শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আইএমএফ’র ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়া নিয়ে আশাবাদ

অর্থসচিবের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে ইতিবাচক মনোভাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ’র ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়া নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশাস্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল গতকাল ঢাকায় এসেছেন। এরপরই গতকাল অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সঙ্গে সচিবালয়ে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করে প্রতিনিধিদলটি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঋণ সহায়তার বিষয়ে আইএমএফ’র অবস্থান জানতে চাইলে সংস্থাটি ইতিবাচক আভাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে বৈঠক শেষে অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন জানান, আমরা ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। এটি আইএমএফ দলের সঙ্গে প্রথম বৈঠক ছিল। বৈঠক আরও হবে। তবে সময়মতো ঋণ পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

জানা গেছে, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের টাকা পাওয়া গেলে চলমান ডলার সঙ্কট অনেকটাই দূর হবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা, জ্বালানি ও ডলার সঙ্কট এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় চাপের মুখে অর্থনীতি। এ অবস্থায় আইএমএফ’র কাছ থেকে ঋণ হিসেবে ডলার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অর্থবিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত আইএমএফ’র ঋণ ছাড়করণের বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। সংস্থাটি ঋণ দিবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এখন কত দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণের এই ডলার বাংলাদেশে নিয়ে আসা যায় সেটাই বড় বিষয়।

উল্লেখ্য, মোকাবিলায় আইএমএফের কাছে ৪৫০ কাটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার, তবে ঋণ পেতে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। তাদের কর্মসূচির আওতায় ৬৮০ কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সম্ভাব্য ৯টি কিস্তিতে তারা তিন বছর ধরে ঋণ দিতে পারে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হতে পারে ২০ বছরের মতো এবং এর মধ্যে বেশ কয়েক বছর গ্রেস পিরিয়ড থাকবে। সিরিজ বৈঠকে এসব শর্ত নিয়ে আইএমএফ’র সঙ্গে দর-কষাকষি করবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সফররত আইএমএফ’র প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে আশার কথা জানান। আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশে অবস্থান করবে। এ সময় তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলের সদস্যরা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তারা। এর আগে গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ ঋণ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল আইএমএফ’র কাছে। চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফ’র বার্ষিক সভায় ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র বার্ষিক সভার এক ফাঁকে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বাধীন দল আইএমএফের সঙ্গে এক দফা আলোচনাও করে। এছাড়া আইএমএফ ২১ অক্টোবর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তাদের এবারের ঢাকায় আসা মূলত বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আর্থিক খাতের সংস্কার ও নীতি নিয়ে আলোচনা করা। সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কর্মকর্তা পর্যায়ে চুক্তির অগ্রগতির জন্য আলোচনা করা। আলোচনা হবে আইএমএফের বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) কর্মসূচি এবং নতুন উদ্যোগ, সহনশীলতা ও টেকসই সহায়তা তহবিল (আরএসটিএফ) কর্মসূচি থেকে এ ঋণ পাওয়ার ব্যাপারেও। আরএসটিএফ ঋণের অধীনে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘ মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোকে অর্থায়ন করা হয়। আইএমএফ’র কাছে ঋণের জন্য চাওয়া চিঠিতে এই আরএসটিএফের কথাও উল্লেখ করেছিল বাংলাদেশ। এবারের বৈঠকে বাংলাদেশের রাজস্ব প্রশাসনের আধুনিকায়ন, রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রমকে গতিশীল করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি, আয়কর আইন ও শুল্ক আইন প্রণয়ন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও খেলাপি ঋণ কমানো, ভর্তুকি ও প্রণোদনা কমানো, রিজার্ভ গণনার পদ্ধতি ঠিক করাসহ নানা বিষয় থাকছে আইএমএফের আলোচনার মধ্যে। জানা গেছে, ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে লেনদেনের ভারসাম্য বাবদ ১৫০ কোটি ডলার ও বাজেট সহায়তা বাবদ ১৫০ কোটি ডলার পাওয়া যেতে পারে। বাকি ১৫০ কোটি ডলার পাওয়া যেতে পারে আইএমএফ’র আরএসটিএফ থেকে। এলক্ষ্যে আইএমএফ তাদের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং নতুন কর্মসূচি রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ঋণের বিষয়ে বেশকিছু শর্তারোপ করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বেশিরভাগ শর্তপূরণ করেছে। সংস্থাটির শর্ত মেনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি ভর্তুকি কমানো হয়েছে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন