ঢাকা ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে উপ-পরিচালক মো. আলী আকবরকে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সরকারের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বরাদ্দ হওয়া অর্থ কাজ না করে কখনও বা নিম্ন মানের পাইপ সরবরাহ করে নিজে আত্নসাত করেন। এর মধ্যে পদ্মার জশলদিয়া প্রকল্পে নিম্ন মানের পাইপ স্থান করে অন্তত: ৫শ’ কোটি টাকা আত্নসাত করেন। নদীর তলদেশে পাইপ সুরক্ষার কেসিং পাইপের জন্য বরাদ্দকৃত ১শ’ কোটি টাকা ও রামপুরা-কমলাপুর পানির পাম্প প্রকল্পের ৪শ’ কোটি টাকা রয়েছে। ডিডব্লিউএসএনআইপি প্রকল্প পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগে ৪০ কোটি, গুলশান-বারিধারা লেক দূষণমুক্ত প্রকল্পের ৫০ কোটি ও ঢাকা ওয়াসার কর্মচারী সমিতির মাধ্যমে ৪৪৫ কোটিসহ ৫৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পৃথক দু’টি অভিযোগপত্রে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপ বসাতে তিনটি নদী ক্রসিং করতে নদীর তলদেশে পাইপ সুরক্ষার কেসিং পাইপের জন্য বরাদ্দকৃত ১শ’ কোটি টাকার পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতায়। এভাবে প্রতি ক্ষেত্রে দুর্নীতি জড়িয়ে থাকায় প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের কথা থাকলেও সরবরাহ করা হচ্ছে তিন ভাগের এক ভাগ। এছাড়া রাজধানীর জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে ৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে রামপুরা ও কমলাপুরে দু’টি পানির পাম্প স্থাপনের কথা থাকলেও প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তার স্ত্রীর নামে থাকা ঠিকাদারি লাইসেন্স দিয়ে ওয়াসার কাজ করার অভিযোগও রয়েছে ঢাকা ওয়াসার পদ্মা (জশলদিয়া) ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্পের এই পরিচালকের বিরুদ্ধে।
ডিডব্লিউএসএনআইপি প্রকল্পের পরিচালক আক্তারুজ্জামান প্রকল্পটির আইসিবি-০২.১০ প্যাকেজে কাজের ঠিকাদার নিয়োগে সর্বনিু করদাতাকে বাদ দিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ করদাতাকে কাজ দিয়ে ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি গুলশান-বারিধারা লেক দূষণমুক্ত করতে অর্ধশত কোটি টাকার প্রকল্পেও সীমাহীন দুর্নীতি করেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও লেকের পানির কোনো পরিবর্তন হয়নি। এমনকি স্থানীয় বাসিন্দারা জানেনই না যে সেখানে কোনো প্রকল্পের কাজ হয়েছে। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের তদন্তের ভিত্তিতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির জন্য ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে। এক মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে ওয়াসাকে চিঠি দেয়া হয়। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ঢাকা ওয়াসার কর্মচারী সমিতির (পিপিআই) চেয়ারম্যান হওয়ার পরে পিপিআইয়ের মাধ্যমে ৪৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুর্নীতিলব্ধ অর্থ বেনামী একাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। এ দুর্নীতির বিষয়ে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রির ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক আক্তারুজ্জামানকে একটি চিঠিও দেয়া হয়।
এদিকে পৃথক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে ঢাকা ওয়াসার আরেক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
দুদক সূত্র মতে, মো. রফিকুল ইসলামের বিপুল সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ছেলের নামে ফারুক স্পিনিং মিল, মহসিন বাথান গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি, ধানমন্ডি, গুলশান, মালয়েশিয়ায় ও কানাডায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন