আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশের মধ্য দিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখলের দ্বারপ্রান্তে তালেবান। ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। এখন চলছে তালেবানের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া।
একের পর এক প্রাদেশিক শহর জয়ের পর তালেবানের এই চূড়ান্ত বিজয়ের খবর ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মুহূর্তে মুহূর্তে ফেসুবকের নিউজ ফিডে আসছে আফগান পরিস্থিতির সর্বশেষ খবরাখবর। বিশ্ববাসীর সবাই নজর যেন এখন আফগানিস্তানে। কি হতে যাচ্ছে সেখানে।
মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পর খুবই দ্রুত গতিতে গোটা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে তালেবান। মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর সাথে দীর্ঘ ২০ বছর লড়াই করে বিজয় অর্জন করতে যাওয়া তালেবান এখন সবার মুখে মুখে। তাদের প্রবল সাহসিকতা, দৃঢ়তা ও চেতনার প্রশংসা না করে পারেননি অনেক সমালোচকও। অনেকেই তালেবানের এই অগ্রগতিতে ফেসবুকে আনন্দ-উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। তবে কেউ কেউ সমালোচনা ও উদ্বেগও জানিয়েছেন।
সর্বশেষ আফগান পরিস্থিতি নিয়ে জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘‘আজ যদি গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, আব্দুর রশিদ দোস্তামের মতো শক্ত প্রতিপক্ষ বিদ্যমান থাকতো তাহলে তালেবানদের পক্ষে কাবুল যখন এত সহজ হতো না। মার্কিনিদের ভুল নীতি আফগানিস্তানের পরিবেশ তালেবানদের জন্য একতরফা করে দিয়েছে। অবশ্য ভুল নীতি বলা কতটা সংগত সেটাও তর্কসাপেক্ষ। কেননা এই তালেবান তো মার্কিনিদেরই সৃষ্টি। বলা যায়, মার্কিনীরা এক সময় তাদের সৃষ্ট তালেবানদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল, আবার তারাই তাদের সৃষ্টির কাছ থেকে পরবর্তীকালে যে রাষ্ট্র কেড়ে নিয়েছিল, এখন আবার তাদেরকেই ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গেলো।’’
তালেবানের বিজয়কে ইসলামের বিজয় হিসেবে বর্ণনা করে মোঃ তুহিন লিখেছেন, ‘‘এ যেনো শান্তিপূর্ণ ভাবে মক্কা বিজয়ের মত। আলহামদুলিল্লাহ,, আল্লাহু আকবার,,ইমারতে ইসলামিয়্যাহ জিন্দাবাদ। রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী,, কেয়ামতের পূর্বে খোরাসান থেকে একটি দল আত্মপ্রকাশ করবে যাদেরকে কেউ প্রতিহত করতে পারবে না এবং শেষ অবধি তারা সকল কুফরি শক্তির বক্ষ চিড়ে বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় করবে। তারা আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত দল হবে এবং তারাই হবে ইমাম মাহদীর সৈনিক। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে খোরাসানের তথা আফগানিস্তানের ঐ পাহাড়ি মোল্লারাই হচ্ছে সেই দল।’’
আমেরিকার সমালোচনা করে মোহাম্মাদ আজাদ ইকবাল লিখেছেন, ‘‘আজ কোথায় সেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যারা দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ আফগানিস্তান নামোক রাষ্ট্রটিকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। আজকে এমন একটি পরিস্থিতিতে এই দেশটিকে ফেলে দিয়েছে এখানে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। সাধারণ মানুষ তার একার পক্ষে যাবে তালেবান না বর্তমান সরকারের মধ্যে রয়েছে। আমরা চাই আফগানিস্তানে শান্তি ফিরে আসুক।’’
রক্তপাতহীন কাবুল বিজয়ে আনন্দ প্রকাশ করে আয়াত ইসলাম আবিদা লিখেছেন, ‘‘আলহামদুলিল্লাহ, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করেছে তালিবান। এক নতুন ইতিহাসের সূচনা হলো। তারা ঘোষণা দিয়ে রক্তপাত এড়িয়ে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে। কাবুলের জনগন রাস্তায় বেড়িয়ে এসে তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছে। এখন তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের মাধ্যমে উম্মাহর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনুন। আমিন।”
ইমরান সওকতের মন্তব্য, ‘‘জোর করে ইসলাম কখনো কায়েম হয়নি। আবার জোর করে ইসলামকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। ইসলাম সব সময় শান্তির কথা বলে শান্তিকে অগ্রধিকার দেয়। তালেবান কিংবা যেকোন ইসলামিক সংগঠনের উচিৎ শান্তি বজায় রেখে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া।’’
এফজি হানি লিখেছেন, ‘‘ব্যাক্তি জীবনে ২০ বছর বিশাল একটা সময়৷ প্রায় অর্ধ জীবনকাল৷ কিন্ত জাতীয় জীবনে বা ইতিহাসের পাতায় বিশ বছর কয়েক ঘন্টা বা কয়েক মুহূর্তের মত৷ আর যে অপবাদ (সন্ত্রাসী, জঙ্গী) এসব সাময়িক সময়ের জন্য৷ কারণ ইতিহাস রচনা করা বিজয়ীরা; পরাজিতরা নয়৷ তালেবান আজ বিজয়ী৷ পৃথিবীতে তাদেরকে জঙ্গী বলার মত আর কেউ রইলো না...।’’
হোসাইন মাহমুদের আহ্বান, ‘‘যে কোন পরিস্থিতিতে আফগান সরকার ও তালেবান বাহিনীর উচিত দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চত করা। যৌথ উদ্যোগে বিদেশি বাহিনী হতে মুক্ত হওয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন