বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম থেকে : চেনা সৌম্যকে বড্ড অচেনাই মনে হচ্ছে। ব্যাটে নেই রান, হাশি-খুশি চেহারার সাতক্ষীরার ছেলেটির মুখও এখন বড় ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে! গত বছর ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৫ ম্যাচে ৬৭২ রানে (গড় ৫১.৬৯) কি বার্তাই না দিয়েছিলেন এই বাঁ হাতি টপ অর্ডার। অথচ, পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের নায়ক এবার দেখেছেন মুদ্রার ওপিঠও! আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচে ০, ২০, ১১। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নির্বাচকদের ফেলে দেয়া পরীক্ষায় ৭ রানের ইনিংসে অনুত্তীর্ণ সৌম্য। ওয়ানডের দারুণ পারফরমেন্সে হোমে তিনটি টেস্ট খেলেছেন, তবে নির্বাচকদের দয়ায় ওই তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেননি (১০৭ রান, ১ উইকেট)। ফলে দ.আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দলে জায়গা হয়নি। এখন ওয়ানডে দলে জায়গা হারিয়ে টেস্ট দলে ফেরার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে সৌম্যকে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দর্শকের কাতারে বসে থাকার যন্ত্রনা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন সৌম্য। তবে এক্ষুণি হাল ছাড়ছেন না। সাড়ে ৮ বছর পর ওয়ানডে ক্রিকেটে বাঁ হাতি স্পিনার মোশারফ রুবেল করেছেন প্রত্যাবর্তন। ৩৯ এ দাঁড়িয়ে যখন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার প্রস্তুতি নেয়ার কথা, তখন ১১ বছর পর টেস্ট দলে ফিরে হই চই ফেলে দিয়েছেন ইংল্যান্ড অফ স্পিনার গ্যারেথ বেটি! এসব দৃষ্টান্ত যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তখন নিজের সঙ্গে নিজেকেই যেনো যুদ্ধ করতে হচ্ছে সৌম্যকে। গতকাল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুশীলন শেষে সে কথাই জানিয়েছেন সৌম্যÑ‘জাতীয় দলের বাইরে বসে খেলা দেখাটাই ছিল আমার জন্য চ্যালেঞ্জই। খানিকটা সময় আমার বাজে কেটেছে, ইমরুল ভাই এই সময়ে ভালো করছেন। অন্য ওপেনাররাও ভালো করছেন। নিজে খেললেও সব সময় নিজের জন্য ফাইট করি, নিজেই নিজের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ি। সব সময় ভাবি সর্বশেষ ম্যাচে যা করেছি, তার চেয়ে ভালো করতে হবে। নইলে নিজের কাছে নিজে হেরে যাব। এভাবেই আমি নিজেকে প্রস্তুত করি।’
কঠিন অবস্থায় পড়লে ক্রিকেটগুরু সালাউদ্দিনের শরনাপন্ন হন সাকিব, তামীম। আশরাফুলও বহুবার ওয়াহিদুল গনি’র শরনাপন্ন হয়েছেন। অফ ফর্মে পড়ে সৌম্য অবশ্য সমস্যাটা চিহ্নিত করতে পারেননি। নিদ্দিষ্ট কারো নাম না বললেও দুঃসময়ে পরামর্শ নিচ্ছেন, তা জানিয়েছেন তিনিÑ‘সমস্যা চিহ্নিত করতে পারিনি। সমস্যাটা কোথায় নিজেও জানি না। সমস্যা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে এ ধরনের সমস্যায় পড়া আমার জন্য ভালো হয়েছে। অনেক সময় ভালো কথায় কাজ হয় না, আবার অনেক সময় একটা মানুষের কথা কাজে লাগে। আশা করছি একটা ভাল ইনিংস খেললেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব।’
পেস বোলিং করতে পারেন ঠিকই, তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে পর্যন্ত তেমন একটা পেস বোলিং করতে হয়নি সৌম্যকে। ৭ নম্বরে নাসিরের জায়গায় ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি একজন তৃতীয় সীম বোলার পেলে মন্দ হয় না,এই বিবেচনায় সৌম্য খেলেছেন তিনটি ম্যাচ। টেস্টে ৭ নম্বরে ¯øটটা এখনো ফাঁকা, তবে কামব্যাকটা কঠিন। তবে বোলার পরিচয়েও আত্মপ্রকাশের বিকল্প স্বপ্ন দেখেন সৌম্যÑ‘সব সময়ই বোলিংয়ের চেষ্টা করি। নেটে নিজের বোলিংটা করি। যেকোনো সময় লাগতে পারে ভেবে নিজেকে প্রস্তুত রাখি।’
ক্লাব ক্রিকেটে, কিংবা প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট দূরে থাক, এজ লেভেলের ক্রিকেটেঅধিনায়কত্বের অতীত নেই। একবার শুধু অনুর্ধ্ব-১৯ দলের একটি অনুশীলন ম্যাচে করেছিলেন অধিনায়কত্ব। সেই সৌম্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ দিনের দ্বিতীয় অনুশীলন ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন। এমন দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে মেলে ধরার সম্ভাবনা দেখছেন সৌম্যÑ‘অধিনায়কত্ব করব, এটা দারুন এক অনুভুতি। যেহেতু আমার অধীনে খেলোয়াড়েরা খেলবে। নিজেকেও খেলতে হবে, তাদেরকেও গাইড করতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে উপভোগ করব। অধিনায়কত্ব করার ইচ্ছে আমার ছিল, কখনো প্রকাশ করিনি। এখন সুযোগটা কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেই চেষ্টা করব। ভালোভাবে দায়িত্ব পালন ও সঙ্গে নিজে ভালো করাটা আমার বড় অর্জন হবে।’ গড়পড়তা ইনিংস খেলে লাভ নেই, এই উপলদ্ধি থেকে ফতুল্লায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুশীলন ম্যাচে ১২১ রানের ইনিংসে ইমরুল কায়েস ফিরেছেন দলে। সৌম্যও তেমন কিছুই কামনা করছেনÑ‘সব সময়ই ফ্রেশ শুরু করতে চাই। পিক টাইমে আগে যেভাবে খেলতাম, তেমনই শুরুর চেষ্টা করব।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন