সীতাকুন্ড উপজেলার বাড়বকুন্ড-বাঁশবাড়িয়া সাগর উপকূলে একটি বনখেকো চক্র প্রতিদিন লাখ টাকার উপকূলীয় সরকারি আকাশ মনি, কেওড়া ও গেওয়া গাছ কেটে পাচার করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রটি দলবদ্ধ ভাবে নির্মমভাবে গাছ কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছে। গত ক’দিনে রাতে ও দিনে ট্রাকে ট্রাকে কাঠ পাচারকালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বসুন্ধরা গ্রুপের সিকিউরিটি গার্ডরা একটি কাঠ বোঝাই ট্রাক আটক করে বন বিভাগে খবর দেয়। এদিকে উপকূলবাসী’র অভিযোগ প্রকাশ্যে ট্রাকে করে পাচার করছে সরকারি কাঠ। শুধু তাই নয় ট্রাকে এসব কাঠ যাতায়াতের জন্য জীবন রক্ষা বেড়িবাঁধও কেটে নিজের মতকরে রাস্তা তৈরী করে নিয়েছে তারা। স্থানীয়ারা জানায়, ১৯৯১ এর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় পরবর্তীতে উপকূলবাসীকে রক্ষায় গাছগুলো সরকারি উদ্যোগে বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের দক্ষিণ নড়ালিয়া মৌজায় অবস্থিত সাগর উপকূলীয় বন বিভাগের অধীন বনভূমিতে হাজার হাজার আকাশ মনি, কেওড়া ও গেওয়া রোপন করা হয়। সময়ের সাথে এই গাছগুলো এখন বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে। এতে গাছগুলোর উপর কুনজর পড়ে বনখেকোদের। বাড়বকুÐ ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় একাধিক বনদস্যু চক্রটির সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনে রাতে মূল্যবান আকাশ মনি গাছগুলো কেটে ট্রাক যোগে পাচার করছে। তবে রহস্যজনক কারণে বন কর্মকর্তারা কেউ এসব গাছ রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। সর্বশেষ সোমবার বিকালে ও রাতে বাড়বকুন্ডের নড়ালিয়া মৌজার উপকূলীয় বন থেকে বড় বড় অসংখ্য আকাশ মনি গাছ কেটে ঐ চক্রের সদস্যরা মঙ্গলবার ভোর রাতে ট্রাক যোগে গাছগুলো পাচার শুরু করে। খবর পেয়ে ঐ স্থানে কাছাকাছি থাকা এলাকাবাসী ও বসুন্ধরা গ্রæপের সিকিউরিটি গার্ডরা তাদের বাধা দিতে এগিয়ে আসেন। তারা ট্রাকসহ গাছগুলো আটক করে বন বিভাগকে খবর দিলেও প্রথমে তারা ঘটনাস্থলে যেতে অনেকটা গড়িমসি করে। এরপর এলাকাবাসীদের মাঝে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হলে এক পর্যায়ে উপকূলীয় বন বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে এলাকাবাসী কর্তৃক আটককৃত কাঠ বোঝাই ট্রাকটি নিজেদের জিম্মায় নেন। এদিকে বাড়বকুন্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী সাংবাদিকদের বলেন, বাড়বকুন্ডের উপকূলীয় বন থেকে প্রচুর গাছ কেটে পার্শ্ববর্তী বাঁশবাড়িয়া সড়ক দিয়ে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছিল বলে আমি জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় আমার এলাকার কয়েকজন ব্যক্তির নাম শুনে আমি তাদের সাথে কথা বলেছি। আমি নিশ্চিত হয়েছি যারা গাছগুলো কেটেছে তারা আমার এলাকার না। তারা অন্য এলাকা থেকে বাড়বকুন্ডে এসে এসব করেছে। কারা গাছ কাটার সাথে জড়িত আছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা খুবই প্রয়োজন। সরেজমিনে নড়ালিয়া-বাঁশবাড়িয়ায় সড়কের ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়ে দেখা গেছে, একটি কাঠ বোঝাই ট্রাকের চারদিক ঘিরে দাড়িয়ে আটকে রেখেছিলো এলাকাবাসী। কাঠ উদ্ধারে এসময় খবর পেয়ে উপকূলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মোঃ কামাল হোসেন ও বাঁশবাড়িয়া বিট অফিসার মোঃ আবদুস সালামসহ বন রক্ষীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে কাঠ ও ট্রাক জব্দ করেন। ঐ ট্রাকে ২০-২৫টি মাঝারি আকাশ মনি গাছ ছিলো। পরে আরো প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে সাগর উপকূলে গিয়ে দেখা যায় বেড়িবাঁধের উপর এবং উপকূলীয় বনের চারিদিকে প্রচুর কাটা গাছ ও ডাল পালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ঘটনাস্থলের এক প্রত্যক্ষদর্শী উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মোঃ জাফর ইসলাম বলেন,গাছতো অনেক দিন ধরেই কাটা হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে দিনে রাতে গাছগুলো কাটছে দলবব্ধ বনদস্যুরা। স্থানীয় মোহাম্মদ নামক এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ৪ জনের একটি সিন্ডিকেট ১০-১২ জন শ্রমিক লাগিয়ে গাছগুলো কেটে পাচার করছিলো। মঙ্গলবার ও তার আগের দিন সোমবার রাত ভর অনেকগুলো ট্রাকে কাঠ পাচার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখানে বিশাল উপকূলীয় বনে ৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর প্রচুর গাছ পালা লাগিয়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। পরবর্তীতেও প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে। তিনি নিজেও এই বনে অনেক গাছ লাগিয়েছেন। এখন বনদস্যু চক্র নির্মমভাবে গাছগুলো কেটে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। অনেকটা প্রকাশ্যে শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। এখানে উপকূলীয় বিট কার্যালয়ে বিট অফিসার ও বন রক্ষী আছেন। তারা কেনো বাধা দিতে আসছেনা সে রহস্য থেকেই যায়। খবর পেয়েও ঘটনাস্থলে আসতে তাদের গড়িমসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুন্ড উপকূলীয় রেঞ্জ অফিসার মোঃ কামাল হোসেন বলেন,গাছ কেটে ট্রাকযোগে নিয়ে যাবার কথা শুনতে পেয়ে আমি দ্রæত ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাকসহ গাছগুলো জব্দ করেছি। গাছ কাটার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে গাছ কাটার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন নড়ালিয়ার গ্রামের মোঃ শফিসহ এলাকাবাসী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন