শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশের ‘না’

আইএমএফ’র ঋণে ৩৩ শর্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম

৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক ও তার সহযোগী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৩৩ শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশকে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো, বৈদেশিক মুদ্রানীতি শিথিল করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কমানোসহ শর্তগুলো পূরণ করা হলে আইএমএফ আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে ঋণ ছাড় দেবে। পশ্চিমা দেশগুলোর স্বার্থে দেয়া এই শর্তগুলো মেনে বাংলাদেশ ঋণ নিতে রাজী হয়নি। অর্থমন্ত্রী শর্ত মেনে ঋণ গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের সহায়তা বাধার সৃষ্টি করতেই এই শর্তগুলো দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ শর্ত মেনে ঋণ নেবে না জানিয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মূলত: করোনা মহামারিতে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় সবগুলো দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে করোনার মধ্যেও অর্থনৈতিক উন্নতির দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে সামনে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা প্রতিটি ক্ষেত্রে পেছনে ধরে রাখার চেষ্টা করলেও অর্থনীতিতে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের লক্ষ্য আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। এ জন্য অনেক বেশি বিনিয়োগ দরকার। তাই বিভিন্ন সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পিপিপি’র মাধ্যমে বেসরকারি খাতে অধিক বিনিয়োগের জন্য উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আহ্বান করেছেন। একই সঙ্গে এসব উন্নয়ন সংস্থাকে সহজশর্তে ঋণ দেয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে ঋণ প্রদান করে বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে বিশ্বব্যাংক ও তার সহযোগী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহ অন্যান্য সংস্থা নানামুখী সংস্কারের চাপ দিচ্ছে। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দাতা সংস্থার এসব শর্ত মেনে এ ঋণ নিতে নারাজ। আর তাই ইতোমধ্যে আইএমএফ’র ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণের ব্যাপারে সরকার আগ্রহী নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছে।

সূত্র মতে, করোনা মহামারির বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে সরকার বহুপক্ষীয় দাতাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা পেয়ে এসেছে। তাই এখনই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তিন বিলিয়ন ডলারের ঋণের ব্যাপারে সরকার আগ্রহী নয়। গত মাসে আইএমএফ জানিয়েছিল, তেত্রিশটি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা নতুন ঋণ দিয়ে সহায়তা করতে পারে। বৈশ্বিক তারল্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ৬৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে ২৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নয়নশীল দেশ এবং উদীয়মান বাজারের জন্য দেয়া হবে।

মহামারির সূত্রপাতের শুরু থেকেই অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা এবং পর্যাপ্ত টিকার জন্য বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা পেয়ে এসেছে। চলতি অর্থবছরে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকায় সরকার প্রস্তাবটি বিবেচনাধীন রেখেছে। প্রস্তাবটি পরে বিবেচিত হতে পারে বলে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অর্থবিভাগ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সাথে বৈঠকের পর সরকার আইএমএফের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, যে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালযের চাহিদা বুঝতে হয়। যেহেতু তহবিলের কোনো অভাব নেই।

প্রস্তাব অনুযায়ী, আইএমএফ আগামী তিন বছরের মধ্যে তহবিল দেবে। ঋণদাতা সংগঠনটি তেত্রিশটি শর্ত নির্ধারিত করেছে। যার মধ্যে রয়েছে, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো এবং অবৈধ অর্থ বৈধ করার সুযোগ বাতিল করা। বৈদেশিক মুদ্রানীতি শিথিল করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কমানো, যাতে বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়।

সরকার ইতোমধ্যেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়েছে। তবে সরকারে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, সুদের খরচ কমানোই এর লক্ষ্য ছিল।

আইএমএফ, ব্যাংকিং শিল্প, রাজস্ব সংগ্রহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য খাতে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য আইএমএফ সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা আইএমএফের সব শর্তে রাজি নয়। শর্ত কমানোর ব্যাপারে আলোচনা চলছে। অন্যথায় বাংলাদেশ এই ঋণ গ্রহণ করবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন