শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

বই মেলার সরগরম ঢাবি ক্যাম্পাস

প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জুয়েল মাহমুদ : আবার এসেছে ফেব্রুয়ারি, ভাষা আন্দোলনের মাস। ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করার লক্ষ্যে বাংলা একাডেমিতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শুরু হয়েছে মাসব্যাপী একুশে বই মেলা। ফেব্রুয়ারি মাসের দিন যতো যাচ্ছে তার সাথে প্রতিযোগিতা করে জমে উঠছে বই মেলা। বাংলা একাডেমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছে হওয়ার কারণে বই মেলার পাশাপাশি সরগরম হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু নানা অনুষ্ঠানই নয়, বছর জুড়ে নানা উপলক্ষে আনান্দে উদ্বেল হওয়ার সুযোগ ঘটে। এমনই একটি উপলক্ষ বই মেলা। যার কারণে মাসব্যাপী আগমন ঘটে নতুন পুরাতন সব শিক্ষার্থীর। উপলক্ষটা নেহাত স্মৃতিচারণ নয়। বরং বিশাল এক মিলন মেলার নাম একুশে বই মেলা। এই মেলা উপলক্ষে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা ঘটে ঢাবি ক্যাম্পাসে।
একুশে বই মেলার আজ ৮ম দিন। এরই মধ্যে জমজমাট হয়ে উঠেছে বাংলা একাডেমিসহ পুরো ঢাবি ক্যাম্পাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে টিএসসির সবুজ চত্বর। বাংলা একাডেমির খুব কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানের কারণে দর্শনার্থীদের মেলা ঘুরে জমজমাট আড্ডায় ব্যস্ত হতে দেখা যায় এর সবুজ চত্বরে। এমনই একটা জমজমাট আড্ডায় কথা হয় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেসা মুজির হলের শিক্ষার্থী আসমা, জুঁই, বিথী, সাথি ও তমালিকার সাথে। তারা জানান, তাদের হল মূল ক্যাম্পাস থেকে একটু দূরে হওয়ায় টিএসসি এবং বাংলা একাডেমিতে খুব বেশি আসা হয় না, কিন্তু বই মেলা শুরু হওয়ার পর এদিকটা না আসলে, বই মেলায় না ঘুরলে একুশ অপূর্ণতা থেকে যায়। তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও তারা দল বেধে বই মেলায় আসেন এবং টিএসসিতে আড্ডাদেন বলে জানান। বইমেলা উপলক্ষে তাদের আড্ডার বিষয়বস্তু কী থাকে জানতে চাইলে ঢাবি’র মাস্টার্স-এর শিক্ষার্থী সায়মা আক্তার বলেন, আমাদের আড্ডার বিষয়বস্তু হলো মেলায় প্রকাশিত নতুন বই, কোন কোন লেখকের বই বেশি বেশি সংগ্রহে রাখবো, নতুন কিছু কেউ মিস করলাম কিনা ইত্যাদি। আরেক শিক্ষার্থী তনু জানান, আড্ডায় আমরা আলোচনা করি ৫২-এর ভাষা আন্দোলন নিয়ে, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবং আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে। বাংলা একাডেমির পাশে একটা প্রাণবন্ত আড্ডা চলছিল। সেখানেও দেখলাম স্মৃতিচরণ চলছে প্রাণের ক্যাম্পাস আর অনুপ্রেরণার উৎস একুশে বই মেলায় এক সাথে ঘুরে বেড়ানো নিয়ে। এখানে কথা হয় ঢাবি’র সাবেক শিক্ষার্থী মাহীন ও জান্নাতের এর সাথে। মাহীন বলেন, সারা বছরই আশায় থাকি কখন শুরু হবে বই মেলা, নতুন বই কেনার পাশাপাশি পুরাতন বন্ধুত্বকে আবার ঝালিয়ে নেয়া যায়। বইমেলার গেটে কথা হয় ঢাবি’র মহসিন হলের সাবেক শিক্ষার্থী সুমন, সোহাগ, ইমন ও জয়নুলের সাথে। তারা কয়েক বন্ধু এক সাথে হওয়ার পরপরই শুরু হয়ে গেল একসাথে বই মেলা ও ঢাবির অলিতে গলিতে একসাথে বিচরণ করার স্মৃতিচারণে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তারা একই সাথে হলে থাকতেন। সময়ের বিবর্তনে তারা আজ এক একজন এক এক জায়গায়, কিন্তু যখনই একুশে বইমেলা শুরু তারা চেষ্টা করেন হাজারো ব্যস্ততাকে পিছনে ফেলে একসাথে বই মেলাতে আসতে এবং চিরচেনা ক্যাম্পাসে কিছু সময় এক সাথে অতিবাহিত করতে। অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে আরও অনেক নবীন প্রবীণ শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে কবিতা প্রেমিদের মিলনমেলা জাতীয় কবিতা উৎসব। বিখ্যাত কবিদের সাথে কবিতাপাগল ঢাবি’র বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মেতেছিল কবিতা উৎসবে। শুধু টিএসসি নয় ঢাবি’র সর্বত্র বিরাজ করছে বইমেলার আবহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থী মহসীন বলেন, বিকেল আসলে আর হলে থাকতে পারি না, তাই একুশে বই মেলায় ছুটে আসি। রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী মাহবুবা মৌসুমি বলেন, বাংলা একাডেমি ও শহীদ মিনার আমাদের ক্যাম্পাসের মধ্যে হওয়ায় আমরা অন্যদের থেকে একটু বেশি এগিয়ে। তিনি আরও জানান, ফেব্রুয়ারি মাস জুরে শহীদ মিনারও টিএসসিতে নানা আলোচনা অনুষ্ঠান হয় যা থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি। ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সীমা, তানি, মৌমিতা, ফারিয়া বলেন, একুশে বই মেলাতে প্রতিবছরই অনেক বার আসা হয় আশা করছি এবারও হবে। আমরা সব সময় দল বেধে আসি কারন একেক জন একেক লেখকের বই কিনি, যাতে সব লেখকের বই আমাদের সংগ্রহে থাকে। এদিকে একুশে বইমেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি স্টলেই এক দুই জন শিক্ষার্থী বই বিক্রিও কাজে ব্যস্ত। এমন একজন শিক্ষার্থী তাহমিনা বলেন, ছোট বেলা থেকেই বইএর প্রতি আলাদা একটা আর্কষণ আমার আছে। মূলত এ কারণেই বই মেলায় আসা। বই মেলায় কাজ করতে তার ভালোই লাগে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এখানে কাজ করলে বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের সাথে পরিচয় ঘটে এবং কাজ শেষে বেশ কিছু টাকাও পাওয়া যায়। ইডেন মহিলা কলেজের এর শিক্ষার্থী মুক্তা ঘোষ বলেন, গত বছর থেকে এ বছর মেলার পরিবেশ খুব ভালো। বাংলা একাডেমি ছাড়িয়ে এবার মেলার স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হওয়ায় মেলায় কোন গাদাগাদি নাই। দর্শনার্থীরা ইচ্ছামতো ঘুরতে পারছে ও সময় নিয়ে ভালো বই কিনতে পারছে। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা মনে করেন, অন্য বছরগুলোর থেকে এ বছর ঢাবি ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো হওয়ায় জমে উঠেছে একুশে বই মেলা আর ঢাবি ক্যাম্পাসের টিএসসি, ডাস, হাকিম চত্বর, কলাভবন, মধুর ক্যান্টিন সেন্টাল লাইব্রেরি জুরে বসেছে নবীন প্রবীণ শিক্ষার্থীর মিলনমলা।
নগর জুরে তীব্র জানজট উপেক্ষা করে যেমন বইপ্রেমীরা ছুটছে বইমেলায় তেমনি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কখনো ভুলতে দেখা যাচ্ছে না প্রাণের ক্যাম্পাসে একটু আড্ডা দিতে। অনেকেই আবার মেলা ঘুরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসছেন প্রাণের ক্যাম্পাস থেকে। ক্লান্ত হলে বসে পরছেন টিএসসির সবুজ চত্বরে অথবা কংক্রিটের উপর। আর এভাবেই অপেক্ষা আর একটা একুশের জন্য। একুশ যেন ফিরে ফিরে আসে প্রিয় ক্যাম্পাসে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন