আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচনী সহিংসতা শুরু হওয়ায় বেশ চিন্তিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি ভোট বর্জন করায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপক্ষে দলের নেতাকর্মীরাই প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন বেশিরভাগ ইউনিয়নে। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন নিশ্চিত করতে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ক্ষমতাসীনরা। সেজন্য প্রশাসনকে কঠোর হবার বার্তা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ইতোমধ্যে অনেক চেয়ারম্যান প্রার্থী এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এবং ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে। তাই দলের হাইকমান্ড থেকে জেলা উপজেলায় দলের প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে একযোগে কাজ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে আট বিভাগে গঠন করা সাংগঠনিক টিম নিয়মিত বিষয়টি মনিটরিং করছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বেশকিছু ইউনিয়নে বিতর্কিতরা নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষোভে ফুসছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। এমপির কাছের লোক মনোনয়ন পাওয়ায় জনপ্রিয় অনেক প্রার্থীর কপালে জোটেনি নৌকা। দলের মনোনয়ন চেয়ে পাননি এমন অনেক প্রার্থী বিদ্রোহী হচ্ছেন এবার। এছাড়া দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় অনেকের অর্থবিত্তের পরিমাণ বাড়ায় অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে চান। এবং ইউনিয়নে প্রভাব বিস্তার করার জন্য নানা মেকানিজম করে থাকেন। সেজন্য ইউনিয়নের প্রভাবশালীরা দলের প্রার্থীকে পছন্দ না হলে অন্যজনকে দাড় করিয়ে দিচ্ছেন। এদিকে এমপি বা উপজেলা চেয়ারম্যানরাও কম যাচ্ছেন না। নিজেদের পছন্দমত প্রার্থী যেখানে পাননি সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী দাড় করিয়ে দিয়েছেন। ফলে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যাও এবার বেশি।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, যেখানে এমপির পছন্দের বাইরে কেউ মনোনয়ন পেয়েছেন সেখানে অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং এমপিরা বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছেন। সেসব ইউনিয়নে সহিংসতা হবার সম্ভাবনা তারা বেশি দেখছেন। সেজন্য দলীয় ও গোয়েন্দা রিপোর্টের মাধ্যেমে খোঁজ নিয়ে এমপির সাথে দ্বন্দ্ব এবং এমপির অপছন্দের প্রার্থী যেসব স্থানে মনোনয়ন পেয়েছেন এবং এমপির পছন্দের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সেই সব ইউনিয়নের তালিকা করা হচ্ছে। সেখানে সরকারের তরফ থেকে প্রশাসনকে কঠোর বার্তা হচ্ছে যেন কোন ধরণের সহিংসতা না হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের অপছন্দের প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরণা দিচ্ছেন নেতাদের তরফ থেকে যেন এমপি বা উপজেলা চেয়ারম্যানকে দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেন এবং কোন ধরণের বাধা প্রদান না করেন। এ বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিষয়টি দেকে সমাধানের চেষ্টা করছেন এবং এমপিদের সাথে যোগাযোগ করছেন।
এদিকে আরেকটি বিষয় ঘটছে যে, মনোনয়নপ্রাপ্ত ও বিদ্রোহী উভয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দলের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে আসছেন এবং বলছেন, শুধু সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করে বলে দিতে যেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তাহলেই তিনি জিততে পারবেন। কোন ধরণের পারশিয়ালিটি যেন না করা হয়।
গতকাল মাগুরায় নির্বাচনী সহিংসতায় ৪ জন মারা গেছেন। এছাড়া নোয়াখালীর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ আলমের বাসায় হামলা ও গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে মাসুদ থানায় জিডি করেছেন এবং আওয়ামী লীগের দফতরে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ইউপি নির্বাচনে দলের বাইরেও অনেক মেকানিজম থাকে, এলাকাপ্রীতি, স্বজনপ্রীতি থাকে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, চেয়ারম্যানের প্রার্থীদের চাইতে মেম্বার প্রার্থীরা বেশি সহিংতায় লিপ্ত হন। তাই তৃণমূল পর্যায়ের এই নির্বাচনে সহিংসতা রোধ করতে প্রশাসনকে অনেক বেগ পেতে হয়। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার সদস্যরা সব জায়গা কাভার করতে পারেন না। সেজন্য কয়েক ধাপে নির্বাচন করা হচ্ছে। গতবারও করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, সহিংসতা নিরসনের জন্য আইন সংশোধন করে ২০১৬ সাল থেকে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু সেইবার ইউপি নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাথে দলের প্রার্থীদের সংঘর্ষ সহিংসতা অনেক বেশি হয়েছে। তাই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করার বিষয়েও দলের একাধিক নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কথা তুলেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজি হননি।
সহিংসতা নিরসনে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক ইনকিলাবকে বলেন, প্রশসনকে ইতোমধ্যে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। যেখানে সহিংসতা-সংঘর্ষ হবে সেখানে কঠোর হস্তে দমন করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে এমপি, জেলা নেতাদের, উপজেলা নেতাদের নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে গঠন করা বিভাগীয় টিম এ বিষয়ে মনিটরিং করবে। যারা দলের নির্দেশান মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন