ডিজিটালাইজেশন এখন বৈশ্বিক বাস্তবতারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। অর্থনৈতিক গ্লোবালাইজেশনের পথ ধরে তথ্যপ্রযুক্তির গ্লোবালাইজেশন প্রক্রিয়ায় বেশ এগিয়ে গেছে বিশ্ব। এখানে এসে উন্নত, অনুন্নত ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান অনেকটা ঘুচে গেছে। সরকার রাজনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে শুরুতেই ডিজিটাল দেশ গড়ার যে রূপরেখা তুলে ধরেছিল, তা’এখন বাস্তব রূপ লাভ করতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, দেশের মানুষ এখন ডিজিটালাইজেশনের সুফল পাচ্ছে। গতকাল বৃহষ্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটালাইজেশনের সুফল এবং এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্যের সহজলভ্যতা, সরকারি পরিষেবা, বাণিজ্য, ই-কর্মাস, টেলিমেডিসিন, অনলাইনে সব পরিষেবা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে এই সুফল এখন সকলেই ভোগ করছে। বিশেষত গত বছরের প্রথম দিকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস মহামারী ও লকডাউনের বাস্তবতায় সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও মানুষ অনলাইনভিত্তিক ডিজিটাল পরিষেবার উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়েছে। আর এই বাস্তবতা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়নে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। তবে ডিজিটালাইজেশনের সামাজিক-অর্থনৈতিক সুফল ও সম্ভাবনাগুলোর পাশাপাশি এর কিছু অনিবার্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কুফল ও নিরাপত্তাহীনতার দিকও ইতিমধ্যে উন্মোচিত হয়েছে। আমাদেরকে এখন সে সব বিষয়ে অধিক নজর দিতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ই-কর্মাস কোম্পানীগুলোর লাখো মানুষের কাছ থেকে প্রতারণামূলকভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে দেয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, দেশের মানুষ ডিজিটালাইজেশনে সুবিধাগুলোর পাশাপাশি এর অসুবিধা ও নিরাপত্তাহীনতার নিগড়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। প্রযুক্তি একটি সার্বজনীন বিষয় হলেও এর সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হচ্ছে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারের সাথে সাথে দেশে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি, সেবামূল্য, অস্বচ্ছতা ও জনভোগান্তি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে ফাইভজি গতির ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হলেও আমাদের দেশে এখনো থ্রিজি-ফোরজির নামে শম্বুক গতির টুজি ইন্টারনেট চলছে। অথচ মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে ফোরজি পরিষেবার অর্থ আদায় করছে। মোবাইল-ইন্টারনেট কোম্পানী থেকে শুরু করে বেশকিছু বড় ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটি কোটি গ্রাহককে বিভ্রান্ত ও প্রতারণার শিকারে পরিনত করছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তেমন কিছুই করতে পারছে না!
ডিজিটাল ডিভাইস ভবিষ্যতে দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় রফতানি পণ্যের তালিকায় স্থান করে নেবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আরো দুই দশক আগেই দেশে সফ্টওয়্যার পণ্য ও ডিজিটাল পণ্যের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল। প্রতিবেশি দেশ ভারত এ ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও আমরা আমাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারিনি। সেই সাথে ই-গর্ভনেন্স, ই-কর্মাস এবং ডিজিটাল গণমাধ্যমের পরিষেবার ক্ষেত্রেও নানাবিধ বিড়ম্বনা, প্রতারণা ও নিরাপত্তাহীনতা আশঙ্কা ভর করেছে। ইন্ডাসট্রিয়াল ডিজিটালাইজেশন ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স পরিষেবা যেন দেশের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাকে সঙ্কুচিত করে না দেয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ই-কর্মাস ও ব্যাংকিং পরিষেবা থেকে শুরু করে মোবাইল অপারেটর কোম্পানীর ইন্টানেটের গতি, সেবার মান ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি নিশ্চিত করতে পারে, এমন একটি আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। গত ১২ বছরে প্রত্যাশিত ই-গর্ভনেন্স, তথ্য পরিষেবা, ভ’মি ব্যবস্থাপনার মত বিষয়গুলোকে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তাসহ ডিজিটালাইজেশনের যেটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা এখনো যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে এক ধরণের অনীহা দেখা যাচ্ছে। সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কে বাস্তব ধারণা ও দক্ষতা নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অস্বচ্ছতা এবং যে কোনো অপপ্রয়োগ দূর করে তার সময়োপযোগী ও সফল প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন