বৃষ্টিপাতের ব্যাপক ঘাটতি নিয়েই এবার দক্ষিণাঞ্চলে বর্ষা মৌসুম শেষ হতে চলেছে। বৃষ্টির অভাবে এ অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন উৎপাদন নিয়ে কৃষকের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বছর জুড়েই তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে থাকায় জনস্বাস্থ্যসহ পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শরতের এ সময়েও দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে রয়েছে। গতকালও বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের প্রায় ৩ ডিগ্রি বেশি। গত জানুয়ারি থেকেই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি লক্ষণীয় ছিল। গত ৯ মাসের মধ্যে শুধুমাত্র জুন মাসেই স্বাভাবিক বৃষ্টি হলেও বছরের অপর ৮ মাসই কেটেছে কম বৃষ্টি নিয়ে। এমনকি আমনের ভরা মৌসুমের গত দুটি মাসেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিল।
ফলে আমনের জমিতে পর্যাপ্ত আদ্রতা নিয়ে কৃষকের মনে যথেষ্ঠ অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে চলতি মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু কম বৃষ্টিপাতের আগাম বার্তাও দেয়া হয়েছে। অথচ দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় এবার প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার হেক্টরে আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৯ লাখ টন চাল উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে। আবাদ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হলেও বৃষ্টির অভাবে উৎপাদন কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে ইতোমধ্যে।
এমনকি এবার লাগাতার অনাবৃষ্টির সাথে সীমান্তের ওপারে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে গত ডিসেম্বরের পর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে সাগরের নোনা পানি উঠে আসতে শুরু করে। লবণাক্ততার মাত্রা ১ হাজার পিপিএম অতিক্রম করে মার্চ থেকে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করে। বঙ্গোপসাগর থেকে ১১০ কিলোমিটার উজানে বরিশালের কির্তনখেলায় লবণাক্ততার মাত্রা ১ হাজার ২শ’ পিপিএম অতিক্রম করে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। সাগরের নোনা পানি উজান ছাপিয়ে চাঁদপুরের ভাটিতে বরিশালের হিজলায় মেঘনা মোহনা পর্যন্ত পৌছে যায়।
বরিশাল অঞ্চলে গত জানুয়ারিতে স্বাভাবিক ৮.৯ মিলিমিটারের স্থলে কোন বৃষ্টি হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে স্বাভাবিক ২৭ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টি হয়েছিল মাত্র ১ মিলিমিটার। আর মার্চে ৫৭.১ মিলিমিটারের স্থলে মাত্র ০.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এপ্রিলেও ১৩২.৩ মিলিমিটারের স্থলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৫ মিলিরও কম।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, জানুয়ারিতে শতভাগ এবং ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের প্রায় ৯৯% কম। মে মাসে বরিশাল অঞ্চলে ২৬০ মিলিমিটারের স্থলে ১২৭.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা ছিল স্বাভাবিকের ৫১.১% কম। জুলাই মাসেও স্বাভাবিক ৪৩৩ মিলিমিটারের স্থলে বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ছিল ৩৪৭.৮ মিলিমিটার। যা স্বাভাবিকের ১৯.৭% কম। অথচ এসময়ে সারা দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের ১৮.৬% বেশি। আগস্টেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। চলতি মাসেও আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশাল অঞ্চলসহ সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের কম হবার সম্ভাবনার কথা বলেছে তাদের দীর্ঘ মেয়াদী বুলেটিনে।
বৃষ্টিপাতের এ ঘাটতি দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের উৎপাদনে কি ধরনের প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে নজরদারির কথা জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বরিশাল অঞ্চলের দায়িত্বশীলরা। পাশাপাশি কৃষকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগসহ সব ধরনের কারিগরি পরামর্শ প্রদানের কথাও বলেছে ডিএই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন