শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অদৃশ্য ইশারায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় কুশীলবরা

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সম্পর্কে টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:১১ এএম

সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বিচারহীনতার সংস্কৃতি হামলাকারীদের আরও উস্কে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। সংস্থাটির মতে, পর্দার পেছনের কুশীলবদের অদৃশ্য আঙ্গুলের ইশারায় সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। গতকাল মঙ্গলবার দেয়া এক বিবৃতিতে এসব মন্তব্য করে সংস্থাটি।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, রাজনৈতিক কারণে সাম্প্রদায়িকতার বীজ জিইয়ে রাখা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা চিরতরে নির্মূল করে সহিংসতার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ অসম্ভবই রয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজনৈতিক দোষারোপের চিরাচরিত সংস্কৃতি বাদ দিয়ে অবিলম্বে সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে ড.ইফখারুজ্জামান বলেন, দূর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লাসহ দেশের অন্তত ১৫টি জেলায় শতাধিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় টিআইবি গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছে। রাজনৈতিক দোষারোপের ঘেরাটোপে আটকে এসব ঘটনার বিচার না হওয়ায়, নিয়মিত বিরতিতে এধরণের সহিংসতা ঘটছে। তাই এই ধারাবাহিক সহিংসতাকে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপি হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ জীবন-জীবিকার ওপর প্রায সপ্তাহব্যাপি চলমান সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসন দুঃখজনক ব্যর্থতার পরিচয় দিলো। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর শতাধিক মামলায় কয়েক হাজার আসামী করা হলো। অথচ চিরাচরিত রাজনৈতিক দোষারোপের বাইরে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ স্থানেই প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনার পূর্ববর্তী সমস্ত সহিংসতাতেও আমরা একই দৃশ্যে পুনরাবৃত্তি দেখতে পাই। এতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে চলে যায়। নিয়মিত বিরতিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটতেই থাকে । তিনি বলেন, বিগত এক দশকে ৩ হাজারেরও অধিক সহিংস হামলায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের দেড় হাজারেরও বেশি বাড়িঘর, প্রতিমা, পূজামন্ডপ ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের একটি ঘটনাতেও আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির তথ্য পাই না। সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিই হামলাকারীদের আরো উস্কে দিচ্ছে । সাম্প্রদায়িকতার বীজ জিইয়ে রাখছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা চিরতরে নির্মূল করে সহিংসতার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ অসম্ভবই রয়ে যাবে।

কুমিল্লার ঘটনার পরপর কারিগরি ত্রুটির কথা বলে ১২ ঘন্টারও বেশি সময় মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখে এবং মূলধারার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার না করে সহিংসতা রোধের গ্রাগৈতিহাসিক ব্যর্থ প্রচেষ্টার সমালোচনা করে ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নয়, বরং দলমত নির্বিচারে তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনলে পরিস্থিতি এতদূর গড়াতো না বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক অতীতে রামু, উখিয়া, নাসিরনগর, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় ক্ষমতাসীনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার তথ্য থেকে এই আশংকা অমূলক নয় যে,প্রিিতটি সহিংসতার পেছনেই কোনো না কোনো স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ আছে, ধর্মের মোড়কে যা ভয়ংকর আগ্রাসী হয়ে উঠছে। কিন্তু পর্দার পেছনের কুশীলবদের অদৃশ্য আঙ্গুলের ইশারায় তারা সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এইসব প্রভাবশালীদের সুরক্ষা দিতেই প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা হয় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়নে অপরাধীকে সুরক্ষা প্রদান না করে প্রচলিত আইনে এধরণের ফৌজদারি অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন