কাতার বিশ্বকাপে লাতিন অঞ্চলের বাছাই পর্বে তাদেরই দাপট, সেটাই হওয়ার কথা। কিন্তু রোববার রাতে দুই রকম অভিজ্ঞতা হলো আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের। উরুগুয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা বড় জয় পেলেও থেমে গেছে ব্রাজিলের জয়রথ। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন নেইমাররা। টানা ৯ ম্যাচ পর পয়েন্ট হারালো তারা।
গতকাল বুয়েনস এইরেসে উরুগুয়েকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর প্রথমার্ধেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রদ্রিগো দে পল। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান আরও বাড়ান লাউতারো মার্তিনেজ।
২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো উরুগুয়ের জালে তিনবার বল পাঠানোর ম্যাচে দাপুটে ফুটবল খেলেছে আর্জেন্টিনা। বল দখল ও আক্রমণে সুয়ারেজদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন মেসি-দে পলরা। ম্যাচে ৬৩ শতাংশ সময় বল দখলে রাখে আর্জেন্টিনা। অবিরত আক্রমণে উরুগুয়েকে দিশেহারা করে তোলা আর্জেন্টিনা গোলমুখে শট নেয় ২৩টি, এর মধ্যে ১০টি ছিল লক্ষ্যে। উরুগুয়ের নেওয়া ১০টি শটের ৬টি ছিল লক্ষ্যে।
উরুগুয়ের বিপক্ষে ৩৮তম মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মেসির উঁচু করে বাড়ানো বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি নিকোলাস গঞ্জালেস। এগিয়ে এসে বলের নাগাল পাননি উরুগুয়ে গোলরক্ষকও, বল জড়ায় জালে! আর্জেন্টিনার জার্সিতে এটি মেসির ৮০তম গোল, যা লাতিন অঞ্চলের সর্বোচ্চ। মেসি ছাড়াও জালের দেখা পেয়েছেন রদ্রিগো দে পল ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার লাউতারো মার্তিনেজ।
ম্যাচ শেষে মেসি তার প্রতিক্রিয়া জানান, ‘আমরা দারুণ একটি ম্যাচ খেললাম। আমি মনে করি আমাদের খেলা দিন দিন উন্নত হচ্ছে। বল পায়ে রাখায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। আজ ছিল কঠিন ম্যাচ এবং আমাদের জিততেই হতো। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল।’
উরুগুয়ে যে কোনো সময় ম্যাচ বের করে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে বললেন ৩৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড, ‘উরুগুয়ে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে এবং বিপদে ফেলে। আমরা প্রথম গোল পেতেই জায়গা খুঁজতে শুরু করেছিলাম এবং গোল আসতে থাকল। জয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ আমরা অন্য দলগুলোর ফল জানি। অন্যদের চেয়ে এক ম্যাচ হাতে আছে এবং যদি আর ৭ পয়েন্ট পাই, তাহলে আমরা খুব ভালো অবস্থানে থাকব।’
বড় জয় পেলেও আর্জেন্টিনার শুরুটা হতে পারত বড় ধাক্কায়। গোলপোস্টে অদম্য ছিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। লুইস সুয়ারেজের দারুণ দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করেন দেন আর্জেন্টিনা গোলকিপার। তার প্রশংসা করলেন মেসি, ‘দিবু (এমিলিয়ানো) মার্টিনেজ ভিত গড়ে দিয়েছিল। যখন তারা তার কাছে আসছিল, সে সবসময় দারুণভাবে জবাব দিচ্ছিল। গোলমুখে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং আমাদের আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক।’
বুয়েন্স আয়ার্সের মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে এদিন ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ দর্শক এসেছিলেন। তাদের কাছে পেয়ে আপ্লুত মেসি, ‘দর্শকরা ছিল অসাধারণ। তারা এলে সময়টা অনেক সুন্দর কাটে এবং উপভোগ্য হয়।’
একই রাতে কলম্বিয়ার মাঠে গিয়ে সুবিধা করতে পারেনি ব্রাজিল। স্বাগতিক হওয়ায় ফায়দা তুলতে পারেনি কলম্বিয়াও। ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে। বল দখলে ব্রাজিল এগিয়ে থাকলেও আক্রমণ বেশি সাজিয়েছে কলম্বিয়া। ম্যাচে ৬৪ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখেন নেইমার-জেসুসরা। তারা গোলমুখে শট নিয়েছে ৯টি, এর মধ্যে ৪টি ছিল লক্ষ্যে। কলম্বিয়ার নেওয়া ১২টি শটের ৪টি ছিল লক্ষ্যে।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে হোঁচট খেয়েও লাতিন অঞ্চলের বাছাইয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ব্রাজিল। ১০ ম্যাচের কোনোটিতেই হারেনি পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ৯ জয় ও এক ড্রয়ে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে নেইমারদের দেশ। ব্রাজিলের মতো অপরাজিত আছে আর্জেন্টিনাও। তবে তাদের জয়ের পরিমাণ কম। ১০ ম্যাচে ৬ জয় ও ৪ ড্রয়ে ২২ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে লিওনেল মেসির দেশ। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের ১০ দলের এই প্রতিযোগিতায় সেরা চার দল সরাসরি খেলবে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের মূল পর্বে। পাঁচ নম্বর দলটি খেলবে আন্ত:মহাদেশীয় প্লে-অফ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন