মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সহিংসতায় চিন্তিত আ.লীগ

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

ইয়াছিন রানা : | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচনী সহিংসতা শুরু হওয়ায় বেশ চিন্তিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি ভোট বর্জন করায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপক্ষে দলের নেতাকর্মীরাই প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন বেশিরভাগ ইউনিয়নে। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন নিশ্চিত করতে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ক্ষমতাসীনরা। সেজন্য প্রশাসনকে কঠোর হবার বার্তা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ইতোমধ্যে অনেক চেয়ারম্যান প্রার্থী এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এবং ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে। তাই দলের হাইকমান্ড থেকে জেলা উপজেলায় দলের প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে একযোগে কাজ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে আট বিভাগে গঠন করা সাংগঠনিক টিম নিয়মিত বিষয়টি মনিটরিং করছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বেশকিছু ইউনিয়নে বিতর্কিতরা নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষোভে ফুসছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। এমপির কাছের লোক মনোনয়ন পাওয়ায় জনপ্রিয় অনেক প্রার্থীর কপালে জোটেনি নৌকা। দলের মনোনয়ন চেয়ে পাননি এমন অনেক প্রার্থী বিদ্রোহী হচ্ছেন এবার। এছাড়া দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় অনেকের অর্থবিত্তের পরিমাণ বাড়ায় অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে চান। এবং ইউনিয়নে প্রভাব বিস্তার করার জন্য নানা মেকানিজম করে থাকেন। সেজন্য ইউনিয়নের প্রভাবশালীরা দলের প্রার্থীকে পছন্দ না হলে অন্যজনকে দাড় করিয়ে দিচ্ছেন। এদিকে এমপি বা উপজেলা চেয়ারম্যানরাও কম যাচ্ছেন না। নিজেদের পছন্দমত প্রার্থী যেখানে পাননি সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী দাড় করিয়ে দিয়েছেন। ফলে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যাও এবার বেশি।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, যেখানে এমপির পছন্দের বাইরে কেউ মনোনয়ন পেয়েছেন সেখানে অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং এমপিরা বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছেন। সেসব ইউনিয়নে সহিংসতা হবার সম্ভাবনা তারা বেশি দেখছেন। সেজন্য দলীয় ও গোয়েন্দা রিপোর্টের মাধ্যেমে খোঁজ নিয়ে এমপির সাথে দ্বন্দ্ব এবং এমপির অপছন্দের প্রার্থী যেসব স্থানে মনোনয়ন পেয়েছেন এবং এমপির পছন্দের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সেই সব ইউনিয়নের তালিকা করা হচ্ছে। সেখানে সরকারের তরফ থেকে প্রশাসনকে কঠোর বার্তা হচ্ছে যেন কোন ধরণের সহিংসতা না হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের অপছন্দের প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরণা দিচ্ছেন নেতাদের তরফ থেকে যেন এমপি বা উপজেলা চেয়ারম্যানকে দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেন এবং কোন ধরণের বাধা প্রদান না করেন। এ বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিষয়টি দেকে সমাধানের চেষ্টা করছেন এবং এমপিদের সাথে যোগাযোগ করছেন।
এদিকে আরেকটি বিষয় ঘটছে যে, মনোনয়নপ্রাপ্ত ও বিদ্রোহী উভয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দলের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে আসছেন এবং বলছেন, শুধু সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করে বলে দিতে যেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তাহলেই তিনি জিততে পারবেন। কোন ধরণের পারশিয়ালিটি যেন না করা হয়।
গতকাল মাগুরায় নির্বাচনী সহিংসতায় ৪ জন মারা গেছেন। এছাড়া নোয়াখালীর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ আলমের বাসায় হামলা ও গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে মাসুদ থানায় জিডি করেছেন এবং আওয়ামী লীগের দফতরে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ইউপি নির্বাচনে দলের বাইরেও অনেক মেকানিজম থাকে, এলাকাপ্রীতি, স্বজনপ্রীতি থাকে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, চেয়ারম্যানের প্রার্থীদের চাইতে মেম্বার প্রার্থীরা বেশি সহিংতায় লিপ্ত হন। তাই তৃণমূল পর্যায়ের এই নির্বাচনে সহিংসতা রোধ করতে প্রশাসনকে অনেক বেগ পেতে হয়। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার সদস্যরা সব জায়গা কাভার করতে পারেন না। সেজন্য কয়েক ধাপে নির্বাচন করা হচ্ছে। গতবারও করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, সহিংসতা নিরসনের জন্য আইন সংশোধন করে ২০১৬ সাল থেকে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু সেইবার ইউপি নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাথে দলের প্রার্থীদের সংঘর্ষ সহিংসতা অনেক বেশি হয়েছে। তাই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করার বিষয়েও দলের একাধিক নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কথা তুলেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজি হননি।
সহিংসতা নিরসনে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক ইনকিলাবকে বলেন, প্রশসনকে ইতোমধ্যে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। যেখানে সহিংসতা-সংঘর্ষ হবে সেখানে কঠোর হস্তে দমন করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে এমপি, জেলা নেতাদের, উপজেলা নেতাদের নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে গঠন করা বিভাগীয় টিম এ বিষয়ে মনিটরিং করবে। যারা দলের নির্দেশান মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
জাকের হোসেন জাফর ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
দলীয় প্রতীক দিয়ে স্থানীয় নির্বাচন করায় এ সমস্যা গুলো বেশী হবে।
Total Reply(0)
Be Human ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১:২৫ এএম says : 0
এ সরকার বলে যার যার ধর্ম যার যার কাছে উৎসব সবার এখন মুসলমান যদি কুরআন অনুযায়ী যেনাকারীর শাস্তি মৃত্যু দন্ড চোরের হাত কেঁটে দেয়,সুদ হারাম ইত্যাদি ইত্যাদি আইন চালু করে কুরআনের আইন অনুযায়ী তা হলে কি এই সরকার দিবে??? আমরা নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করি অতচ আইন মানি না! অথচ দেশ চলছে ইহুদিদের আইনে তাহলে মানুষ ধর্মের স্বাধীনতা পেল কিভাবে? আবার আমাদের সংবিধানে লেখা আছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম জনগণের সরকার না হলে কখনো শান্তি সম্ভব না! না হয় আল্লাহর আজাব থেকে কেউ রক্ষা পাবেন না ১৫ সেকেন্ড মৌমের উপর হাত রাখতে পারেন না! জাহান্নামে আজাব ভোগ করবেন কি ভাবে
Total Reply(0)
তৌহিদুজ জামান ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
দলীয় প্রতীকে নির্বাাচন করলেই এই সমস্যা হবে
Total Reply(0)
মুক্তিকামী জনতা ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
আওয়মী লীগ সহিংসতাকে কঠোর ভাবে দমন করতে পারবে।
Total Reply(0)
পায়েল ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৩৫ পিএম says : 0
দল ও প্রশাসন কঠোর অবস্থানে গেছে এসব বন্ধ হয়ে যাবে
Total Reply(0)
বাশীরুদ্দীন আদনান ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৩৬ পিএম says : 0
অপরাধীদের উপযুক্ত সাজা হলে এসব বন্ধ হবে
Total Reply(0)
Rina khan ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫১ এএম says : 0
ধামরাই উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নে আবদুল মজিদকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনাব আব্দুল মজিদ নৌকা প্রতীক প্রাপ্ত মিজানুর রহমান মিজু সাহেবের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে। কিন্ত বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও সে এবার মনোনয়ন পেল। এভাবে বিদ্রোহী প্রার্থীরা যদি মনোনয়ন পায় তাহলে আওয়ামী লীগের যে সব নেতারা মনোনয়ন পায়নি তারা তো আব্দুল মজিদকে অনুসরন করে উৎফুল্ল হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে। কারন তারা জানে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে কোন শাস্তি তো পাবেই না বরং সামনের নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার মাধ্যমে আমি দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি এ সমস্যার সমাধান করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিন যা সকল বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য হবে এক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন