কুমিল্লা মহানগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে রাস্তায় নির্মিত একটি পূজামণ্ডপের ঘটনায় জেলা প্রশাসন ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বুধবার রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সায়েদুল আরেফিনকে প্রধান করে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম. তানভীর আহমেদ ও আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকিয়া আফরিনকে সদস্য করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবারও (১৪ অক্টোবর) নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবির টহল অব্যাহত ছিল। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন সংসদীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল। বিষয়টি তদন্ত করতে আওয়ামী লীগের একটি সংসদীয় টিম বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেন। ওই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠিনক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। একই সময়ে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন। কমিটির নেতৃবৃন্দ কুমিল্লা সার্কিট হাউজে দলীয় ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন।
ঘটনাস্থলে জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি গোষ্ঠি ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফয়েজ আহমদ নামের প্রধান এক সন্দেহভাজনসহ ৪৩ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার শুরু করে নগরীতে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনারই মামলা দায়ের হবে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। এর আগে গত বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকালে নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে রাস্তার উপর নির্মিত একটি পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির পায়ের উপর পবিত্র কোরআন দেখতে পাওয়া যায়। বিষয়টি দেখে ৯৯৯-এ পুলিশকে মোবাইল ফোনে কল করে। এমন খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে গিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফখানা সরিয়ে আনে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এদিকে ধর্মগ্রন্থ অবমাননার এ বিষয়টি মুহুর্তের মধ্যে লোকজনের মুখে মুখে জানাজানি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়লে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা সেখানে জড়ো হতে থাকে এবং সেখানে ক্ষুব্দ জনতার ঢল নামে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে যান এবং ক্ষুব্দ জনতাকে শান্ত থাকার আহবান জানান।
এতেও পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হতে থাকলে পুলিশ টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি চালায়। আহত হয় পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। পরে বিক্ষোভ নগরীর কয়েকটি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরীতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনার বিষয়ে বিকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ও পুলিশের কর্মকর্তাসহ পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন মহলের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন