অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কামার, কুমার, জেলে, ভূমিহীন কৃষক, হকার, দোকানি ও রিকশাচালকরা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকার জামাতনবিহীন ঋণ নিতে পারবেন। আর এ ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ সাত শতাংশ। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাবধারীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে। গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট এ-সংক্রান্ত নতুন স্কিম পুনর্গঠন করে সবগুলো তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বরাবর পাঠানো হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধারে ঋণসীমা ও তহবিলের পরিমাণ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তহবিলের নাম ‘১০, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাবধারী প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক,নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য গঠিত পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’। গঠিত ৫০০ কোটি টাকার এ স্কিমের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর যা নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে আবর্তনশীল। তবে প্রয়োজনে মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্ত কার্যক্রমের আওতায় এ স্কিমের অধীনে ঋণসুবিধা গ্রহণকারী সব গ্রাহকই হবে বিদ্যমান ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাবধারী। এ স্কিমের আওতায় ঋণসুবিধা প্রাপ্তির জন্য নতুন গ্রাহকদের ১০, ৫০ ও ১০০ টাকা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) জমাদানপূর্বক ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে।
যারা ঋণ পাবেন: পাড়া বা মহল্লাভিত্তিক ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী (যেমন: চর্মকার, স্বর্ণকার, নাপিত, কামার, কুমার, জেলে, দর্জি, হকার/ফেরিওয়ালা, রিকশাচালক/ভ্যানচালক, ইলেকট্রিক/ইলেকট্রনিক যন্ত্র মেরামতকারী, ইলেক্ট্রিশিয়ান, কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, গ্রিলমিস্ত্রি, প্লাম্বার, আচার/পিঠা প্রস্তুতকারী, ক্ষুদ্র তাঁতী, পশু চিকিৎসক ইত্যাদি) এবং যে কোনো ধরনের আয় উৎসারী কর্মকাণ্ড জড়িত ব্যক্তি (মুদি ও মনোহরি পণ্যের দোকানি, ভ্রাম্যমাণ কাপড়ের দোকানি, ফ্লেক্সিলোড সেবা প্রদানকারী, চা-পান বিক্রেতা, হাঁস-মুরগি পালনকারী, সবজি উৎপাদনকারী ইত্যাদি এ ঋণ সুবিধার আওতাভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন। যে কোনো দুর্যোগে (প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট) ক্ষতিগ্রস্ত, প্রান্তিক বা ভূমিহীন কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী এবং চর ও হাওর এলাকায় বসবাসকারী স্বল্পআয়ের জনগোষ্ঠী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ঋণসুবিধা পাবেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি ও মহিলা উদ্যোক্তাগণ যে কোন ধরনের আয় উৎসারী কর্মকান্ডে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ঋণ সুবিধা পাবে। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে আর্থিক অন্তভুর্ক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সুবিধাবঞ্চিত ও অসচ্ছল স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারীদের (শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীসহ) বৃত্তিমূলক/কারিগরি/তথ্যপ্রযুক্তিসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যাংক উক্ত স্কিমের আওতায় অভিভাবকের পরিশোধ গ্যারান্টির ভিত্তিতে ঋণসুবিধা দিতে পারবে। খেলাপি ঋণগ্রহীতা এ স্কিমের আওতায় ঋণসুবিধা প্রাপ্য হবেন না।
বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদ ভর্তুকির আওতায় অন্য কোনো স্কিমের অধীন ঋণগ্রহীতার প্রাপ্ত ঋণ অসমন্বিত অবস্থায় থাকলে ওই ঋণগ্রহীতা ঋণসুবিধা পাবেন না। তফসিলি ব্যাংকগুলো এ স্কিমের আওতায় গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তা যাচাই সাপেক্ষে একক গ্রাহককে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণসুবিধা দিতে পারবে। গ্রুপ ঋণের ক্ষেত্রে ২-৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত গ্রুপকে সদস্য প্রতি সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা করে গ্রুপপ্রতি সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারবে। এবং গ্রুপ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রুপের সদস্যরা ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
অর্থায়নকারী ব্যাংকের অনুক‚লে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়নের বার্ষিক সুদ বা মুনাফার হার হবে এক শতাংশ। ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহক পর্যায়ে প্রদত্ত ঋণ/বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ/মুনাফার হার হবে বার্ষিক সর্বোচ্চ সাত শতাংশ। গ্রাহকের ঋণ/বিনিয়োগের ক্রমহ্রাসমান স্থিতির ওপর সুদ/মুনাফা আরোপ করতে হবে।
এ স্কিমের আওতায় ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো নিরাপত্তা জামানত নেওয়া যাবে না। তবে, প্রত্যেক ঋণগ্রহীতার ঋণের বিপরীতে ঋণগ্রহীতাসহ অনধিক দুইজনের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি নেওয়া যাবে; তিন লাখ টাকা ও তারও বেশি পরিমাণ ঋণসুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক নিজস্ব বিবেচনায় সম্পূর্ণ ঋণের বিপরীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে, ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে গ্যারান্টি ফি পরিশোধ করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন