কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু (শেখ রাসেল সেতু) রক্ষা বাঁধ ধসে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নদী পাড়ের রাস্তাসহ পানির বাঁধের বøক নদীগর্ভে ধসে পড়েছে। গড়াই নদীর এই ভাঙ্গনের ফলে হরিপুর ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষ আঙ্ককের মধ্যে পড়েছে। গত ১০ মাস পর আবারো এই ভাঙ্গণের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (১৫ আগস্ট) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৮ মিটার বøক গড়াই নদীতে বিলীন হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এলজিইডির কুষ্টিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আকমল হক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি অফিসের সমন্বয়হীনতা এবং নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে বাঁধ নির্মাণের কারণে বাঁধে ধস নেমেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বøক বাঁধ নির্মাণের চার বছর পার না হতেই সেতুর পূর্ব পাশের রাস্তা ও বøক পানিতে ধসে পড়েছে। ধসে যাওয়া অংশের পরিমাণ প্রায় ৪৮ মিটার। এর আগে ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর একই জায়গায় বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার বøক গড়াই নদে বিলীন হয়। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় এক বছর আগে থেকেই নদীর এ স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দ্রæত সমস্যা সমাধান না করলে নদী পাড়ের ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। অবিলম্বে এ ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর।
এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ওই জায়গা বরাবর নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজারের কারণে সেতুর রক্ষা বাঁধে ধস নেমেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ধসে যাওয়া অংশের পরিমাণ প্রায় ৪৮ মিটার। তবে ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ টিম আসলে এর আসল কারণ জানা যাবে। নিয়ম মেনেই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি ছিল না। বাঁধ নির্মাণের কাজ আমরা সুন্দরভাবে করেছিলাম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দীন বলেন, দশ মাস আগে একই জায়গায় বাঁধটিতে ধস নেমেছিল। আবারও ধস নেমেছে। বাঁধটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) তত্ত¡াবধানে রয়েছে। তারাই এটি দেখাশোনা করবে।
এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজারের কারণে সেতু রক্ষা বাঁধে ধস নামেনি। সরজমিনে গিয়ে ধসের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ডাম্পিং না করে বøক প্লেসিং করার কারণেই এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এলজিইডির কুষ্টিয়ার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আবারও বাঁধে ধস নেমেছে। ভাঙন দেখতে সেখানে আমাদের প্রতিনিধিকে পাঠানো হয়েছে। আমরা বিস্তারিত ঢাকায় প্রধান অফিসকে জানাবো। বাজেট এলেই কাজ শুরু করা হবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। দ্রæত সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, সেতুটি যাতে কোনো প্রকার ক্ষতির মুখে না পড়ে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি উভয়কেই নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। দ্রæত এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া শহরের পাশেই হরিপুর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নকে শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে গড়াই নদের ওপর ২০১৭ সালে শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়। আর সেতুর উভয় পাশের ৪১০ মিটার বøক বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন