মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাব আর তিন দফা বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রংপুরের ৩ উপজেলার কৃষক। মৌসুমের শেষ সময়ে এসে বন্যায় রোপনকৃত আমনের ক্ষত-বিক্ষত চারা নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। তবে সব ধকল কাটিয়ে কাটিয়ে বিভিন্নভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। নতুন করে আমনের চারা রোপন ছাড়াও বিভিন্ন সব্জি ও আগাম জাতের রবিশস্যের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। আর এই নিয়েই পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারী-পুরুষ মিলে সমান তালে চালাচ্ছেন জমি তৈরিসহ ফসল বুননের কাজ।
আমনের ভরা মওসুমে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তার পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে প্রথম দফা বন্যা হয়। এতে জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া এবং পীরগাছা উপজেলার প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন শাক-সব্জিসহ আগাম জাতের রবিশস্যের। প্রথম দফার বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আগষ্টে পর পর দুই দফা বন্যা হয়। প্রথম দফার বন্যায় আমনের চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় চারা রোপন করেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। কিন্তু দ্বিতীয় দফার বন্যায় রোপনকৃত এসব চারা আবারও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তৃতীয় দফায় রোপন করতে গিয়ে অনেকেই আমনের চারার সংকটে পড়েন। দূর দূরান্ত থেকে চড়া দামে আমনের চারা সংগ্রহ করে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন অনেকেই। এতে করে বেশ ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। তারপরও কৃষি নির্ভর এই অঞ্চলের কৃষকরা আমর চাষে স্বপ্ন বুনছেন। অন্তত পরিবারের খাবারের চালটুকু যাতে ঘরে আসে সেজন্য দিন রাত পরিশ্রম করছেন তারা।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী বন্যায় রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা এই তিন উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে এই তিন উপজেলার চরাঞ্চল এবং নদী তীরবর্তী এলাকার অপেক্ষাকৃত নিচু জমিগুলোর ফসলের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সরচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলায়। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমন ধান ছাড়াও বিভিন্ন শাক-সব্জিসহ আগাম রবি শস্য চাষে মনোযোগ দিয়েছেন কৃষকরা।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, শীত ও গ্রীষ্মকালীন সব্জিতে অধিক মুনাফা পাওয়ায় সব্জি চাষ এ অঞ্চলের কৃষকদের কাছে ্অনেক আগেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর তাই বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে আমনের পাশাপাশি আগাম জাতের শীতকালীন সব্জি চাষে ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা। ফলে ফসলি জমিতে আগাম জাতের সব্জি চাষ ব্যাপকভাবে স¤প্রসারিত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, বন্যার কারনে পলি পড়া এসব জমিতে সব্জিসহ আগাম জাতের রবিশস্যের ফলন বেশ ভালো হবে এবং কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সব্জি ও রবিশস্য স্থানীয় বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি করে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন