চলতি অর্থবছরের শুরুতে অনুমোদন হওয়া লক্ষ্মীপুরের মেঘনার তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা চান রামগতি-কমলগরের সাড়ে সাত লাখ জনগণ। এমন দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে দাবি জানিয়ে আসছে রামগতি-কমলনগরের সচেতন মহল। জাতীয় সংসদেও আলোচনা করেছেন স্থানীয় এমপি মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।
গত ১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় রামগতি-কমলনগর উপজেলার মেঘনার ভাঙনরোধে প্রায় একত্রিশ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। দুটি উপজেলার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় তিন হাজার একশ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় ৫ বছরে প্রায় ৩১ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
সুত্র জানায়, ২০১৪ সালে অন্য একটি প্রকল্পের মাধমে দুটি উপজেলার বেড়িবাঁধের কাজ হয়েছে সাড়ে ৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার, রামগতি বাজারে ১ কিলোমিটার এবং কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাটে ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। রামগতি উপজেলার সাড়ে ৪ কিলোমিটার কাজ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং টিম। একই প্রকল্পে কমলনগরের মাতাব্বরহাটে কাজটি করে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। মাতাব্বরহাটের ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে অনিয়ম এবং নিম্নমানের কাজ হওয়ায় এক বছরেই ভাঙন দেখা দিয়েছ দশ বারের মতো। বর্তমানে বাঁধের বেশিরভাগ অংশই নদী গর্ভে বিলীন।
অন্যদিকে, রামগতি উপজেলার বেড়িবাঁধ গত সাত বছরে ছোট খাটো দু’একটি সমস্যা ছাড়াই দৃশ্যমান রয়েছে। এক হাজার দুইশ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় মাত্র ১৯৮ কোটি টাকার কাজ হয়। এরপর অবশিষ্ট প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এনিয়ে রামগতি-কমলনগরে নিয়মিত পালিত হচ্ছে সভা সমাবেশ, মানববন্ধন এবং সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী।
সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেও করা হয়েছে মানববন্ধন। জনসাধারণের দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদের বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এমপি মেজর (অব.) আবদুল মান্নান প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেনাবাহিনীর মাধমে কাজটি করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় বৃহৎ এ প্রকল্পে বড় ধরনের দুর্নীতির আশঙ্কা করছেন তারা।
কমলনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কমলনগর নদী শাসন সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব এম এ মজিদ জানান, প্রথমে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্ধারণ করা, আর যদি তা সম্ভাব না হয় তাহলে সেনাবাহিনীর মাধ্যমেই কাজটা করা হউক। সাধারণ ঠিকাদারের মাধ্যমে বেড়িবাঁধের কাজ করার বাস্তব প্রার্থকটা আমরা গত প্রকল্পের কাজে দেখছি। বিশ বছর আন্দোলন সংগ্রামের এতো বড় প্রকল্প। এতে কোন রকম দুর্নীতি বা অনিয়ম হোক তা আমরা চাইনা।
প্রকল্পটি নিয়ে গত দু বছর ধরে কাজ করা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আবদুজ্জাহের সাজু জানান, রামগতি-কমলনগরের জনসাধারণের স্বপ্নের প্রকল্পটি চ‚ড়ান্ত করতে সাথে ছিলাম। কাজটি যেন সুন্দর ও সঠিক ভাবে সমাপ্ত হয় সে ব্যাপারে অবশ্যই সজাগ থাকবো। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাজটি করানোর জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবো।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে রামগতি-কমলনগরের অসংখ্য মানুষ দিন দিন সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। মেঘনার ভাঙনরোধে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পাস করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। আশাকরি তিনি প্রকল্পটি সুন্দরভাবে সম্পাদন করার জন্য সব ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী হোক আর পানি উন্নয়ন বোর্ড হোক কাজটি দ্রুত এবং সুষ্ঠুভাবে হোক এটাই চাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন