শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

‘ইতিহাস লিখেছি, ইতিহাস লিখব’

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

চেনা আঙিনায় ফিরতে পারার আবেগ পেয়ে বসেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। যেখানে মহাতারকা হয়ে ওঠার পথচলা শুরু হয়েছিল, সেখানে ফিরতে পারার আনন্দে ভাসছেন এই পর্তুগিজ তারকা। প্রতিশ্রুতি দিলেন অতীতের মতো এবারের যাত্রায়ও দলটির হয়ে ইতিহাস লেখার।
সিরি ‘আ’র দল জুভেন্টাস থেকে গত শুক্রবার ইউনাইটেডে ফিরেন রোনালদো। সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে মঙ্গলবার তার সঙ্গে দুই বছরের চুক্তির ঘোষণা দেয় ক্লাবটি। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের এই দলেই ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে তখনকার রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে রিয়াল মাদ্রিদে চলে যাওয়া রোনালদো ইউনাইটেডে থাকার সময়ে অ্যালেক্স ফার্গুসনের কোচিংয়ে ২৯২ ম্যাচে করেছিলেন ১১৮ গোল। জিতেছিলেন তিনটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, একটি করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও এফএ কাপসহ আরও কিছু শিরোপা।
এতদিন পর ফেরার অনুভ‚তি জানাতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন রোনালদো। কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি ‘পিতৃতুল্য’ ফার্গুসনকেও।
চুক্তির ব্যাপারে দুই ক্লাব একমতে পৌঁছেছিল গত সপ্তাহেই। বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষে এবার এলো চ‚ড়ান্ত ঘোষণা। রোনালদোর সঙ্গে দুই বছরের চুক্তির বির্ষটিও এদিনই নিশ্চিত করেছে রেড ডেভিলরা। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলতে এই মুহূর্তে পর্তুগালের লিসবনে জাতীয় দলের ক্যাম্পে আছেন সিআর সেভেন। সেখানেই ৩৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের মেডিকেল ও ভিসার প্রক্রিয়া সারা এবং ব্যক্তিগত শর্তগুলোর ব্যাপারে একমতে আসার পরই চলতি গ্রীষ্মকালীন দলবদলের শেষ দিনে এই ঘোষণা দেয় ওল্ড ট্রাফোর্ডের দলটি। সুযোগ রাখা হয়েছে চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর। বিবৃতিতে ট্রান্সফার ফির বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে রয়টার্স জানিয়েছে, অঙ্কটা দেড় কোটি ইউরো। শর্ত সাপেক্ষে এর সঙ্গে আরও ৮০ লাখ ইউরো যুক্ত হতে পারে।
জোরালো গুঞ্জন ছিল ইউনাইটেডের নগর প্রতিদ্ব›দ্বী ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিচ্ছেন রোনালদো। শেষ পর্যন্ত ফার্গুসনের ফোনে বদলে যায় সবকিছু। রোনালদো ফেরেন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। ফুটবল, ভালোবাসা, শ্রদ্ধার ইমোজি দিয়ে ফার্গুসনের প্রতিও ভালোবাসা জানিয়েছেন রোনালদো। ইউনাইটেড সবশেষ লিগ শিরোপা জিতেছে সেই ২০১২-১৩ মৌসুমে। এরপর তারা শুধু জিতেছে একটি করে ইউরোপা লিগ, এফএ কাপ, লিগ কাপ ও কমিউনিটি শিল্ড। ২০১১ সালের পর থেকে পেরুতে পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনাল বাধা।
২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে প্রিমিয়ার লিগের সফলতম দলটিতে প্রথম অধ্যায়ে ২৯২ ম্যাচে ১১৮ গোল করেছিলেন রোনালদো। দলটির হয়ে একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনটি প্রিমিয়ার লিগ, দুটি লিগ কাপ, একটি করে এফএ কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ জেতেন তিনি। এই ক্লাবে থাকতেই ২০০৮ সালে জেতেন প্রথম ব্যালন ডি’অর। তার হাত ধরেই সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছিল ইউনাইটেড। পরে ২০০৯ সালের জুনে আট কোটি পাউন্ডের সেই সময়ের ট্রান্সফার ফির রেকর্ড গড়ে ইউনাইটেড থেকে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখান রোনালদো। সান্তিয়াগো বার্নাব্যু’য়ে কাটান স্বপ্নের নয়টি মৌসুম। রিয়ালকে জেতান সম্ভাব্য সব কিছু; চ্যাম্পিয়ন্স লিগ চারবার, লা লিগা দুইবারসহ অনেক শিরোপা।
ফের আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে দলে পেয়ে উচ্ছ¡সিত ইউনাইটেড কোচ উলে গুনার সুলশার, ‘ক্রিস্টিয়ানোকে বর্ণনা করার মত ভাষা নেই। সে কেবল দুর্দান্ত একজন খেলোয়াড়ই নয়, মানুষ হিসেবেও সে অসাধারণ। এত দীর্ঘ সময় শীর্ষ পর্যায়ে খেলার ইচ্ছা ও সামর্থ্য রাখতে বিশেষ একজন হতে হয়।’ রোনালদোকে ফিরে পেয়ে উচ্ছ¡সিত দলের বর্তমান ও সাবেকরাও। ইউনাইটেড গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া বলেছেন, রোনালদোকে ক্লাবে ফিরে পাওয়াটা একটা ‘স্বপ্ন’। দলটির সাবেক অধিনায়ক রয় কেনের মতে, রোনালদো হলেন একজন ‘জাত বিজয়ী’।

ম্যানইউর জার্সি গায়ে পুরনো সময়ে একটি উল্লাসের মুুহূর্ত সম্বলিত ছবি দিয়ে আবেগঘন সেই টুইটার বার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো...
‘আমাকে যারা জানে, তারা সবাই জানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রতি আমার অশেষ ভালোবাসা। যে বছরগুলো আমি এই ক্লাবে কাটিয়েছিলাম, সেগুলো ছিল খুবই চমৎকার এবং যে পথ আমরা একসঙ্গে পাড়ি দিয়েছিলাম, তা এই মহান ও বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠানের
ইতিহাসে সোনালী অক্ষরে লেখা আছে। আমার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ফেরার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে... এ মুহ‚র্তে আমার অনুভ‚তি কেমন তা বর্ণনা শুরু করতেও পারছি না।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলতে যাওয়ার এতদিন পর আবারও এখানে ফিরতে পারা স্বপ্ন পূরণের মতো। এমনকি আমি যখনই ম্যানইর (ইউনাইটেড) বিপক্ষে খেলতে নেমেছি, সবসময় গ্যালারির সমর্থকদের (ইউনাইটেড) কাছ থেকে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা অনুভব করেছি।
আমার প্রথম ঘরোয়া লিগ শিরোপা, প্রথম লিগ
কাপ এবং পর্তুগাল দলে আমার প্রথম ডাক
পাওয়া, প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়, প্রথম
গোল্ডেন বুট পাওয়া এবং আমার প্রথম
ব্যালন ডি’অর-এর সবকিছুর জন্ম হয়েছে
রেড ডেভিলস ও আমার বিশেষ
সম্পর্কের মধ্য দিয়ে।
অতীতে ইতিহাস
লেখা হয়েছে এবং
আবারও লেখা হবে।
আমি কথা দিচ্ছি।
আমি ঠিক এখানে!
সেখানে ফিরে এসেছি, যেটি
আমার ঠিকানা!
চলো, তাহলে
আবার হয়ে যাক!’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন