শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

মাইলফলকের ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর লজ্জা

ইমরান মাহমুদ, মিরপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

মিরপুরের উইকেট বিবেচনায় ১২৯ লক্ষ্যটা বিশালই। তবে আগের ম্যাচে বাংলাদেশের দেয়া ১৪১ তাড়া করে নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি হেরেছিল ৪ রানে। সেই একই উইকেটে স্বাগতিকরাই যেন পথহারা এক পথিক। রানের চাপে পিষ্ট হয়েই যেন ফিরেছেন একের পর এক ব্যাটসম্যান। আউট হবার ধরণগুলোও ছিল দুষ্টিকটু। ছিলনা লড়াইয়ের বিন্দুমাত্র মানসিকতাও। অথচ ম্যাচে ছিল বারুদে কিছু করে ইতিহাস গড়ার হাতছানি, ছিল ব্যক্তিগত মাইলফলক উদযাপনের প্রেক্ষাপট- যার কোনোটিই করতে পারেনি বাংলাদেশ। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৫২ রানে জিতে ব্যবধান কমিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ মাচটি জিতলে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়তো বাংলাদেশ!

গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ভালো শুরুর পর বোলাররা পারেননি বাকিটা দ্রুত শেষ করতে। ষষ্ঠ উইকেটে পঞ্চাশ ছোঁয়া এক জুটিতে চ্যালেঞ্জিং এক লক্ষ্য দেয় নিউজিল্যান্ড। প্রথম তিন ওভারে পাঁচ বাউন্ডারির পর দিক হারায় বাংলাদেশ। পরে আর কক্ষপথে ফিরতে পারেনি স্বাগতিকরা। নিজেদের সর্বনিম্ন রান কোনোমতে এড়াতে পারলেও শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানেই হেরেছে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমের বদৌলতে সেই লজ্জা থেকে নিজের শততম ম্যাচের মাইলফলকের দিনে বেঁচেছেন মাহমুদউল্লাহ। ২ বল বাকি থাকতে ৭৬ রানে গুটিয়ে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়ে তাদের কম রান আছে আর কেবল একটি। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ আউট হয়েছিল ৭০ রানে। দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে এটাই সর্বনিম্ন স্কোর বাংলাদেশের। সব মিলিয়েই এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ বছরের শুরুতেই ১০ ওভারে পরিণত হওয়া অকল্যান্ডের টি-টোয়েন্টিতেও ৭৬ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। এই সংস্করণে তাদের সবচেয়ে কম রানের চারটি ইনিংসই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ৭৬ ও ৭৮ রানের।

তবে ম্যাচটি ছাপিয়ে গতকাল দিনভর মিরপুরের আলোচনার খোরাক হয়েছিল টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশ দল ঘোষণা। যে কোনো সময় হতে পারে সেটি। দল মোটামুটি ঠিকঠাক হয়ে থাকলেও কয়েকটি জায়গায় ছিল বেশ ক’জনের ভাগ্য সুপ্রসন্নের সুযোগ। তবে সেই সুস্থ্য প্রতিযোগীতায় নামতে দেখা যায়নি কাউকেই! যদিও তা ছিল
১৯তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের একটি ফুলটাস বলে ড্রাইভ করে লংঅনে দিয়ে চার মারলেন টম ব্ল্যান্ডেল। পাশেই ছিলেন ফিল্ডার আফিফ হোসেন। কিন্তু বল ধরার খুব একটা তাড়া ছিল না তার মধ্যে। চেষ্টা করলে হয়তো বাউন্ডারি ঠেকাতে পারতেন। কিন্তু কোনো চেষ্টাই করেননি তিনি। ঠিক রানিং করার মতো দৌড়ে আসে বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠালেন বোলারকে। এটা স্রফে প্রতীকী চিত্র হলেও পুরো ম্যাচের চিত্রই ছিল এমন।

মিরপুরের মন্থর উইকেটে কদিন আগেই অস্ট্রেলিয়াকে নাস্তানুবাদ করে ছেড়েছে টাইগাররা। আর নিউজিল্যান্ডকে প্রথম ম্যাচে রীতিমতো গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। তাতেই যেন আত্মতুষ্টিতে পেয়ে বসে মাহমুদউল্লাহদের। লক্ষ্য তাড়ায় এদিন শুরু থেকেই আগ্রাসী মুডে ছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে পর পর দুই বলে দুটি বাউন্ডারি মারেন লিটন। পরের বলেও মারতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে প্রায় ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হননি তিনি। সে যাত্রায় বাঁচলেও এর পরের বলে আর পারেননি। ম্যাকনকির শর্ট বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা শেখ মেহেদী হাসান ফিরে যান প্রতিপক্ষকে ক্যাচিং অনুশীলন করিয়ে।

দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রয়োজন ছিল কিছুটা রয়েসয়ে ব্যাটিং করা। সেখানে চারে নেমে প্রথম বলেই ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে ছক্কা হাঁকাতে যান সাকিব আল হাসান। লাইন মিস করে প্যাডে লাগলে সে যাত্রা বেঁচে যান তিনি। কিন্তু পরের বলে একই ঢঙ্গে খেলতে গিয়ে ঠিকই ক্যাচ তুলে দেন লংঅনে। দলীয় ২৫ রানেই বাংলাদেশের তিন উইকেট পেয়ে যেন উজ্জীবিত হয়ে যায় কিউইরা। উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে অসাধারণ বোলিং করতে থাকেন তারা।

ব্যক্তিগত ১১ রানে জীবন পাওয়া মোহাম্মদ নাঈম শেখকে বোল্ড করে দেন রাচিন রবীন্দ্র। সে ধারায় দলীয় ৪৩ রানে টাইগারদের জোড়া ধাক্কা দেন এজাজ প্যাটেল। অধিনায়ককে মাহমুদউল্লাহকে নিকোলসের ক্যাচে পরিণত করার পরের বলেই বোল্ড করে দেন আফিফকে। দলের রান তখন ৬ উইকেটে ৪৩। শঙ্কা জাগে নিজেদের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার। আর শঙ্কাই যেন সত্যি হচ্ছিল। স্কোরবোর্ডে ৫ রান যোগ হতেই আউট হতে পারতেন নুরুল হাসান সোহান। অল্পের জন্য রানআউট হওয়া থেকে বেঁচে যান তিনি।

তবে এক প্রান্ত আগলে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে পারেননি। উল্টো ধীর গতির ব্যাটিংয়ে রান রেট বেড়ে যায় টাইগারদের। শেষ ৭ ওভারে জিততে হলে করতে হতো ৭২ রান। তাই রানের গতি বাড়াতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন সোহান। কিন্তু লাভ হয়নি। উল্টো বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে দলের চাপ আরও বাড়িয়ে দেন তিনি। তবে অপরাজিত থেকে যান মুশফিক। করেন ৩৭ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়া ২০ রান! বাংলাদেশের সর্বোচ্চও বটে।

এর আগে নিজেদের ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ডের শুরুটাও ছিল কিছুটা আগ্রাসী। কিন্তু দলীয় ১৬ রানে ফিন অ্যালেন আউট হয়ে গেলে দেখে শুনেই ব্যাট করতে থাকে তারা। দ্বিতীয় উইকেটে জুটিতে উইল ইয়াংকে নিয়ে ৩০ রানের জুটিতে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন রবীন্দ্র। যদিও এ জুটি ভাঙতে ১৬ রানের ব্যবধানে ৪টি উইকেট হারায় তারা। সেখান থেকে দলকে উদ্ধারকে করেন হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। গড়েন অবিচ্ছিন্ন ৬৬ রানের দারুণ এক জুটি। যা চলতি সিরিজেই তাদের সর্বোচ্চ। আর এ জুটিতে ভর করেই লড়াকু সংগ্রহ তুলে নেয় দলটি। বাংলাদেশ পায় চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করে অপরাজিত থাকেন নিকোলস। ২৯ বলে ৩টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। ৩০ বলে ৩টি চারের সাহায্যে অপরাজিত ৩০ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন বøান্ডেল। এছাড়া রবীন্দ্র ও ইয়াং দুইজনই ২০ বলে ২০ রান করে করেন। বাংলাদেশের পক্ষে ২৮ রানের খরচায় ২টি উইকেট পেয়েছেন সাইফউদ্দিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Arif Rahman ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৬ এএম says : 0
ইতিহাসের সেরা ক্যাপ্টেন হয়ে থাকবেন মাহমুদউল্লাহ বস
Total Reply(0)
HM Shahin Alom ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৬ এএম says : 0
মাহমুদউল্লাহ নরম ও ভদ্র বেশি তাই, তার জন্য সকলে মন খুলে দোয়া করে।
Total Reply(0)
Mohammad Ismail ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৬ এএম says : 0
আগামীতে আরও ভালো কিছু করবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ইনশাআল্লাহ
Total Reply(0)
তৌহিদুজ জামান ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৭ এএম says : 0
আরও শতর্ক হয়ে খেলতে হবে।
Total Reply(0)
নিয়ামুল ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:১০ এএম says : 0
এরকম হতেই পারে, সামনে আরও সচেতন হতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন