গতকাল বুধবার শুরু হয়েছে মহালয়া। পিতৃ পুরুষের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে দিনের শুরু হয়। গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা। ভক্তদের মাঝে শুরু হলো দুর্গাপূজার, মায়ের আগমনের দিনগণনার পালা। বাঙালি হিন্দুদের জীবনে মহালয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মহালয়া থেকেই পুজার আচার-আচরণ আর রীতিনীতির শুরু। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে আগামী ১১-১৫ অক্টোবর সারাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। পিতৃপক্ষের অবসান বা দেবী পক্ষের পূর্ববতী অবস্থাকে বলা হয় মহালয়া। দুর্গাপুজো বাঙালিদের কাছে শ্রেষ্ঠ উৎসব। মহালয়ার দিন থেকেই যেন আরও পূজা পূজা ভাব চলে আসে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে। আনন্দের জোয়ারে ভাসে ভক্তকূল।
শাস্ত্র মতে, পিতৃপক্ষের অবসানের পরই শুরু হয় দেবীপক্ষের সূচনা। প্রথমে পিতৃপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রণাম ও শ্রদ্ধা নিবেদন। দীর্ঘকাল ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মহালয়ার পুণ্যপ্রভাতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পানি অঞ্জলি নিবেদন করে চলছেন পূর্ব পুরুষদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায়। মহালয়ার ভোরে চন্ডী পাঠের রেওয়াজ আছে।
হিন্দুশাস্ত্র মতে কথিত রয়েছে যে, মহালয়ার দিনই অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। এই বিশেষ দিনেই মহিষাসুরকে বধ করে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছেন। শুভ শক্তির আরাধনায় তাই মহালয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। “মহালয়া “ শব্দটির অর্থ মহান আলয় বা আশ্রয়। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হচ্ছেন সেই মহান আলয়। মহালয়ার দিন গঙ্গাবক্ষে দাঁড়িয়ে পূর্ব-পুরুষদের উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেয়া বা তর্পণের রীতি রয়েছে। কালো তিল আর কুশ সহযোগে পূর্ব পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। বহু বছর ধরে বাঙালিদের কাছে মহালয়ার আরও একটা বিশেষ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অনুকরণীয় কণ্ঠস্বরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠান।
এ বছর দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী পড়েছে আগামি ১১ অক্টোবর। মহাসপ্তমী আগামি ১২ অক্টোবর। মহাষ্টমী আগামি ১৩ অক্টোবর মহানবমী আগামী ১৪ অক্টোবর। এবং বিজয়া দশমী আগামী ১৫ অক্টোবর। কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে ছেলে-মেয়েদের সাথে নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে এবার বাবার বাড়িতে আসছেন মা। শ্রদ্ধাভরে তিনি পূজিত হবেন মন্ডপে-মন্ডপে। চারদিকে উৎসবের আমেজ মায়ের আগমনী বার্তায়। মা আসছেন, মা আসছেন সকল অশুভ শক্তির বিনাশ করে শান্তির বার্তা নিয়ে।
এদিকে, আগামী ১১-১৫ অক্টোবর সারাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের লক্ষ্যে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাব জনিত কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ পূজামন্ডপে আরোপিত কতিপয় বিধি-নিষেধ আবশ্যিকভাবে অনুসরণ করার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয় পুরোহিত-ঠাকুররা এবং উপস্থিত পূজারিদেরকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। যে সকল মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে সে সকল মন্দিরের প্রবেশ পথে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া-হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রবেশ পথে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা করতে হবে, ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন মন্দির, ঢাকাশ্বেরী মন্দির, জয়কালী মন্দির, রমনা কালী মন্দিরসহ বড় বড় মন্দিরে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা-অর্চনা করতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিমা বির্সজনের ব্যবস্থা করতে হবে, আযান ও নামাজের সময় মসজিদ পার্শ্ববর্তী পূজামন্ডপগুলোতে পূজা চলাকালে ও বিসর্জনকালে শব্দযন্ত্রের ব্যবহার সীমিত রাখার জন্য এবং উচ্চস্বরে শব্দযন্ত্র ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক সকল ধর্মীয় রীতি-নীতি, পূজা-অর্চনা, মাঙ্গলিক কার্যাদি, প্রতিমা বিসর্জনসহ অন্যান্য কার্যক্রম যথাযথভাবে প্রতিপালন করা যাবে। উল্লিখিত নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী এবং পূজামন্ডপ পরিচালনা কমিটিকে উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন