শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে বেড়ে চলা যৌন হয়রানির অভিযোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ বাড়ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।''
বিভিন্ন দেশে শান্তি মিশনে দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে দ্রুত তদন্ত এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স' দেখানোর কথা বললেও কার্যত স্বাভাবিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেয়নি জাতিসংঘ।
সম্প্রতি যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক থেকে গ্যাবনের সাড়ে চার শ’ শান্তিরক্ষা সদস্যকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে জাতিসঙ্ঘ।
এই অভিযোগের আগ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, ২০১০ সালের পর থেকে জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর এক হাজার ২৬৫ জন সেনা, পুলিশ ও স্টাফের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
২০১৬ সালের এক ঘটনায় ভুক্তভোগীদের প্রায় অর্ধেক শিশু হওয়ায় তখন বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়েছিলা।
২০১৭ সাল থেকে জাতিসঙ্ঘ প্রতিবছর তার স্টাফ ও সেনাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
ক্যামেরুন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ডিআর কঙ্গো ও গ্যাবনের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বলে জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে।
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েন থাকা শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। একের পর এক অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সালের মার্চে গ্যাবন সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক থেকে তাদের সব সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সেনারা তা না শুনে সেখানে থেকে গেছে।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে রিপাবলিক অফ কঙ্গোর সাতশর বেশি সৈন্যকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
২০১৪ সালে ফ্রান্সের সেনাদের বিরুদ্ধে সাত থেকে ১৩ বছর বয়সি শিশুদের খাবারের বিনিময়ে যৌন সুযোগ দেয়ার লোভ দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল।
২০০৮ সালে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েন থাকার সময় ২৩ জন অপ্রাপ্তবয়স্কের ওপর যৌন হামলা চালানোর দায়ে জাতিসঙ্ঘের হয়ে কাজ করা ফ্রান্সের এক মেকানিককে নয় বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ওই মেকানিক ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েন ছিলেন।
২০১৬ সালে মিশরের এক সেনাকে পাঁচ বছরের জেল দেয়া হয়েছিল।
হাইতি
শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘের সমালোচনা করে। সেই সময় তারা হাইতিতে শ্রীলঙ্কার সেনাদের পরিচালিত একটি ‘সেক্স রিং’ এর উদাহরণ দিয়েছিল। এই ঘটনায় শ্রীলঙ্কার এক শ’ বেশি সেনাকে দেশে ফেরত পাঠানো হলেও তাদের বিচার করা হয়নি।
২০১১ সালে উরুগুয়ের সেনারা হাইতির এক টিনএজারকে ধর্ষণ করছে এমন এক ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশ পেয়েছিল। এই ঘটনায় উরুগুয়ের পাঁচ সেনাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। উরুগুয়ের সেই সময়কার প্রেসিডেন্ট হাইতির কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন।
দক্ষিণ সুদান
২০০৭ সালে দক্ষিণ সুদানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগে বাংলাদেশের চার শান্তিরক্ষা সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
শরণার্থী নারীদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগে ঘানার ৪৬ জন শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যকে ২০১৮ সালে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
এছাড়া ডিআর কঙ্গো ও আইভরি কোস্টেও এমন ঘটনা ঘটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র : ডয়চে ভেলে
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন