ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এম পি বাংলাদেশের ওমরাহযাত্রীরা সিনোফার্মার টিকা গ্রহণ করে যাতে ওমরাহ করতে যেতে পারেন সে বিষয়ে তিনি সউদী সরকার ও সউদী রাষ্ট্রদূত এর সহযোগিতা কামনা করেছেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ওমরাহ কার্যক্রম চালু হওয়ায় রাজকীয় সউদী সরকারকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, ২৪৭ টি ওমরাহ এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, শিগগিরই আরো ওমরাহ এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করা হবে। ওমরাহ যাত্রীদের সউদী অংশের খরচের অর্থ আইবিএএন এর মাধ্যমে প্রেরণের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি সকলকে অবহিত করেন। তাছাড়াও ওমরাহযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে আহবান জানান।
আজ রোববার হাবের উদ্যোগে ‘‘কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে পবিত্র ওমরাহ ব্যবস্থাপনা ও পালনের চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এসব কথা বলেন। হাব এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এম পি।
সভায় বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি বলেন, ওমরাহযাত্রী ফ্লাইটে উঠার ৭২ ঘন্টার মধ্যে পিসিআর টেস্ট করতে হবে, পজিটিভ আসলে যাত্রীরা সউদী যেতে পারবে না। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের টিকিট রিসিডিউল করা হয়। ওমরাহযাত্রীদের ক্ষেত্রেও তাই করা হবে। ওমরাহযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়ে তিনি আশ্বস্ত করেন। সিনোফার্মার টিকা নিয়ে ওমরাহ গমনের বিষয়ে সউদী আরবের নির্দেশনা প্রয়োজন বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। ওমরাহযাত্রীদের জন্য সরাসরি মদিনা ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে তিনি আশ্বস্ত করেন। তবে এক্ষেত্রে সউদী সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। তিনি এ ব্যাপারে সউদী রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় আরো সংযুক্ত ছিলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম পিএইচ.ডি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশস্থ সউদী রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউছুফ ঈসা আলদুহাইলান।
হাব সভাপতি তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, সিনোফার্মা টিকা ওমরাহযাত্রীদের জন্য সউদী আরব কর্তৃক অনুমোদিত নয়। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে সিনোফার্মা টিকাই এখন দেয়া হচ্ছে। সিনোফার্মার টিকা যাতে সউদী কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেন সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো প্রয়োজন। অথবা বাংলাদেশি ওমরাহযাত্রীদের জন্য সউদী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফাইজার, মর্ডানা, এস্ট্রাজেনেকা, জনসন এন্ড জনসন ইত্যাদির যেকোন একটি টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ওমরাহযাত্রীদের খরচের অর্থ সউদী আরবে আইবিএএন এর মাধ্যমে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হাব সভাপতি তসলিম বলেন, ওমরাহযাত্রী ফ্লাইটে উঠার আগে পিসিআর টেস্ট পজেটিভ হলে যাতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং টিকিট এবং হোটেল পুনরায় বুকিং করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ওমরাহযাত্রীদের বর্তমানে সউদী এয়ারলাইন্স ও বিমানের প্রকাশিত ভাড়া অনেক বেশি। বিমান ভাড়া কমানোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের ওমরাহযাত্রীরা যাতে ভাল সেবা পান সে বিষয়ে ওমরাহ এজেন্সিসমূহ যাতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন এবং প্রাপ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সকল এজেন্সিকে তিনি আহবান জানান।
অতিথিদের মধ্যে থেকে বক্তব্যে সউদী কাউন্সেলর (হজ) জেদ্দা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সকলকে অবশ্যই সউদী আরবের নির্দেশনার অনুযায়ী ভ্যাক্সিন নিতে হবে। সিনোফার্মার টিকার বিষয়ে শিগগিরই সউদী সরকার থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সউদী এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স কান্ট্রি ম্যানেজার তারিক এ আল-ওয়াইদি জানান, বাংলাদেশের ওমরাযত্রীদের সুবিধার্থে দৈনিক ৩টি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সভা আহবানের জন্য তিনি হাবকে ধন্যবাদ জানান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল আলোচনায় অংশগ্রহণ করে জানান যে, বিমানের পক্ষ থেকে ওমরাহ ফেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। ওমরাহযাত্রীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সর্বদাই প্রস্তুত।
রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউছুফ ঈসা আলদুহাইলান বলেন, সউদী বাদশাহ পবিত্র আল্লাহর ঘর এবং মহানবীর মসজিদের কাস্টডিয়ান। বর্তমানে কোভিড প্যানডেমিকের কারণে ৬০ হাজার ওমরাযাত্রীর ওমরাহ পালনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ভবিষ্যতে তা বাড়ানো হবে। যাতে আরো বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি ওমরাহযাত্রীরা নির্বিঘ্নে ওমরাহ পালন করাতে পারেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশি মুসলমানরা অতিশয় ধর্ম পরায়ণ এবং পবিত্র মক্কা মদিনায় গমনের জন্য সর্বদাই উদগ্রীব থাকেন। বাংলাদেশি হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের সেবায় সকল প্রকার সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস।
ধর্ম সচিব মো. নূরুল ইসলাম পিএইচডি বলেন, ওমরাহযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর প্রয়োজন। হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের কল্যাণে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। ধর্ম সচিব বলেন, বর্তমানে হাবের সাথে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোন দূরত্ব নেই বরং মন্ত্রণালয় এবং হাব হজযাত্রীদের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। সভার শুরুতে হাবের ইসি সদস্য মুফতি জাহিদ আলম পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। সভার শেষে ১৫ আগস্টে নিহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করেন হাবে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান। তাছাড়া ২১ আগস্টে নিহত সকল শহীদ ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর রূহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
সভায় আরো সংযুক্ত ছিলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গাজী উদ্দিন মো. মনির, পরিচালক (হজ) মো. সাইফুল ইসলাম, উপ-সচিব আবুল কাশেম মো. শাহীন, হাবের সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, হাবের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ আলম, মোতাহার হোসেন বাবুল, হাব মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, হাবের সাবেক সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক, সাবেক সভাপতি মো. আলহাজ আবদুশ শাকুর, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার, সাবেক সভাপতি আলহাজ জামাল উদ্দিন আহমেদ, হাবের সাবেক মহাসচিব এম. এ. রশিদ শাহ্ সম্রাট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন