সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কনটেন্ট অপসারণে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি অসহায়, ইচ্ছে করলেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেগুলো সরিয়ে ফেলতে পারে না বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, পর্ন সাইট হলে কিংবা অন্যান্য সাইট হলে আমরা বন্ধ করে দিতে পারি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বানায় সেটাই আমাদের মেনে নিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা যেসব অনুরোধ করি তারা রাখেও না। গতকাল সোমবার বিটিআরসি কার্যালয়ে সোশাল মিডিয়া, কন্টেন্ট ও আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইন্টারনেট দিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি এবং বড় বড় অপরাধ হয়। এটি কারো পক্ষেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। সাইট বন্ধ করে দিলাম কিন্তু প্রবেশ করা বন্ধ করা যায় না। ভিপিএন আছে। যে কেউ এটি ব্যবহার করে প্রবেশ করতে পারে। এই জায়গায় আমাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া আর করার কিছুই থাকে না। তিনি বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ করার জন্য হাতিয়ার বাড়ছে, অপরাধের ধরণ বাড়ছে দিনে দিনে। এমন কোন ক্ষেত্র নাই যেখানে প্রসারিত হয়নি। ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল বা অন্যান্য ক্ষেত্রে, কারণ জীবনযাত্রা ডিজিটালাইজড হচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেক জায়গায় অসহায়ত্ব ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এক সময় বিটিআরসি আইএসপি ও টেলকোগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত, এছাড়া আর কিছু করতে পারত না। বর্তমানে ওয়েব সাইটগুলো বাংলাদেশের সীমানায় বন্ধ করতে পারি। পর্নগ্রাফির সাইট, জুয়ার সাইট যখনই পাওয়া যাচ্ছে বন্ধ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাকি বিষয়গুলোতে আমরা এক ধরনের অসহায়ত্বে আছি, তা হলো সোশাল মিডিয়া, আমরা তাদের কৃপার উপর নির্ভরশীল। তারা তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডে কাজ করে, তারা তাদের মত করে কাজ করে। তারা কথাবার্তা শোনে না, তবে এর আগে আরও খারাপ ছিল। ফেইসবুকের সাথে আমাদের নিয়মিত কথাবার্তা হয়।
বিটিআরসির ক্ষমতার বিষয়টি বোঝার আহ্বান জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, যারা ডিজিটাল অপরাধ নিয়ে আইন আদালতের কাছে যান, তারা অন্ততপক্ষে আমাদের অবস্থাটা বুঝবেন। সেই পরিস্থিতে আমাদের, বিটিআরসির তালা মারার কতটা সক্ষমতায় আছে তা বুঝতে হবে। যে জায়গায় কাজ করার ক্ষমতাই রাখি না, সেখানে দায় দিলে আমার উপর অবিচার করা হবে। ডিজিটাল অপরাধের পরিধি বাড়ছে মন্তব্য করে সেসব দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার কথা বলেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে নতুন প্রযুক্তি আনতে হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, আপনারা আমাদের কোথাও কোনো ক্রটি পাবেন না।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার জানান, বিটিআরসি আইন অনুযায়ী কাজ করে। আইনে ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। টেকনোলজি বিষয়টা হচ্ছে সাইবার জগৎ, উম্মুক্ত বিশ্ব। মহাশূন্যে কেউ ঘুড়ি উড়াতে চায়, তাহলে যে কেউ উড়াতে পারে, সোশাল মিডিয়ায় সুতা কাটার বিষয় বিটিআরসির হাতে নেই। ফেইসবুক ও ইউটিউবের সহযোগিতা ছাড়া কিছু করতে পারি না। এসব বিষয় নিয়ে ফেইসবুক ও ইউটিউবের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনায় বসার কথা জানিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, তাদের বলেছি দেশে অফিস করতে, তবে এখনো রাজি করাতে পারিনি। যেসব আপত্তিকর কনটেন্ট অনুরোধ করে সরানো হয়েছে, অনেকগুলো করা হয়নি, কারণ তারা তাদের আইন অনুযায়ী চলে, তারা বলছে তাদের দেশের আইন অনুযায়ী এটি সরানো যায় না।
বিটিআরসি প্রধান বলেন, বড় সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তিগতভাবে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, অনেক নারী বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন। এক্ষেত্রে আমরা অনুরোধ করি একটি জিডি করে আমাদের কাছে আসুন। ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মাধ্যমে আসলেও দেখি। সরাসরি দেখি না তেমন না, তাও দেখি। আমরা হার্ড কপি, ই-মেইলে বা হট নম্বরে অভিযোগ পাচ্ছি। বিটিআরসি চাইলেই সামাজিক মাধ্যমের কনটেন্ট রিমুভ করতে পারে না। সব সময় সোশাল মিডিয়ায় আপত্তিকর কনটেন্ট নজরদারি করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সক্ষমতা তৈরি হলে আমরা সব সময় নজরদারি করতে পারব। তবে নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের কিছু ঘাটতি আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা বসে নেই, জনস্বার্থে কাজ করছি, মানুষ জানতে পারে না, যারা ভুক্তভোগী, তারা জানে কতটুকু উপকার পেয়েছেন।
বিটিআরসি মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ সোশাল মিডিয়া, কন্টেন্ট ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে কীভাবে অভিযোগ নেওয়া হয় ও সেসব অপসারণের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. আফজাল হোসেন ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন। কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্রমহ অন্য কমিশনার এবং কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রেজিস্ট্রার্ড প্রযুক্তি কোম্পানি, সে অনুযায়ী অন্য কোন দেশের কোন অনুরোধ মেনে চলার ব্যাপারে তাদের কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
এছাড়া সরকারের অনুমোদনক্রমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমে (ডট) স্থাপিত সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এন্ড রেসপন্স (সিটিডিআর) সিস্টেমের মাধ্যমে স্পর্শকাতর/আপত্তিকর ওয়েবসাইট, ডোমেইন, বøগ ইত্যাদি বন্ধ করা হয়। ইতোমধ্যে সিটিডিআরের মাধ্যমে বাংলাদেশে ২২ হাজারের বেশি পর্ণগ্রাফিক এবং অনলাইন জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির নামে অবমাননাকর পোস্ট এবং আপত্তিকর কন্টেন্ট অপসারণ করা হয়েছে। গত এক বছরে বিটিআরসি ফেসবুককে ১৮ হাজার ৮৩৬টি লিংক অপসারণের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৯৪৮টি লিংক এখনো সক্রিয় আছে। অপসারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৮৮টি। অপসারণের হার ২৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে ইউটিউবের কাছে আবেদন করা হয়েছে ৪৩১টি লিংকের জন্য, অপসারণ করা হয়েছে ৬২টি, সক্রিয় আছে ৩৬৯টি। অপসারণের হার ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর সিটিডিআর সিস্টেমের মাধ্যমে ১ হাজার ৬০ লিংকের সবকটি অপসারণ করা হয়েছে। ###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন