এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন থেকে : প্রতিবছরের মতো এবার ও সমুদ্রে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য সারা দেশে সামুদ্রিক অর্থনৈতিক এলাকায় মাছের ভরা প্রজনন মৌশুমে ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও জেলেদের নদীতে মাছ ধরার প্রস্তুতি চলছে। প্রশাসনের নজরবন্ধী রাখতে জেলেরা কৌশল অবলম্বন করছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তোলেন। এব্যাপারে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর কঠোর ভূমিকায় রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে সব প্রজাতির মাছ ও ক্রিস্টাশিয়ান্স (কাটলফিশ, লবস্টার, চিংড়ি ইত্যাদি)।
চরফ্যাশন মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, সব বাণিজ্যিক ট্রলারকে এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ, ৪ ও ৫ এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য উপজেলা প্রশাসন ৬ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে মৎস্য বিভাগ, ৩ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, চরমানিকা আউটপোষ্ট কোস্টগার্ড নিয়ে মাছ নিধনের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি সভা করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন জানান, এবার অবরোধ ২২ দিন করার কারণে মৎস্য অধিদপ্তর সারাদেশের মত চরফ্যাশনের ২১ হাজার ৬ শত নিবন্ধিত জেলেদের পুনর্বাসনের জন্য ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চর মানিকা আউটপোষ্ট কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মো. কামরুল ইসলাম জানান, ভোলা জোনাল অফিসের সহযোগিতায় ২৪ ঘণ্টা নদীতে টহল অব্যাহতসহ দূরবর্তী জেলেদের আটক করার জন্য ভারী নৌযান, আকাশপথে হেলিকপ্টার দিয়ে টহল রাখা হবে।
কোস্টগার্ডের জোনাল কমান্ডার লেফটেনেন্টে নাজিউর রহমান সত্যতা নিশ্চিত করেন। চরফ্যাশন, শশীভূষণ ও দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, আমাদেরও টহল টিম কাজ করবে। ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সভাপতি মো. নান্নু জানান, আমরা সকল জেলেকে অবরোধে নদীতে না যাওয়ার জন্য সামরাজ, খেজুর গাছিয়া, আটকপাট, বেতুয়া, বকসী, কলমী, চর পাতিলা, চরকচ্ছপিয়া, ঢালচর, ভারানী ও মনুরা মৎস্য ঘাটে হ্যান্ড মাইক দিয়ে ঘোষণা করেছি। তবে সরকার জেলেদের ২০ কেজি চালের পরিবর্তে দাবিকৃত ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করার দাবী করা হয়েছে।
এছাড়াও মৎস্য সংরক্ষণ আইন এবং গুরুত্বপূর্ণ ধারা, উপধারা, বিধি ও উপবিধিগুলো উল্লেখ করে লিপলেট বিতরণ করছে উপজেলা ও জেলা মৎস্য দপ্তর। ৪.৫ সে. মি (২ ইঞ্চি)-এর কম ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরা দন্ডনীয় আপরাধ। প্রতিবছর ২৫ সে. মি. (১০ ইঞ্চি)-এর ছোট ইলিশ (জাটকা) ১লা নভেম্বর (কার্তিক মাসের মাঝামাঝি) ৩০ জুন (আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি) পর্যন্ত ধরা, পরিবহন, মজুদ, বিক্রয় আইনতঃদÐনীয় অপরাধ।
বেহেন্দী জাল, চারঘেরা জাল, খুটা জাল, পাই জাল, কারেন্ট জাল প্রভৃতি জাল দিয়ে মাছ আহরণ সারা বছরই নিষিদ্ধ। মেঘনা নদীর ইলিশা ঘাট থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিঃ মিঃ এবং তেঁতুলিয়া নদীর ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তুম পর্যন্ত ১শ’ কিঃ মিঃ (মার্চ-এপ্রিল) সকল ধরনের মাছ আহরণ আইনতঃদÐনীয় আপরাধ।
আইন আমান্যকারীর শাস্তি : ধৃত মাছ এবং মাছ ধরার উপকরণ বাজেয়াপ্ত করা যাবে। আইন অমান্যকারী কমপক্ষে এক বছর হতে দুই বছর পর্যন্ত জেল অথবা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দÐে দÐিত করা যাবে। এদিকে বিগত বছরগুলোতে উপজেলা ছোট বড় বহু খালে মশারী জাল টেনে অহরহ মাছ ধরছে।
আসলামপুর ঠেলাখালী ও বেতুয়া খাল ও নীলকমল ইউনিয়নের অন্তর্গত তেঁতুলিয়া নদীতে স্থানীয় চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন লিখনের ভাই বিএনপির নেতা ফারুককে দিয়ে অবৈধ জাল পেতে মাছের ব্যবসা করছেন বলে জানা গেছে। মশারীর জাল টেনে ছোট বড় সবধরনের মাছ নিধন করছে। চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ হালদার বলেন, ৩টি থানার প্রশাসন, ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্য অফিসসহ সকলের সহযোগিতায় আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, মৎস্য সংরক্ষণ আইনের ৩উপধারা ডি, ৪ধারা মোতাবেক অপরাধ চিহ্নিত করে ৫ধারা মোতাবেক শাস্তি দেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন