মৎস্য খাত বাংলাদেশে একটি স্বর্ণালী অধ্যায় সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। গতকাল রাজধানীর মৎস্য ভবনের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী একথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হচ্ছে মাছে-ভাতে বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের মৎস্য খাতকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে বিকশিত করছেন এ ধারাকে অব্যাহত রেখে মৎস্য সম্পদে বিশ্বে আমরা অনন্য-আসাধারণ জায়গায় পৌঁছে যাবো। এ লক্ষ্য নিয়ে মৎস্য খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এবারের মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন হতে যাচ্ছে। মাছে-ভাতে বাঙালির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জায়গাতে আমরা শুধু পরিপূর্ণতাই আনবো না, বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ হবে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।
মন্ত্রী বলেন, ‘বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি’ এ প্রতিপাদ্যে গতকাল থেকে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করা হবে। আজ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন এবং সংসদ লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। প্রেসিডেন্ট আগামী ৩১ আগস্ট বঙ্গভবন পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে বিদেশ থেকে আমাদের অনেক প্রবাসীরা বেকার হয়ে দেশে ফিরছেন। স্বল্প আয়ের চাকরি বা ব্যবসা যারা করতেন তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। করোনায় সৃষ্ট বেকারদের পূনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমাদের মৎস্য খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মাছ চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব লাঘব হচ্ছে। আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ছে এবং উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হচ্ছে। আবার মাছ রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আমরা দেশে আনতে সক্ষম হচ্ছি। পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে আমাদের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, মৎস্য খাতে একটা আমূল পরিবর্তন এসেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সরকার প্রধানের সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারের গৃহিত পদক্ষেপে ইলিশের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাদ-গন্ধ ফিরে এসেছে, পরিমাণ বেড়েছে। জাটক নিধন বন্ধ করার সুফল আমাদের সামনে দৃশ্যমান।
মন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মাছের মোট উৎপাদন হয়েছে ৪৫ লাখ ৩ হাজার মেট্রিক টন। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও স্বীকৃতি। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ ৩য়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম, ইলিশ উৎপাদনে ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী চাষকৃত মৎস্য উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার ধীরগতিসম্পন্ন হলেও বিগত এক দশকে আমাদের মৎস্য উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির ধারা ৯.১ শতাংশ, যা বিশ্বের মূল উৎপদানকারী দেশসমূহের মধ্যে ২য় অবস্থান।
মন্ত্রী বলেন, মৎস্য খাদ্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান আছে কীনা তা পরীক্ষার জন্য আমরা আন্তর্জাতিকমানের পরীক্ষাগার করেছি। মাছ রপ্তানির জন্য পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। যাতে বিদেশে পাঠানো মাছের চালান দেশে ফেরত না আসে। দেশের অভ্যন্তরের বাজারেও নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। মৎস্য সম্পদের শত্রæদের বিরুদ্ধে সব জায়গায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, সুবোল বোস মনি ও তৌফিকুল আরিফ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ, বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের উপপরিচালক শেফাউল করিম, নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. আতিকুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন