শামীম চৌধুরী : কোয়ার্টার ফাইনালের হার্ডল পেরিয়ে ইতোমধ্যে ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। সময়ের সেরা দল নিয়ে সাকিব, তামীম, মুশফিক, রকিবুল, মেহরাব জুুনিয়ররা ১০ বছর আগে যা পারেননি, তাদের সেই অতৃপ্তি ঘুঁচিয়ে দিতে মেহেদী হাসান মিরাজরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই প্রথম বাংলাদেশকে উঠিয়ে এনেছে সেমিফাইনালে। নিজেদের গড়া রেকর্ড ভেঙ্গে আজ আরো বড় ইতিহাস রচনার হাতছানি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সামনে। জিতলেই প্রথমবারের মতো আইসিসি’র কোন মেগা আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনালিস্ট বাংলাদেশ। শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এমন এক ইতিহাস রচনার সামনে দাঁড়িয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের দল। ইতিহাস রচনার সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ রীতিমতো রোমাঞ্চিতÑ ‘আমি খুব গর্বিত, প্রথম বারের মতো আমরা সেমিফাইনাল খেলছি। তবে এটা আমাদের জন্য কোন চাপের না। আমরা সবাই ভালো খেলতে মুখিয়ে আছি। আমরা সবাই রোমাঞ্চিত। এই ম্যাচটি জিতলেই আমরা ফাইনালে চলে যাবো। সে কারণেই আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত হচ্ছি আমাদের পরবর্তী ম্যাচের জন্য।’
ট্রফিতে চোখ রেখে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষদের পর্যুদস্ত করে, একটার পর একটা হার্ডল পেরিয়ে এখন শিরোপা থেকে ২ ধাপ দূরে বাংলাদেশ যুবারা। আজ সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। কোয়ার্টার ফাইনালে নেপালের বাধা পেরিয়ে সেমিফাইনালে যে প্রতিপক্ষকে মনে-প্রাণে কামনা করেছে বাংলাদেশ যুবারা, সেই চেনা প্রতিপক্ষকেই সেমিতে পাচ্ছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে উইন্ডিজ যুবাদের বিপক্ষে বাংলাদেশেল অতীত দারুণ। পরিসংখ্যানে এগিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। হেড টু হেড এ ১৭ লড়াইয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জয় যেখানে ১২টি, সেখানে উইন্ডিজের জয় ৫টি। সর্বশেষ ২টি ওয়ানডে সিরিজের দু’টির ট্রফিও জিতেছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল। ২০১৩ সালের অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটি থেকে ৪-৩ এ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর হোমে গত মাসে ৩-০তে জয়। শুধু তাই নয়, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এগিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। যেখানে ৩ ম্যাচের ২টি জয়ের অতীত আছে বাংলাদেশ যুবাদের। সে কারণেই সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজ ফেভারিট হয়েই নামছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
চেনা প্রতিপক্ষ, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে গত মাসে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে যে প্রতিপক্ষকে হোয়াইট ওয়াশ করেছে, সেই চেনা প্রতিপক্ষকে নিয়ে ভাবনার কোন কারণই দেখছেন না বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক। এমনকি জোসেফ, হোল্ডার, ¯িপ্রংগার, ড্যানিয়েল জন এবং কেমো পর্লকে নিয়ে গঠিত উইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেস অ্যাটাককে নিয়েও দুর্ভাবনার কিছুই দেখছেন না মিরাজÑ ‘গতির বল খেলতে বরং আমাদের বেশি ভালো লাগে। কম গতির বল খেললে মিস টাইমিংয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেখানে বেশি গতির বোলারদের বিপক্ষে খেলতে আমরা সব সময় আত্মবিশ্বাসী থাকি। দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলে এসেছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলেছি। টুর্নামেন্টে আমরা যে ৪টি ম্যাচ খেলেছি, সেই সব ম্যাচে তেমন পেস বোলারকে মোকাবেলা করতে হয়নি। এজন্য আমাদের ওপেনারদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ২ ম্যাচে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের স্পিনাররা করেছে ব্যবধান রচনা। বাংলাদেশ যুবাদের স্পিন খেলতে অতীতে পর্যুদস্ত এই দলটিকে সেই স্পিন বিষেই ঘায়েলের ছক আঁকছেন মিরাজÑ ‘আমরা ওদের কাছ থেকে এগিয়ে আছি স্পিন আক্রমণ ও ব্যাটিংয়ে।’
নেপালের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল জিতে ৬ দিনের লম্বা ছুটি! এই ছুটিকে কাজে লাগিয়েছে টপ অর্ডাররা। চলমান আসরে রান খরায় থাকা টপ অর্ডারদের ছন্দে ফিরিয়ে আনতে এমন ছুটিটা বড্ড দরকার ছিল বলে মনে করছেন মিরাজÑ ‘আমরা ৬ দিনের একটি গ্যাপ পেয়েছি। এই গ্যাপে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে নিতে পেরেছি। বিশেষ করে আমাদের ওপেনিং ব্যাটসম্যানরা প্রস্তুত।’ প্রথমে ব্যাট করলে আড়াইশ’ টার্গেট বাংলাদেশ অধিনায়কেরÑ ‘সেমিফাইনালে আগে ব্যাটিং করলে আমাদের লক্ষ্য ২৫০ রান। আমাদের দলে বেশ ভালো মানের বোলার আছে। আমার মনে হয় বোলারদের জন্য ২৫০ রান ভালো স্কোর।’
কঠিন পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বের করে আনতে হয় কিভাবে, নেপালের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে তা দেখিয়ে দিয়েছেন মিরাজ ক্যাপ্টেনস নক এ। শ্রীলংকা সফরে ০-২ এ পিছিয়ে পড়ে সিরিজ জয়ের অতীতও আছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের। ঘুরে-ফিরে ২ বছর ধরে এক সঙ্গে থাকায় অভিজ্ঞতায় ও উইন্ডিজের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। নিজেদের চেনা-জানা কন্ডিশনকে রাখছেন এগিয়ে মিরাজ। সঙ্গে বিশাল দর্শকের সমর্থনকে অন্যতম প্রেরণা হিসেবে মনে করছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মিরাজ।
কোচ মিজানুর রহমান বাবুল শিষ্যদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন একটা কথা, সেই নির্দেশিত বাক্যটাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চান মিরাজ- ‘টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই স্যার (বাবুল) একটা কথাই বলেছে আমরা প্রতিদিন একটা করে ম্যাচ খেলবো আর একটা করে জিতবো। সেমিফাইনালে আসছি, এটা আমরা কেউ চিন্তাই করছি না। আমাদের মাথায় চিন্তা এটাই, কালকে (আজ) একটা ম্যাচ ওটা আমাদের জিততে হবে।’ এমন দর্শনে একটার পর একটা ম্যাচ খেলছে আর জিতছে যারা, তারা তো অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগুবেই।
নেপালকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে বিসিবি সভাপতির দেয়া ভোজে আপ্যায়িত হয়ে পেয়েছে দলটি উজ্জীবনী টনিক। সেমিফানালে অবতীর্ণ হওয়ার আগে পেয়েছে মিরাজরা মাশরাফি, মুশফিক এবং দুর্জয়ের নির্দেশিকাÑ ‘কালকে (গত পরশু) দুর্জয় স্যার, মাশরাফি এবং মুশফিক ভাই কথা বলেছেন। ওনাদের কথা একটাই, তোমরা ক্রিকেট যেভাবে খেলছো ভালোই চলছে। অন্য কোন দিকে নজর না দিয়ে এদিকেই ফোকাস রাখতে বলেছেন।’ ইতিহাস রচনার মিশনে এই ত্রয়ীর নির্দেশনাকেও বুকে ধারন করেছে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটাররা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন