পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত প্রায় ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বেশিরভাগ লোকজন জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল। বছরের চাকা ঘুরে আগস্ট মাস এলেই শুরু হয় প্রস্তুতি। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে জুমচাষে সবাই ব্যস্ত সময় পার করবে। বছরের পর বছর জুমচাষই সিংহভাগ পাহাড়ির একমাত্র সম্বল। খাগড়াছড়িতে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাসহ প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাস। জানা যায়, প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এরা বংশপরস্পর জুমচাষে জড়িত। জুমের উৎপাদিত ফসল দিয়ে সারা বছরে খাদ্য জোগান দিতে পারেন না পাহাড়িরা। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিম চাষ পদ্ধতি ‘জুম’। এখানকার জনগোষ্ঠীর মূল জীবিকা কৃষি। তিন পার্বত্য জেলার আয়তন ১৩ হাজার ১৮৪ বর্গকিলোমিটার। তিন জেলায় প্রতি বছর ১২ হাজার হেক্টর জমিতে জুমচাষ করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশিরভাগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষই জুমের ওপর নির্ভরশীল। জুমে চাষাবাদ হওয়ায় কমছে জুম ভূমির উর্বরতা। জুমের ফসল না আসা পর্যন্ত অনেক সময় খাদ্য সঙ্কটও দেখা যায়। জুমিয়ারা জানান, অতীতে এক পাহাড়ে জুমচাষ করার পর ১০ থেকে ১৫ বছর বিরতি দিয়ে সেই পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হতো। তবে বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাত্র ২ থেকে ৩ বছর পর একই পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হচ্ছে। ‘জুমভিত্তিক’ পাহাড়িদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটছে শ্লথগতিতে। উৎপাদিত জুম দিয়ে সারা বছরের খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয় না।
স্থানীয়দের কথায়, তারা জুমচাষ করেও সারা বছর চলতে পারেন না। অনেকে দিন আনে দিন খায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হাওয়ায় চিকিৎসাসেবাও পাওয়া যায় না। বিকল্প পেশা না থাকায় বংশপরম্পরায় জুমচাষ করে টিকে আছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। তবে তা দিয়েও সারা বছর সংসার চলে না।
প্রতি বছর জ্যেষ্ঠ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত জুমচাষিদের খাদ্য স্বল্পতা দেখা যায়। এ সময় অনেকে দিন-মজুর বা বনজসম্পদ বিক্রি করে সংসার চালান। পার্বত্য চট্টগ্রামে জীবিকার প্রধান অবলম্বন জুমচাষ। জুমের ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত অনেক জুমিয়া খাদ্য সঙ্কটে থাকেন।
জুমচাষের সাথে জড়িতরা জানান, জুমচাষকে আধুনিকায়ন করাও সময়ের দাবি। জুমচাষকে সাধারণ কৃষি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ঋণ সহায়তা প্রদান করা উচিত। এ ছাড়া পাহাড়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন