যশোর জেলা সবজি উৎপাদনে সারা দেশের মধ্যে অন্যতম। সারা বছর সবজি আবাদ করে থাকেন চাষিরা। ইতিমধ্যে শীতকালিন সবজিতে ভরে গেছে ক্ষেত। ফলনও ভালো হয়েছে। নানা রকমের সবজি বাজারজাতে চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দামও বেশি পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। এখানকার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশ বিদেশে।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, দেশের সবজির একটি বড় অংশ উৎপাদিত হয় যশোরে। এখানে বারো মাস নানা রকম সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এবারও ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির করা হয়েছে।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজির চাষ হয় যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপ্রু ইউনিয়নে। নতুন করে বাঘারপাড়া ও মণিরামপুরের কিছু এলাকা যোগ হয়েছে। এবার যশোর সদর উপজেলায় শীতকালিন আগাম সবজির চাষ হয়েছে ২৮শ’ হেক্টর। এরমধ্যে সবজি খ্যাত হৈবতপুর ইউনিয়নে ১৩শ’ ২৮ হেক্টর, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নে ৪শ’ ২৫ হেক্টর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ২শ’ ৮৩ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। এই এলাকার সবজির সুনামের পাশাপাশি ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চুড়ামনকাঠি, শানতলা, নুরপুর, বাগডাঙ্গা, আব্দুলপুর ছাতিয়ানতলা, মথুরাপুর, দোগাছিয়া, সাজিয়ালী, শ্যামনগর ও কমলাপুরস হৈবতপুর, তীরেরহাট, মানিকদিহি, শাহাবাজপুর, মুরাদগড়, কাশিমপুর, বিজয়নগর, দৌলতদিহি, বালিয়াঘাট, ললিতাদাহ, বালিয়াডাঙ্গা, বেনেয়ালী, ডহেরপাড়া, লাউখালী, নাটুয়াপাড়াসহ বিভিন্ন মাঠ সবজিতে ভরা। যেদিকে নজর যায় সেদিকেই দেখা মিলছে নানা প্রকারের সবজি ক্ষেতের। এর মধ্যে সিম মুলা, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন,পটল, উল্লেখযোগ্য। সবজি চাষি দিনার গাজী, ইয়াদুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম জানান, এবারের মৌসুমে সব ধরণের সবজিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য বেশি থাকায় তারা প্রতিদিনই সবজি বাজারজাত করছেন। গতবার বৃষ্টিপাতের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু এবার সময়োপযোগী আবহাওয়া ও পরিমান মতো বৃষ্টির কারণে ফলন হয়েছে। এখন বাজার দর ভালো হওয়ায় লাভবান হবেন বলে আশাবাদী তাদের।
তীরেরহাট গ্রামের চাষি লাল্টু বিশ্বাস, মতিয়ার ইসলাম ও শান্তি বিশ্বাস জানান, সুযোগ বুঝে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সবজির দাম কমিয়ে দেয়। তখন তারা কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন। বারীনগর ও চুড়ামনকাটি এলাকায় যদি একটি কোল্ড-স্টোরেজ থাকতো তাহলে দাম কমের সময় সবজি বিক্রি না করে সংরক্ষণ করতেন। পরে বাজার বুঝে বেশি দামে বিক্রির সুযোগ পেতেন চাষিরা।
কপির রাজ্য হিসেবে পরিচিত আব্দুলপুর গ্রামের রফিউদ্দিন ইসলাম জানান, এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে বাঁধা কপির চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে বাজারজাত শুরু হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ার আশায় মৌসুমের আগে থেকেই কপির চাষ করেছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তিনি আর্থিকভাবে লাভবানের স্বপ্ন দেখছেন। গত মৌমুমেও তিনি সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে বাঁধা কপির চাষ করেছিলেন। চুড়ামনকাটি গ্রামের রুহুল ও বাগডাঙ্গা গ্রামের সবজি চাষি শহিদুল আলম জানান, পুরোদমে সবজির চাষ শুরু করেছি। সবজিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। রুহুল আমিন ৪ বিঘা জমিতে বাঁধা জমি ও এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। ঘোনা গ্রামের আব্দুল মাজিদ জানান,ভরা মৌসুমে মূলার চাষ করলে বাজারে তেমন দাম পাওয়া যায়না। তাই তিনি যে কোন সবজির চাষ আগেভাগেই করেন। এবার তিনি দেড় বিঘা জমিতে মূলা চাষ করেছেন। গত মৌসমেও মূলা চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছিলেন।
শহরের বড় বাজারের সবজি বিক্রেতা শংকর কুমার জানান, বাজারে শীতকালিন আহাম সবজি উঠেছে। শিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি, টমেটো ৬০ টাকা, ফুলকপি ১৬০ টাকা, মুলা ও পাতা কপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি হিসেবে। তিনি জানান, এসব সবজি আগাম আসার কারণে দাম বেশি। আর ২ মাস পরে সবজির দাম কমে যাবে।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, যশোর সবজির জেলা হিসেবে সারা দেশে পরিচিত। এখানকার সবজির সুনাম অনেক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশ বিদেশের বাজারে। দুটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সবজি বিদেশ যাচ্ছে। ঢাকার চেইনশপগুলো এখান থেকে সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন শীতকালিন আগাম সবজির ভরা মৌসুম চলছে। চাষ হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে। বাম্পার ফলন পেয়েছে। দামও পাচ্ছে চাষরা ভালো। এতে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন