শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটক আসতে বাধা কোথায়?

প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : প্রতি বছর একশ’ কোটিরও বেশি পর্যটক সারাবিশ্বে ভ্রমণ করলেও বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা এখনও মাত্র ৫ লাখের মতো। পর্যটন খাত সরাসরি যেখানে বিশ্ব অর্থনীতিতে ২.২৩ ট্রিলিয়ন ডলার অবদান রাখছে সেখানে বাংলাদেশ পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত, ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন, অনেক প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন ছাড়াও ঋতু বৈচিত্র্যের বাংলাদেশ পর্যটনের জন্য সম্ভাবনাময়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও পর্যটন এলাকা হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় কক্সবাজার। যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সুযোগ-সুবিধার কারণে বছরজুড়ে লাখো মানুষের সমাগম হয় সেখানে। কিন্তু কক্সবাজারে দেখা যায় বেশিরভাগই দেশীয় পর্যটক।
কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে ঘুরতে এসেছেন নববিবাহিত শারমিন কৌশিক দম্পতি। বেড়াতে এসে তাদের অভিজ্ঞতা দিয়েই বলছিলেন বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আরো কী করা দরকার। কৌশিক বলছিলেন, ‘এন্টারটেইনমেন্টের জন্য আরো কিছু ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। আমাদের সুন্দর একটা বিচ আছে, বিচের মধ্যেই বসে আছি এরপর রাতে রুমে বসে থাকতে হচ্ছে’। শারমিন বলছিলেন, বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
‘ফরেনাররা একটু খোলামেলা পোশাক পরতে পছন্দ করে। আমাদের ছেলে এমনকি মেয়েরাও তাদের দেখলে সবাই আজগুবিভাবে তাকিয়ে থাকে। এছাড়া একটা বড় প্রবলেম হলো যে, আমি গোসল করছি বা হাঁটছি কেউ তাকাচ্ছে বা ছবি তুলছে, ভিডিও করছে এতেও অস্বস্তি লাগে’।
নিয়মিত দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করেন এমন পর্যটকরা বলছেন, শুধু উন্নতমানের থাকা-খাওয়া এবং বিনোদনের বন্দোবস্ত থাকাটাই যথেষ্ট নয়। সৈকতে বেড়াতে আসা শরিফুল ইসলাম বলছিলেন, ‘ফরেনাররা হয়তো নিউজপেপার দেখে বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে আমাদের সম্পর্কে একটা আইডিয়া নেয়। কিন্তু যখন বিদেশীরা এসে সরাসরি বাংলাদেশকে দেখবে, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হবে, খাবারদাবার গ্রহণ করবে তখনই বাংলাদেশের একটা রিয়েল ইমেজ তৈরি হবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
হিসাব অনুযায়ী পর্যটন খাতে বাংলাদেশে আয় বাড়লেও দেখা যায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় সেটি খুবই সামান্য। সরকারি হিসাবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সাড়ে পাঁচ লাখ বিদেশী পর্যটক ভ্রমণ করেছে যেখান থেকে আয় হয়েছে ১১৩৬.৯১ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাকের আহমেদ বলেন, ট্যুরিজমের সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় জড়িত।
‘যদি বাংলাদেশে একসঙ্গে দুই হাজার ট্যুরিস্ট চলে আসে আপনি থাকার জায়গা দিতে পারবেন না। আছে, তবে মারাত্মক রকমের অপ্রতুল। দিনের বেলায় ঘুরে ঘুরে দেখল রাতেরবেলায় কী করবে। নাইট লাইফ নেই, কমপ্লিটলি অ্যাবসেন্ট নাইট লাইফ এদেশে।’
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে খবর পরিবেশন করা হয়, তাতে একটি অবকাঠামোহীন, দরিদ্র, অনুন্নত দেশের ছবিই ভেসে ওঠে, যেখানে সন্ত্রাস আর সামাজিক অস্থিরতা নিত্যদিনের ঘটনা। মি: আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পজিটিভ প্রচার দরকার। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বিজ্ঞাপন দিতে হবে। ‘ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি এ্যাজ অ্যা হোল দেশের ইমেজের ওপরে নির্ভর করে। আমাদের দেশে হলি আর্টিসান বা শোলাকিয়ায় পরপর দু’টি ঘটনায় ট্যুরিজম শিল্প মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।’
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অপরুপ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে ৬৮টি পর্যটন স্পট রয়েছে এবং আবাসনের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ৪০৪টি তিন তারকা বা তদূর্ধ্ব হোটেল-মোটেল রয়েছে। এছাড়া ফরেনারদের জন্য টেকনাফ উপজেলার সাবরাঙে সাড়ে এগারোশ’ একর জমিতে বিশেষ ট্যুরিস্ট জোন করা হচ্ছে যেখানে বিদেশীদের যাবতীয় সুবিধাদি যেটা ভিয়েতনামের হা লং বে কিংবা মালয়েশিয়ার গ্যাংটক হাইল্যান্ডের মতো সুবিধাদি নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বপ্নটা হচ্ছে বাংলাদেশকে একটা সিঙ্গেল ডেস্টিনেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা বিশ্বের কাছে।’
এদিকে ২০১৬ সালকে বাংলাদেশ পর্যটন বছর ঘোষণা করে দশ লাখ বিদেশী পর্যটক ভ্রমণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। তবে এ বছর সে লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না সেটি নিশ্চিত পর্যটন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই। Ñবিবিসি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন