সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মাশরাফিতে স্লগের কষ্ট লাঘব

প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : বোলার মাশরাফির ব্যাটসম্যান পরিচয়ে আত্মপ্রকাশে কৌতুহলের কিছুই নেই। কারণ, ২০০১ সালে এসিসি অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেটে মাশরাফির বোলিং পরিচয়কে ছাপিয়ে গেছে লেট অর্ডারে তার ব্যাটিং। ১৩ বলে ফিফটিতে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মাতিয়ে নির্বাচকদের নজরে এসেছেন ১৭তে পা দেয়ার আগেই! ৫ মাস আগে ফতুল্লায় প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে মাশরাফির ৫৪ বলে ১০৪ রানের ঝড়ো ইনিংসটি লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রæততম। ৫০ বলে সেঞ্চুরি উদযাপনে ওই ইনিংসে ২টি বাউন্ডারির পাশে ছিল তার ১১টি ছক্কা! লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৫০ ওভারের ম্যাচে এতো ছক্কাও বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের এটাই প্রথম। ওই ম্যাচে শেষ ফিফটিতে খেলেছেন মাত্র ১৫টি বল!
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট কিংবা বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটেই তার ব্যাট শুধু জ্বলে ওঠেনি। নেটে ব্যাটিংয়ের তেমন সুযোগ পান না, বোলিংয়েই দিতে হয় বেশি মনোযোগÑতারপরও কিন্তু দলের প্রয়োজন মিটিয়েছে তার ব্যাট। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের শততম ওয়ানডে ম্যাচে ভারতকে হারানোর ম্যাচে অল রাউন্ড পারফরমেন্সে ম্যান অব দ্য ম্যাচ তিনিই। ওই ম্যাচে ৩৯ বলে তার হার না মানা ৩১ রানের ইনিংসটি না হলে লড়াইয়ের পুঁজিই যে পেতো না বাংলাদেশ দল। তাপস বৈশ্যকে নিয়ে ৯ম উইকেট জুটিতে ৩৪ বলে ৩৯ সম্ভব হয়েছে মাশরাফির কারনেই। সøগে মাশরাফি থাকা মানেই শেষ ৬০ বলকে কাজে লাগানোÑভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওই ম্যাচ থেকেই তা হয়েছে প্রতিষ্ঠিত। পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ২০ বলে ৩ চার ৪ ছক্কায় ৩৯ রানের ইনিংসটিও পেয়েছে হাততালি। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হেরে গেছে ৯১ রানে, তবে ৩৪৮/৫’র জবাব দিতে যেয়ে ২৫৭/৯ পর্যন্ত স্কোর টেনে নেয়ার গল্পকার মাশরাফিই।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ৩’শ স্কোরেও নায়ক মাশরাফি। ২০০৬ সালে বগুড়ায় কেনিয়ার বিপক্ষে ১৬ বলে ৫ চার ৩ ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংসটির কল্যাণেই প্রথমবারের মতো তিনশ’র মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। সে বছর নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে সিরিজের ট্রফি নিশ্চিত করার ম্যাচে ৫৩ বলে ৪৩ রানের হার না মানা ইনিংসে পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান চরিত্র মেলে ধরেছেন এই টেল এন্ডার! সে বছর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে ২৪ বলে ৩০ রানের ইনিংসটিও ছিল উল্লেখ করার মতো।
২০০৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেকটা স্মরণীয় করে রেখেছেন মাশরাফি স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭ বলে ২ চার ৫ ছক্কায় ৫১ রানের ইনিংসে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের একমাত্র ফিফটির সেই ম্যাচে ৭ম জুটিতে আশরাফুলের সঙ্গে ৭৯ রানের পার্টনারশিপও পেয়েছে বাহাবা। ২০০৭ বিশ্বকাপে গায়ানায় দ.আফ্রিকার বিপক্ষে সøগে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ১৬ বলে ২৩ রানের ইনিংসটিই বাংলাদেশকে অবিশ্বাস্য জয়ে দিয়েছে প্রেরণা। ২০০৮ সালে বেনোনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২২ বলে ৩৪ রানের ইনিংসটিও মনে রাখার মতো। ২০১০ সালে ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়েও নায়ক মাশরাফি। ২৫ বলে ২২ রানের ইনিংসটির কল্যাণেই ২৩৬/৭ পর্যন্ত স্কোর তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৭ম উইকেট জুটিতে মাহামুদুল্লাহকে নিয়ে ৩৭ রানের পার্টনারশিপে মাশরাফি নেতৃত্ব না দিয়ে ম্যাচের ফল হতে পারতো অন্য কিছু। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৬ বলে ৩৯, ৮ম উইকেট জুটিতে রুবেলকে নিয়ে ৬৫ রানে নেতৃত্ব দেয়ায় সেই ম্যাচে হেসেছে বাংলাদে দল।
সøগে দলের প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতা রাখেন যিনি, সেই মাশরাফিকে সর্বশেষ ৪ ম্যাচে যায়নি সেভাবে দেখা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইনিংস তিনটি ৪, ২, ২, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেখানে সিরিজের প্রথম ম্যাচে১! এই চার ম্যাচেই সøগে হতাশ করেছে বাংলাদেশ দল। শেষ ৬০ বলে উঠেছে যথাক্রমে ৬৯, ৫৪, ৬৪ এবং ৩২! উইকেটও পড়েছে নিয়মিত বিরতিতে। যে চারটি ইনিংসে শেষ ৬০ বলে উইকেট পতনের সংখ্যা যথাক্রমে ৭, ৩, ৬ এবং ৬!
সøগ নিয়ে যে দূর্ভাবনা বাসা বেধেছে, সেই অপবাদটা গতকাল বাংলাদেশ লাঘব করতে পেরেছে অধিনায়ক মাশরাফির কারণেই। গতকাল সেøা উইকেটে প্রথম পাওয়ার প্লে’কে কাজে লাগাতে পারেনি টপ অর্ডাররা। প্রথম ১০ ওভারে ওভারপ্রতি ৩.০০ রানে থাকতে হয়েছে সন্তুষ্ট। তবে শেষ পাওয়ার প্লেকে ঠিকই লাগিয়েছে কাজে। শেষ ৬০ বলে যোগ করেছে বাংলাদেশ দল ৭৫ রান, যার মধ্যে শেষ ৩০ বলে এসেছে ৪৩ রান! অফ স্পিনার মইন আলীকে সমীহ করে খেলার কি ই বা আছে? মিডল অর্ডারদের সে শিক্ষা দিতে শিক্ষকের ভুমিকায় হয়েছিলেন অবতীর্ণ মাশরাফি। ৪৩ তম ওভারের প্রথম বলে লং অফ এবং ৬ষ্ঠ বলে লং অনের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কায় সে শিক্ষাই দিয়েছেন মাশরাফি। ২৯ বলে ২ চার ৩ ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংসটি দ্বিতীয় ফিফটিতে রূপ পায়নি, তবে ৮ম উইকেট জুটিতে নাসির হোসেনকে নিয়ে ৬৯ রানের এই জুটিতে মাশরাফির নেতৃত্ব পেয়েছে সবার হাততালি। যেই লেজটা উপর্যুপরি ৪ ইনিংসে করেছে হতাশ, সেই লেজের জোরটাও পেলো বাংলাদেশ দল ফিরে। সর্বশেষ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দারুণ অভ্যুদয়ে সøগের ব্যাটিংটাই রেখেছে বিশেষ ভুমিকা। ক্যানবেরায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭৩, নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০, অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৮Ñশেষ ৬০ বলে এমন ঝড়ো ব্যাটিংয়েই ম্যাচ তিনটি জিতেছে বাংলাদেশ দল। যে নিউজিল্যান্ডের মাঠে কেউ সর্বশেষ বিশ্বকাপে ২শ’ পর্যন্ত স্কোর টেনে নিতে পারেনিÑ সেই নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে স্পোর্টিং পিচ হ্যামিল্টনে ২৮৮ পর্যন্ত স্কোর তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে ১০২ রানের বিস্ময় ব্যাটিংয়ে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে নিজেকে যতোই মেলে ধরুক না কেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড়ই বেমানান মোশারফ রুবেল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪ এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ রানে থেমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সেই অক্ষমতাই প্রকাশ করেছেন মোশারফ রুবেল। সøগের চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা থেকেও টানা ৪টি ওয়ানডে ম্যাচে ছিলেন নাসির দর্শকের কাতারে! সমর্থকদের দাবিতে শেষ পর্যন্ত সøগের ব্যাটিং চাহিদা মেটাতে ‘দ্য ফিনিশার’ খ্যাত নাসিরকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। প্রত্যাবর্তন ইনিংসে ৮ এ নেমে ২৭ বলে ২৭ রানের কার্যকরী ইনিংসে টীম ম্যানেজমেন্টকে নিজের সেই বৈশিষ্ট্যের কথাই জানিয়ে দিয়েছেন নাসির।
এই ম্যাচে টপ অর্ডার এবং মিডল অর্ডারদের ব্যার্থতার মিছিলে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন মাহামুদুল্লাহ। অ্যাডিলেডে ম্যাচ উইনিং সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর একটি বড় ইনিংস খেলতে হাত নিশপিশ করা এই মিডল অর্ডার গতকাল ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৬তম ফিফটি করেছেন উদযাপন। ৫১ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ফিফটি উদযাপনের ইনিংসটি থেমেছে লেগ স্পিনার আদিল রশিদকে সুইপ করতে যেয়ে, এলবিডাবøুতে কাঁটা পড়ে ৭৫ রানে শেষ হয়েছে তার ইনিংস।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন