করোনা মহামারির সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাঁশের ব্যারিকেডে বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর খুলে দেওয়া হয় এই ফটকটি। শুরু হয় ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে মালবাহী ভারী যানবাহনের অবাধ চলাচল। ফলে বিনষ্ট হচ্ছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ; বিঘ্নিত হয় শিক্ষার পরিবেশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে রাত এগারোটার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলক্ষেত থেকে টিএসসি যাওয়ার রাস্তাটি দখলে থাকে ভারী মালবাহী ট্রাকের। গত রোববার রাতে পাঁচ মিনিটে প্রায় শতাধিক মালবাহী ভারী ট্রাক পার হয়েছিল এ রাস্তা দিয়ে। সে রাতে ট্রাকের ড্রাইভারের সাথে বাক বিতণ্ডায় মারাত্মকভাবে আহত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের দু'শিক্ষার্থী। ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু সময়ের জন্য রাস্তা অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার দুইদিন পরের দৃশ্যও ছিল ভয়াবহ। মাত্র ১০০ সেকেন্ডে প্রায় ৫০ টি মালবাহী ভারী ট্রাক অতিক্রম করতে দেখা যায় এ রাস্তায়।
রোববারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কবী জসীমউদ্দীন হলের আবাসিক ছাত্র মারুফ হাসান শাহিন বলেন, রিফাত (আহতদের একজন) শুধু একটা ট্রাকের ড্রাইভারের সাথে কথা বলতে গিয়েছিল যে কেন তারা ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে গাড়ি পার করছে। কিন্তু দেখলাম ড্রাইভারের সাথে তার বাকবিতণ্ডা হয় এবং রিফাতকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেয় ড্রাইভার এবং দ্রুত গতিতে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে রিফাতসহ আমরা আরো অনেকে মিলে বাকি ট্রাকগুলোকে আটকে দেই এবং বলি যে ওই ট্রাক না আসলে আমরা বাকিগুলোকে ছাড়ব না। এসময় ড্রাইভারদের সাথে ঝগড়ায় আরেকজন আহত হয়। পরে সিনিয়ররা আসলে আমরা অবরোধ উঠিয়ে নেই।
এ বিষয়ে আহত রিফাতের সাথে কথা বললে তিনি দুঃখের সাথে জানান, এ বিষয়ে কথা বলেও কোন লাভ নেই। কারণ প্রশাসন এর কোন ব্যবস্থাই নিবে না।
এদিকে বিষয়গুলো নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী নাসিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অদূরদর্শীতার কারণেই আজ তারা আমাদের ক্যাম্পাসটাকে বেনাপোলে পরিণত করেছে।
স্যার এফ রহমান হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে দ্রুতগতির যেকোনো ধরনের বহিরাগত যানবাহন চলাচল শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে এবং এটা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যে হুমকিস্বরূপ। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে তারা যেন অবিলম্বে ক্যাম্পাসে বহিরাগত সকল দ্রুতগতির যানবাহনের চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত বলেন, দু'দিন আগে আমি এফ আর হল থেকে জহুরুল হক হলে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হতে গিয়ে একটুর জন্য গাড়িব নিচে পড়িনি। আমাদের মধ্য থেকে যখন কয়েকটা সিরিয়াসলি ইনজুরড হবে তখন বৈজ্ঞানিক মহলের টনক নড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হওয়া এ রাস্তায় ভারী যানচলাচলের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পড়াশোনার পরিবেশ। এ রাস্তার পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটা আবাসিক হল। রোকেয়া হল, জহুরুল হক হল, স্যার এফ রহমান হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল। এসব হলগুলোতে যে শিক্ষার্থীরা রাতে পড়াশোনা করেন তাদের মনোযোগে বিঘ্নয় ঘটায় এরকম অবাধ যান চলাচল। রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী মাসুমা বলেন, রাত এগারোটার পূর্বে পড়ার টেবিলে বসারই সুযোগ হয়না তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই অধিক রাতে রিডিং রুমে যাওয়া হয়। কিন্তু তাতেও শান্তি নেই। মালবাহী গাড়িগুলোর ভয়ঙ্কর আওয়াজের দিকে একবার মনোযোগ গেলে পুনরায় পড়াতে মনোযোগ দেওয়া খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই আমরা একটা সুষ্ঠু সুন্দর শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা দুটো পদক্ষেপ নিয়েছি এবং সে অনুযায়ী কাজ করব। একটি হচ্ছে আমরা অলরেডি শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে একটা ব্যারিকেড দিয়েছি এবং এখন থেকে রাতে একটা নির্দিষ্ট সময় দশটা কিংবা এগারোটার পরে ভারী মালবাহী কোন ট্রাক যেন ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে সেজন্য আমরা ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিব। এছাড়াও ট্রাপিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন