‘যশপ্রীত যখন ব্যাট করতে ক্রিজে আসবে, জিমি নিশ্চিত তখন বল হাতে পাওয়ার জন্য (ইংল্যান্ড অধিনায়ক রুটকে) পীড়াপিড়ি করবে!’ দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইন টুইটটা মজা করেই করেছেন। কিন্তু লর্ডস টেস্টে গতকাল যশপ্রীত বুমরা যা করেছেন, এরপর ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে কিংবা সিরিজের বাকি তিন টেস্টেও বুমরা ব্যাট হাতে ক্রিজে এলে যে ‘শোধ’ নিতে চাইবেন ‘জিমি’ জেমস অ্যান্ডারসন, সেটা সম্ভবত বলে দেওয়াই যায়!
কী করেছেন বুমরা? লর্ডস টেস্টের তৃতীয় দিনে কাল অ্যান্ডারসনকে ব্যাট হাতে পেয়ে একের পর এক বাউন্সার ছুড়েছেন বুমরা, এর প্রায় প্রতিটিই ছিল অ্যান্ডারসনের শরীরে তাক করা। একবার তো অ্যান্ডারসনের হেলমেটেই বল লেগেছে! কিন্তু এভাবে বোলিং করতে গিয়ে বুমরা এক ওভারেই ‘নো বল’ করেছেন চারটি! তার এই বারবার নো বল করা এবং অ্যান্ডারসনের শরীর তাক করে অতি-আগ্রাসী বোলিং, দুটি নিয়েই বিতর্ক ছড়াচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটেও নো বলের জন্য ফ্রি-হিট রাখার নিয়মের কথাও বলছেন অনেকে।
ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১২৫তম ওভার ছিল সেটি। ইংল্যান্ডের এগারতম ব্যাটসম্যান অ্যান্ডারসন ক্রিজে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে দেখেই রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করতে গেলেন বুমরা। পুরো দিনে উইকেট না পাওয়ার হতাশাই হোক, ইংল্যান্ড ইনিংস দ্রæত গুটিয়ে দেওয়ার তাড়নাই হোক, কিংবা ইংল্যান্ডের হয়ে ভারতের প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়া অ্যান্ডারসনকে ‘কড়া জবাব’ দেওয়া, বুমরা অতি-আগ্রাসী মনোভাবে বোলিং শুরু করে দিলেন!
প্রথম বলেই বুমরার বাউন্সার লাগল অ্যান্ডারসনের হেলমেটে। বল গালিতে ফিল্ডারের হাতে যাওয়ার পর সে বলে আবার ক্যাচের আবেদনও করেছেন বুমরা। এদিকে অ্যান্ডারসনের হেলমেটে বল লাগায় লম্বা সময় ধরে পরীক্ষা করা হলো, অ্যান্ডারসনের কনকাশন (মাথায় আঘাতজনিত ঝামেলা) হয়েছে কি না। পরের বল, আবারও বাউন্সার, এবার পাঁজরে। পরের দুটি বলও বাউন্সারই দিলেন বুমরা, তবে এর মধ্যে দ্বিতীয় বলটি করার সময় ভারতীয় ফাস্ট বোলারের পা থাকল বোলিং ক্রিজের বাইরে- নো বল! সেই শুরু।
এরপর যে পাঁচটা বল করলেন বুমরা, তার মধ্যে বাউন্সার আর ইয়র্কার মিলেমিশে থাকল। কখনো কোনোরকমে বলের লাইন থেকে সরে গিয়ে, কখনো ব্যাট পেতে দিয়ে বাঁচলেন অ্যান্ডারসন, কখনো বল গায়েই লাগল। মাঝে একে অন্যকে চোখ পাকানোও চলল ব্যাটসম্যান-বোলারের। কিন্তু বুমরার প্রতিটি নো বলে হয়তো আরেকটু বিরক্তই হচ্ছিলেন জিমি। একেকটা নো বল মানে যে তার জন্য ছিল বুমরার আরেকটি বলের মুখোমুখি হওয়া! অবশেষে চারটি নো বল, এই চারটির মধ্যে দুটিসহ মোট পাঁচটি বাউন্সার, চার বাউন্সারের মধ্যে দুটিসহ তিন ইয়র্কার নিয়ে ১০ বলে ওভার শেষ করলেন বুমরা! কিন্তু বুমরার এভাবে বারবার অ্যান্ডারসনের শরীর তাক করে বল করা নিয়ে হচ্ছে বিতর্ক। ক্রিকেটের বাইবেল-খ্যাত উইজডেনের ওয়েবসাইট লিখেছে, ক্রিকেটের আইনের ৪১.৬ ধারার সঙ্গে বুমরার বোলিং সাংঘর্ষিক!
‘শর্ট পিচ বোলিং বিপদজনক বলে বিবেচিত হবে যদি বোলারের দক্ষতা, গতি, লেংথ, উচ্চতা এবং বলের গতিপথ হিসেব করে বোলারের প্রান্তের আম্পায়ারের মনে হয় যে এমন বোলিং ব্যাটারকে শারীরিকভাবে আহত করতে পারে। স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা ব্যাটার যে শরীর বাঁচানোর মতো নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরেছেন, সেটি এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা হবে না’- ক্রিকেটের আইনকে উদ্ধৃত করে লিখেছে উইজডেন। বোলার বিপদজনক বোলিং করছেন, এমনটা মনে হলে আম্পায়ার তার বলকে নো বল ঘোষণা করে তাঁকে প্রথম ও শেষ হুঁশিয়ারি দিতে পারেন। এরপরও এমন বোলিং করলে তাঁকে বোলিং থেকে সরিয়ে দেবেন আম্পায়ার।
সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ১৩টি নো বল করেছেন বুমরা, অথচ এতকিছুর পরও ইনিংসে উইকেটশ‚ন্য থাকলেন তিনি। এর আগে ২০১০ সালে মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংসে উইকেটশ‚ন্য ইশান্ত শর্মা ১০টি নো বল করেছিলেন।
বুমরার এই ওভার বিতর্ক তুলে দিয়েছে, এমন বোলিং নিরূৎসাহিত করতেই ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির মতো করে টেস্টেও নো বলের বিপরীতে ফ্রি-হিটের ব্যবস্থা করা উচিত আইসিসির। অনেকের ধারণা, অ্যান্ডারসনের ওপর আগ্রাসন চালাতেই বুমরা ইচ্ছে করে নো বল করেছেন, যাতে বেশি সময় ধরে অ্যান্ডারসনকে ভয় দেখানো যায়। সে কারণেই ফ্রি-হিটের দাবি জানিয়ে উইজডেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেন গার্ডনার লিখেছেন, ‘কেউ একজন প্রতিপক্ষের ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে ৯০ মাইল বেগে বোলিংয়ের সময় দাগের চেয়ে পা অনেক বাইরে রেখে বোলিং করছেন, এটা দেখে কেমন লাগা উচিত বুঝতে পারছি না। অন্য কিছু হোক না হোক, টেস্টে ক্রিকেটে ফ্রি-হিট আনা উচিত।’ যুক্তরাজ্যের সংসদের সাবেক সাংসদ ডেভিড গকও এ নিয়ে টুইট করেছেন, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নো বলের পর ফ্রি-হিটের দাবির পক্ষে যদি কখনো কোনো যুক্তির প্রয়োজন পড়ে থাকে, অ্যান্ডারসনের বিপক্ষে বুমরার ওই ওভার সে কাজটা করে দিয়েছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন