মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ইংল্যান্ডের পর দোটানায় অস্ট্রেলিয়াও!

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

নিরাপত্তার ঠুনকো অজুহাতে কোনো ম্যাচ না খেলেই পাকিস্তান সফর বাতিল করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। তবে মূল সমস্যার কথা অবশ্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়নি। পিসিবির চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়দের দাবি, নিরাপত্তাব্যবস্থায় অসন্তোষজনক কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিউজিল্যান্ড একতরফাভাবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন পিসিবির চেয়ারম্যান রমিজ রাজা। জানা গেছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক অধিনায়ক ইমরান খান নিজে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডানের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা করতে পারেননি। অগত্যা বাতিলই হয়ে যাচ্ছে সিরিজটি।
তবে নিউজিল্যান্ড দিয়েই যে এ যাত্রায় চিন্তামুক্তি ঘটছে পাকিস্তানের, এমনটা ভাবা ভুল হবে। ইংল্যান্ড থেকেও পাকিস্তানের জন্য আসছে শঙ্কার খবর। আগামী মাসে ইংল্যান্ডের ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফর বাতিল করার পর এখন ইংল্যান্ডও পাকিস্তানে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে। এখানেই শেষ নয়, গতকাল জানা গেল, পাকিস্তানে সিরিজ খেলতে আসা নিয়ে দোটানায় পড়েছে অস্ট্রেলিয়াও!
নিউজিল্যান্ডের হঠাৎ এমন সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এমনটা আগেই আশঙ্কা করছিলেন পাকিস্তানের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা। সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার বলেছিলেন, পাকিস্তান ক্রিকেটকে ‘খুন’ করেছে নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া যদি এবার সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়, শোয়েবের শঙ্কা অনেকটাই সত্য হবে!
প্রায় ১৮ বছর পর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে যাওয়ার আগে কিউই ক্রিকেট বোর্ড দেশটিতে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দলকে প্রেরণ করেছিল। পাকিস্তানের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সবুজ সংকেতও দিয়েছিলেন। এরপরই কিউইরা পাকিস্তান সফরে যায়। সিরিজের আগে তারা রাওয়ালপিন্ডিতে অনুশীলনও করেছিল। কিন্তু তখন কোনো সমস্যার কথা না জানালেও ম্যাচের দিন হঠাৎ করেই নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তোলেন কিউইরা। আর তাতে ক্ষোভ আর অপেশাদারী আচরণের অভিযোগের আঙুল উঠছে ব্ল্যাককাপসদের দিকে। পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তান সফর দিয়েই প্রস্তুতি শুরু করতে চেয়েছিল নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড দু’দলই। তাদের সেই প্রস্তুতির রূপরেখাতেও বাধা পড়ল।
এদিকে, নিরাপত্তার ঠুনকো অজুহাতে নিউজিল্যাল্ড দলের এভাবে পাকিস্তান ছেড়ে যাওয়াতে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ে গেছে আগামী মাসে হতে যাওয়া ইংল্যান্ড নারী ও পুরুষ দলের পাকিস্তান সফরও। নিরাপত্তা প্রশ্নে বরাবরই কঠোর অবস্থান নেওয়া ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) জানিয়েছে, পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে তারা। বিশেষ করে নিরাপত্তা পরামর্শের জন্য নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি) ও ইসিবি একই প্রতিষ্ঠান ইএসআই রিস্ককে ব্যবহার করায় ইংল্যান্ডের দুটি দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে ইসিবির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় সিদ্ধান্ত নিবেন তারা, ‘নিরাপত্তা সতর্কতার কারণে নিউজিল্যান্ড দলের পাকিস্তান সফর থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমরা অবগত, পরিস্থিতি পুরোপুরি বোঝার জন্য আমরা আমাদের নিরাপত্তা দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছি যারা পাকিস্তানে রয়েছে। ইসিবি বোর্ড পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে যে আমাদের পরিকল্পিত সফরটি এগিয়ে নেওয়া উচিত কি না।’
এই সফর দিয়েই ১৬ বছর পর পাকিস্তান খেলতে আসার কথা ইংল্যান্ডেরও। মাঝের দীর্ঘ সময়ে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়েই দেশটিতে খেলা থেকে বিরত ছিল ওয়ানডের বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তবে গত বছর বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর ইংল্যান্ডে ক্রিকেট ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় পাকিস্তান দল ইংল্যান্ড সফরে যাওয়ার পর দুই বোর্ডের মধ্যে পাকিস্তান সফর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ড চলতি বছর সফরের জন্য সম্মত হয়।
আগামী মাসে ইংল্যান্ডের প্রস্তাবিত সীমিত ওভারের সফরটি বাতিল হয়ে গেলে প্রশ্নের মুখে পড়ে যেতে পারে ২০২২ সালে তাদের পাকিস্তানে টেস্ট সফরও।
এখানেই শেষ নয়! অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এএপি) প্রতিবেদক রব ফোরসেথ জানিয়েছেন বিষয়টা। এমনিতেই ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানে কোনো সিরিজ খেলতে যায় না অস্ট্রেলিয়া। শেষ গিয়েছিল সেই ১৯৯৮ সালে, যেবার মার্ক টেলর অনবদ্য ৩৩৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে পাকিস্তান সফরে যাবে অস্ট্রেলিয়া, এমনটাই কথা হয়ে ছিল। নিউজিল্যান্ড সফর বাতিলের কারণে ওই সিরিজের ভাগ্যাকাশেও আজ অনিশ্চয়তার মেঘ।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের সাবেক প্রধান নির্বাহী কেভিন রবার্টস ২০১৯ সালে পাকিস্তান সফর করে গিয়েছিলেন। দুই বোর্ডের মধ্যে সেবারই এই সিরিজ নিয়ে ইতিবাচক কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের পাশাপাশি ইংল্যান্ডও যদি পাকিস্তানে তাদের সফর বাতিলের ঘোষণা দেয়, তাহলে অস্ট্রেলিয়াও নিজেদের সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছেন ফোরসেথ। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এক মুখপাত্র এ বিষয়ে জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়া ব্যাপারটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনায় বসার একটা সিদ্ধান্তও নিয়ে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। কয়েক বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়া স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, পাকিস্তান সফর করতে তাদের আপত্তি নেই, কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টা খুব ভালোভাবে নিশ্চিত করতে হবে। পাকিস্তান সফর বাতিল করা হবে কি না, এ নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে না ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, এমনটাই জানিয়েছেন ফোরসেথ।
২০০৯ সালে সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল, আক্রান্ত ব্যক্তিদের তালিকায় অন্যদের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার তৎকালীন অস্ট্রেলিয়ান কোচ ট্রেভর বেলিসও ছিলেন। এরপর থেকেই দুবাই আর আবুধাবিকে নিজেদের ঘরোয়া সিরিজগুলো খেলার জন্য বেছে নিয়েছিল পাকিস্তান। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে ক্রিকেট ফিরেছে ঠিকই, নিরাপত্তা নিয়েও কোনো শঙ্কার অবকাশ ছিল না। গত দুবছরে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ পাকিস্তান সফর করে গেছে, পিএসএলের গোটা আসরটিই এবার নির্বিঘ্নে হয়েছে পাকিস্তানে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের এই ঘটনার কারণে আবারও চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে পাকিস্তানের কপালে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন