফগান দলের আবির্ভাব দেখছে বিশ্ব। এ পর্যন্ত খেলা ৬৭ ওয়ানডেতে ৩৫ জয়, যেখানে আইসিসি’র পূর্ণ সদস্য দেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪ ম্যাচে জয় ৮টি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেখানে ৪টি লড়াইয়ে সমতা ২-২এ। ২০১৪ সালে এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে ৩২ রানে হারিয়ে দেয়া আফগানদের সেই জয়টিকে ফ্লুক বলে ধরে নিয়েছেন যারা, এখন তারাই আফগান শক্তিকে করছে সমীহ। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭ রানে হারে আফগান বীরত্ব দেখেছে বিশ্ব।
দ্বিতীয় ম্যাচে কৌশলের খেলায় ৩০ হাজার ডলার বেতনের বাংলাদেশ কোচ হাতুরুসিংহেকে দিয়েছেন হারিয়েছে আফগানিস্তানের ভারতীয় কোচ লালচাঁদ রাজপুত। বাংলাদেশের দুই ওপেনার বাঁ হাতি বলে নুতন বলের শুরুটা ডানহাতি অফ স্পিনার মোহাম্মদ নবীকে দিয়ে করিয়েছেন তিনি। তাতেই বাংলাদেশকে নামিয়ে এনেছে আফগানিস্তান ব্যাকফুটে। ওয়ানডে ক্রিকেটে তাদের যাত্রা শুরু আফগান কোচ তাজ মালিকে দিয়ে শুরু, পাকিস্তান কোচ কবির খানের হাত ধরে আইসিসি’র প্রথম কোন পূর্ণ সদস্য দেশ বাংলাদেশকে হারিয়েছে তারা ২০১৪ সালে। ইংলিশ কোচ এন্ডি মোলসে ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলেছে আফগানিস্তান। ওয়ানডে এবং টি-২০,দুই ভার্সনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় ছাড়া জিম্বাবুয়েকে উপর্যুপরি ২টি ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে আফগানরা পাকিস্তান লিজেন্ডারী ইনজামাম উল হকের প্রশিক্ষণে। ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপ পরবর্তী কোচ ইনজামামের পদত্যাগে ভারতের হয়ে ২ টেস্ট,৪ ওয়ানডে খেলা ব্যাটসম্যান লালচাঁদ রাজপুত এখন দেখাচ্ছে দলটিকে স্বপ্ন। তার আমলে স্কটল্যান্ডের মাটিতে স্কটিশদের ১-০তে হারিয়ে,আয়ারল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের সঙ্গে ২-২ এ ড্র করে বাংলাদেশ সফরে ইতোমধ্যে ১-১ এ সমতায় বড় কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানরা।
আফগানিস্তানের এই বদলে যাওয়া ক্রিকেট অধ্যায়ে সাবেক কোচ ইনজামাম এবং বর্তমান কোচ লালচাঁদ রাজপুতের অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছেন আফগান মিডল অর্ডার হাসমাতুল্লাহ শহীদিÑ‘গত এক বছর ধরেই আফগানিস্তানের ক্রিকেট আগের চেয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। ইনজামাম-উল-হক কোচ হিসেবে দারুণ কাজ করেছেন। এখন রাজপুত স্যারও খুব ভালো করছেন। আমাদের নিয়ে অনেক পরিশ্রম করছেন। বিশ্বের সেরা দলগুলোর মধ্যে আমরা একটি, সে আত্মবিশ্বাস আমাদের মধ্যে এনেছেন তিনি। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক না কেন, রাজপুত স্যার সবসময় ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে বলেন আমাদের। ৫০ ওভারের ম্যাচ কিভাবে খেলতে হয়, তা শিখিয়েছেন তিনি। সিঙ্গেলসে জোর দিয়ে শেষ বল পর্যন্ত খেলার শিক্ষাটা দিয়েছেন তিনি।’
এ পর্যন্ত ১৪টি দ্বি-পাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে ৪টিতে জয়ের অতীত আছে আফগানিস্তানের। যার মধ্যে বড় সাফল্য বলতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে ইতিহাস রচনা করতে চান হাসমাতুল্লাহ শহীদিÑ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে আমরা প্রথম সিরিজ খেলছি। আশা করি এটাই শেষ নয়। প্রতিটি দলের বিপক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই। ভবিষ্যতেও ভালো খেলতে চাই এবং ম্যাচ জিততে চাই।’
তবে ইতিহাস রচনার প্রত্যয়ে শিষ্যদের প্রতি তার বার্তাÑ‘আগামীকাল (আজ) আফগানিস্তান সিরিজ জয়ের জন্যই মাঠে নামবে। ছেলেদের বলেছি ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে। ম্যাচটা জিতলে এটা আফগানিস্তানের জন্য বড় ইতিহাস হবে। আমি শুধু দলটার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশ টেস্ট খেলুড়ে দেশ। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাই ছেলেদের বলেছি, তাদেরকে হারাতে হলে টি-২০ স্টাইলে ব্যাটিং বাদ দিয়ে ধৈর্য ধরে খেলতে হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন