ইনকিলাব ডেস্ক : বাংলাদেশে সাধারণ ব্যবসায় নারী নেতৃত্ব পাঁচ শতাংশ হলেও সামাজিক ব্যবসার ২০ শতাংশের নেতৃত্ব রয়েছে নারীদের হাতে। এখানে যে কর্মশক্তি রয়েছে তার ৪১ শতাংশই নারী। ব্রিটিশ কাউন্সিলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ১ লাখ ৫০ হাজার সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ খাতের সুবিধা ভোগ করছেন ২ লাখ ৭ হাজার মানুষ। শিক্ষা খাতে সামাজিক ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে এ খাতে লিঙ্গ বৈষম্য রয়েছ। জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭৯ শতাংশ সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের নিবন্ধন ২০০৯ সালের মধ্যে এবং বেশিরভাগ নেতৃত্বদানকারীর বয়স ৩৫ বছরের কম। এ খাতের সম্প্রসারণে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব।
ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটের নেতৃত্বে বেটার স্টোরিজ, ইউএন লিমিটেড ও সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ইউকে›র সহায়তায় ব্রিটিশ কাউন্সিল ‘দ্য স্টেট অব সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ পলিসি ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’ নামে এ গবেষণা পরিচালনা করেছে। ওই দুই প্রতিবেদন অনুযায়ী সাধারণ ব্যবসার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ নারী নেতৃত্ব থাকলেও সামাজিক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নারীরা ২০ ভাগ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। সামাজিক ব্যবসায়ের কর্মশক্তির ৪১ শতাংশই নারী, যা অন্যান্য সাধারণ প্রতিষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণের প্রায় তিনগুণ।
বাংলাদেশের একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক গড় আয় ২১ লাখ টাকা। আগামী বছর তা আরও এক-তৃতীয়াংশ বাড়বে। বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসা খাতটির উন্নয়ন ঘটছে। দেশের মোট সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অর্ধেকের বয়স কমবেশি ছয় বছর। এসব প্রতিষ্ঠান সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করে।
সামাজিক ব্যবসা হলো এমন এক ধরনের ব্যবসা, যেখানে সামাজিক উদ্দেশ্য এবং ফের বিনিয়োগের ওপর বেশি জোর দেয়া হয়। মালিক ও অংশীদাররা এজন্য শুধু মুনাফা বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব না দিয়ে সামাজিক কর্মকা-ের ওপর গুরুত্ব দেন। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, অবহেলিতদের গুরুত্ব দেয়া হয়। নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক বৈষম্য দূর করাসহ সমাজের ছোট-বড় সমস্যা নিয়ে কাজ করেন তারা।
সম্প্রতি এই জরিপের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ কাউন্সিলের বাংলাদেশ পরিচালক বারবারা উইকহ্যাম বলেন, সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে পথিকৃৎ। এ নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-র অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘সামাজিক ব্যবসা একটি কাঠামোগত ব্যবসা। এর জন্য গ্রামীণ ব্যাংকসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান ঋণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেয়।
এই ব্যবসাটি করতে স্বচ্ছ ধারণা নিয়েই নারীরা মাঠে নামেন। ফলে তারা সফল হচ্ছেন।”
তিনি আরো বলেন, “এই ব্যবসার উদ্যোক্তা লাভের অংশ পুরো নিয়ে যেতে পারেন না। তাঁকে আবার বিনিয়োগ করতে হয়। ফলে ব্যবসা বাড়ে এবং সম্প্রসারিত হয়। নারীরা এই ব্যবসায় এগিয়ে আসার কারণ এখানে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি ব্যবসাটি হাত কলমে শেখানোও হয়।”
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন. “এখান থেকেই আবার কেউ মূল ধারার ব্যবসায় চলে যেতে পারেন। ফলে এখানকার সফলতা নারীদের মূল ধারায় অংশগ্রহণও বাড়াবে।” প্রসঙ্গত, সামাজিক ব্যবসার প্রথম ধারণা দেন বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস-ওয়েবসাইট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন