শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

উপাত্ত সুরক্ষা আইনে সরকারি নজরদারির ব্যাপক ঝুঁকি

ঢেলে সাজানোর দাবি টিআইবি’র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৯ এএম

“উপাত্ত সুরক্ষা” আইনের খসড়ায় জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যে অনুপ্রবেশের সুযোগ এবং সরকারি নজরদারির ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এজন্য খসড়াটি ঢেলে সাজানোর দাবি প্রতিষ্ঠানটির। প্রস্তাবিত আইনের সর্বশেষ খসড়ার ওপর টিআইবির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও সুপারিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেয়ার পর গতকাল রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, স্বাধীন কমিশনের পরিবর্তে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি এজেন্সি গঠন, দায়মুক্তির সুযোগ ও “উপাত্ত” স্থানীয়করণের মতো অবিবেচনাপ্রসূত বিধান জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর নজরদারির আশঙ্কাকে জোরদার করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “উপাত্ত” সুরক্ষার দায়িত্ব ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালকের ওপর ন্যস্ত রাখার বিধান সব শেষ খসড়ায় বাদ দেওয়া হলেও ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার বন্ধে, তা কোনো ভূমিকাই রাখবে না। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি বিশেষায়িত এজেন্সি হিসেবে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি গঠন করা হয়েছিলো। ভিন্নমত দমনে এবং ঐ আইনের অপব্যবহারে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা সেই এজেন্সির নজরদারিমূলক ভূমিকা কারো অজানা নয়। জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার দায়িত্ব, টিআইবির সুপারিশের প্রেক্ষিতে মূলত “আই-ওয়াশ” হিসেবে এই এজেন্সির পরিবর্তে একইভাবে একক নিয়ন্ত্রণ আর বিধি প্রণয়নের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নতুন একটি এজেন্সি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমাদের আরো একটা নিবর্তনমূলক সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার বন্ধের নিশ্চয়তা দিতে আন্তর্জাতিক চর্চার আলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করুন।

টিআইবির অভিমত, এই খসড়া প্রণয়নের ক্ষেত্রে সবকিছুর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে, এমন একটা ধারণা থেকে সরকার বেরিয়ে আসতে পারছে না। ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার সংবিধান স্বীকৃত অধিকারের আলোকেই এই আইনের খসড়া করতে হবে। ড. জামান বলছেন, ‘একটি আইনের কোনো একটি ধারাকে আলাদা করে বিবেচনার সুযোগ নেই। কারণ আইনের বাস্তবায়ন সবগুলো বিধানের সম্বন্বিত প্রয়োগের ওপর নির্ভরশীল। আমরা দেখছি, সরকারের নিয়ন্ত্রণে আলাদা একটি এজেন্সি গঠনের কথা বলা হচ্ছে। অন্য ধারায় আবার ব্যক্তিগত তথ্যে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সৃষ্টি করে দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, সব ব্যক্তিগত তথ্য দেশের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করার বাধ্যবাধকতা। এই তিনটি বিধানকে একসঙ্গে বিবেচনা করা হলে এটা বুঝতে সমস্যা হয় না যে, এখানে সরকার যেনো খেয়াল খুশি মতো জনসাধারণের তথ্যে অনুপ্রবেশের ও নজরদারির সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।’

এমন ধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্য থেকেই ব্যক্তিগত তথ্যের স্থানীয়করণ (ধারা ৪৪) এবং স্থানান্তরের নিষেধাজ্ঞার (ধারা ৪৫) মতো অবাস্তব ও ঝুঁকিপূর্ণ বিধান এই খসড়া থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করছে টিআইবি। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের উদাহরণ টেনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘শুরুতে এই দেশগুলো স্থানীয়করণের কথা ভাবলেও, বাস্তবতা বিবেচনায় সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। অথচ, আমরা তিন দফা এই খসড়া সংশোধন হতে দেখলেও, কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এখনও সব তথ্য দেশেই সংরক্ষণের চিন্তা বাদ দিতে পারছি না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘আগের খসড়ার মূল্যায়নের সময়েও আমরা বলেছিলাম, ব্যক্তিগত তথ্য আর উপাত্ত এক বিষয় নয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত খসড়া প্রস্তুতকারীরা এই পার্থক্যই অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন