বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মুহাররম শব্দের অর্থ ও গুরুত্ব

এ.কে.এম ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

আরবি মুহাররম শব্দের অর্থ সম্মানিত, পবিত্র ও ফজিলতপূর্ণ। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই এই মাসটির সম্মান ও মর্যাদা একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। আমরা জানি, মুহাররম শব্দটি নাম বাচক বিশেষ্য নয় বরং গুণবাচক বিশেষণ। আল কোরআন ও আল হাদীসে এই মাসটিকে নিম্নলিখিত নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যথা : (ক) আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে- ‘শাহরুল হারাম’ বা নিষিদ্ধ ও অলঙ্ঘনীয় মাস। (খ) আল কোরআনে আরও এরশাদ হয়েছে- ‘আরবায়াতুল হুরুম’ অর্থাৎ চারটি মাস অলঙ্ঘনীয় মর্যাদার অধিকারী। (গ) আর হাদীস শরীফে এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। আরবী ‘হারাম’ এবং ‘হুরুম’ শব্দের গুণবাচক আখ্যা হচ্ছে- ‘মুহাররম’। এই গুণবাচক আখ্যাটিই কালক্রমে মাসের নাম হয়ে গেছে।

এই গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ মাসে আরবের লোকেরা যুদ্ধ বিগ্রহ ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হতো না। মর্যাদাপূর্ণ চারটি মাসের মধ্যে তিনটি এক নাগাড়ে আসে। যথা : জিলক্বদ, জিলহজ ও মুহাররম। আর চুতর্থ মাসটি হলো রজব। যা জামাদিউস সানী ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।

মুহাররম মাসের সম্মান, মর্যাদা এবং গুরুত্বকে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন : তোমরা আল্লাহর মাস মুহাররমের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে। কেননা, যে ব্যক্তি মুহাররমের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে, আল্লাহ জাল্লা শানুহু স্বয়ং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত দান করে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করবেন। (সহিহ মুসলিম ও সুনানে ইবনে মাজাহ)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন : বছর হলো বারটি মাসের সামষ্টিক রূপ। এর মধ্যে চারটি অধিক মর্যাদাপূর্ণ। এই মাস চতুষ্টয়ের তিনটি জিলক্বদ, জিলহজ ও মুহাররম লাগাতার আসে। আর চতুর্থ মাসটি হলো রজব। যা জামাদিউস সানী ও শাবানের মধ্যবর্তীতে অবস্থিত। (সহিহ বোখারি)। অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : মুহাররম মাসে এবাদতকারী ব্যক্তি যেন শবে-কদরের ইবাদত করায় ফজিলত লাভ করল। (আহমাদ)।
মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত অলঙ্ঘনীয় মর্যাদাপূর্ণ মাসগুলোতে মোমিন-মুসলমানদের সতর্ক করে এরশাদ করেছেন : তোমরা এই মাসগুলোতে নিজেদের ওপর জুলুম করো না। (সুরা তাওবাহ : আয়াত-৩৬)। এই আয়াতে কারিমায় অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সন্ধান লাভ করা যায়। প্রথমত : এ মাসগুলোর ধারাবাহিকতা যথাযথভাবে অক্ষুন্ন রাখা এবং এই সম্মানিত মাসগুলোর সাথে সম্পৃক্ত আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দেয়া হুকুম আহকামকে সৃষ্টির আদি পর্বের খোদায়ী বিধানের সাথে সঙ্গতিশীল রাখা একান্ত দরকার। কেননা, এতে কোনো মানুষের কমবেশি কিংবা পরির্বতন ও পরিবর্ধন করার প্রয়াস চালানো তার অসুস্থ বিবেক-বুদ্ধি ও মন্দ স্বভাবের পরিচায়ক। এমনটি কোনোমতেই হতে দেওয়া যায় না। দ্বিতীয়ত : এ পবিত্র মাসগুলোর যথাযথ আদব ও মর্যাদা রক্ষা না করে এবং ইবাদত বন্দেগিতে অলস থেকে সময় অতিবাহিত করা নিজের ওপর জুলুম করারই শামিল। এতদসম্পর্কে ইমাম জাস্সাম (রহ:) বলেছেন : এ মাসগুলোর এমন গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার ফলে এতে ইবাদত বন্দেগি করা হলে বাকি মাসগুলোতেও ইবাদত বন্দেগির তৌফিক ও অনুপ্রেরণা লাভ করা যায়। অনুরূপভাবে কেউ এ মাসগুলোতে পাপাচার ও মন্দকাজ হতে নিজেকে দূরে রাখতে সক্ষম হলে বছরের অন্যান্য মাসেও পাপাচার থেকে দূরে থাকা সহজ হয়। এজন্য এ সুযোগের সদ্ব্যবহার না করা বা এ থেকে বিরত থাকা হবে। নিজের ওপর অপূরণীয় ক্ষতি করা। এ জন্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ মাসগুলোতে নিজের ওপর জুলুম করতে নিষেধ করেছেন। (আহকামুল কোরআন)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন