করোনায় দীর্ঘ লকডাউনের পর পর্যটন নগরী কক্সবাজার এখন আবার পর্যটকে মুখর হয়ে উঠছে। সৈকতে বাড়ছে দেশি-বিদেশী পর্যটকের পদচারণা। হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস রেস্ট হাউস ও রেস্টুরেন্টসহ পর্যটক বান্ধব ব্যবসা আবার সচল হয়েছে। অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে পর্যটন মৌসুম। প্রতিবছর পরিস্থিতি ভালো থাকলে পর্যটন মৌসুমে লাখ লাখ পর্যটকের ঢল নামে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে।
করোনা সংক্রমণ কমায় সরকার পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়। ভ্রমণ পিয়াসুরা দেশের পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণ করতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারে এখন পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। কক্সবাজার শহর এবং কলাতলীতে রাস্তাঘাটের যে দশা এতে খুব ভোগান্তি হচ্ছে পর্যটকদের। প্রধান সড়কসহ গোটা শহরেই রয়েছে ভোগান্তি ও দুর্ভোগের চিত্র। একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক।
গতকাল সরেজমিনে কক্সবাজার সৈকত সংলগ্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে এই দুর্ভোগের চিত্র। লাবনী পয়েন্ট থেকে সীইন পয়েন্ট পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা যেন বছরের পর বছর শেষ হচ্ছে না। এই সড়কে রয়েছে কক্সবাজারের পাইয়োনিয়র পাঁচ তারাকা হোটেল সীগাল। স¤প্রতি এই সড়কে সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে গড়ে উঠেছে তরঙ্গ নামের আরো একটি তারাকা হোটেল। নির্মিত হচ্ছে আরো কয়েকটি বিলাসবহুল হোটেল।
হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি এবং হোটেল সিগাল-এর স্বত্ত¡াধিকারী পর্যটন উদ্যোক্তা মাসুম ইকবাল বলেন, কক্সবাজারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেই এখানে পর্যটনের উন্নয়নে বিনিয়োগ করা। বছরের পর বছর এই সড়কটি সংস্কারবিহীন পড়ে আছে। অথচ একটি সড়ক সংস্কারে তিন মাসের বেশি লাগার কথা নয়। পর্যটন এলাকায় অনেক ধরনের সমস্যা আছে এসব সমস্যা সমাধানে সুন্দর পরিকল্পনা পেশ করা আছে। তিনি অনেকটা হতাশার সুরে বলেন, এগুলো এখন আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
সরকারের কক্সবাজার উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় চলতি অর্থবছরে কক্সবাজার শহরে শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় লিংরোড থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার চার লাইনের দৃষ্টিনন্দন সড়কের কাজ এগিয়ে চলছে। সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, এই প্রকল্পের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। কক্সবাজার পৌরসভার প্রায় শতাধিক আভ্যন্তরীণ সড়কের কাজ একযোগে শুরু হয়েছে। এসব সড়কের কাজ সমাপ্ত হলে কক্সবাজার শহর বাস্তবেই একটি অন্যতম পর্যটন শহরে পরিণত হবে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে একটি উন্নতমানের পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। তার আলোকে সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে বাস্তবেই কক্সবাজার শহর একটি উন্নত পর্যটন শহরে পরিণত হবে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, এই সড়ক উন্নয়নের কাজটি বাস্তবে একটি কঠিন এবং চ্যালেঞ্জ। তবে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কক্সবাজারবাসী এবং পর্যটকদের সুবিধার্থে এই সড়ক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। একটি উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তুলে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে পুরণে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। এত বড় একটি প্রকল্পের কাজতো আর রাতারাতি হয়না। এজন্য শহরবাসীর ভোগান্তির জন্য তিনি সমবেদনা জানান।
এদিকে, সেন্টমার্টিনের যোগাযোগের একমাত্র জেটিটি ভেঙে গিয়ে ভোগান্তি বেড়েছে সেন্টমার্টিন যাতায়াতকারীদের। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা তাই দ্রæত এই জেটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। স¤প্রতি সংবাদ সম্মেলনে টোয়াকের জেলা সভাপতি তোফায়েল আহমদ জানান, ব্যাপক পর্যটক আগমনের সুবাদে দ্বীপে গড়ে ওঠেছে দুই শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজ। রয়েছে শতাধিক রেস্তোরাঁ। বর্তমানে দ্বীপবাসীর একমাত্র আয়ের উৎস পর্যটন। পর্যটনকে পুঁজি করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন