বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পূজামন্ডপে হামলায় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ জড়িত: গয়েশ্বর

বিএনপি নেতাদের ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২১, ৫:৫২ পিএম

পূজামন্ডপে হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছেলেরা জড়িত বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। কুমিল্লাসহ বিভিন্ন পূজাম-পে হামলার ঘটনা সরকারের নীলনকশা বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা সরেজমিনে মন্দিরে গিয়ে সকলের সাথে কথা বলেছি, প্রত্যক্ষদর্শীদের মতামত শুনেছি। সঠিকভাবে সঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে, এইসব হামলার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী যুব লীগ, ছাত্রলীগের ছেলে-পেলেরা। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ও পুলিশের কাছেও ধারনা আছে। কিন্তু তাদেরকে সামনে না নিয়ে যারা নিরীহ বা শান্তি প্রিয় তাদেরকে মামলা দিয়েছে। তারা বোঝাতে চাচ্ছে যে, এই ঘটনায় অনেক মামলা করেছি, অর্থ্যাৎ বিরাট একটা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার এটা মোকাবিলা করার জন্য।

সোমবার (২৫ অক্টোবর) পূজামন্ডপে হামলার ঘটনা সরজমিন পরিদর্শনের পর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের গঠিত কমিটির প্রধান এসব কথা বলেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার হামলাকারীদের মোকাবেলা করা বা আইনের আওতায় এনে তাদেরকে শাস্তি দেয়া বা বিচার করার উদ্যোগ নেয়নি। উদ্যোগটা হলো এই ইস্যুতে মিথ্যা মামলার মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে তুলে নেয়া বা গ্রেপ্তার-হয়রানি করার একটা নীলনকশা এবং হামলাকারীদের আড়াল করা। এটা নিসন্দেহে বলা যায়, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে হেনস্তা করার একটি ইস্যু তৈরি করেছে।

গণমাধ্যমেরে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এটা শুধু হিন্দু আক্রান্ত হয়েছে আমরা বলব না। গোটা জাতি আক্রান্ত হয়েছে। সেই আক্রমণকারীদের প্রতিরোধ করতে হলে অবশ্যই আমাদের একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। গত ২৩ অক্টোবর গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল কুমিল্লার চাঁন্দমনি রক্ষা কালী মন্দির, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের রামকৃষ্ণ সেবা আশ্রম ও রাজা লক্ষী নারায়ন জিউ আখড়া এই তিনটি মন্দির পরিদর্শন করেন এবং মন্দিরের পুরোহিতসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, কুমিল্লার চাঁন্দমনি রক্ষা কালী মন্দিরে গত ১৩ অক্টোবর দুপুর আড়াইটায় একদিনে তিন দফা আক্রমণ করেছে। নানুয়াদিঘীর পাড়ের ঘটনা হলো সকালে। সেখানে (চাঁন্দমনি রক্ষা কালী মন্দির) আক্রমণ করার পরে স্থানীয় লোকজন তারা যেভাবে পারে আত্মরক্ষা করেছে। ঘটনার পরে পুলিশ আসছে, তারা বলেছে, আপনারা ভয় পাবেন না আমরা আছি। উনারা চলে যাওয়ার পরে আবার তিনটায় আক্রমণ হয়েছে। ঠিক একইভাবে আক্রমণকারীরা চলে যাওয়ার পরে পুলিশ এসেছে। এসে বললো যে, আমরা আছি আপনারা ভয় পাইয়েন না। আবার বিকাল চারটায় আক্রমণ হয়েছে। অর্থ্যাৎ একটা মন্দির তিনবার আক্রমণ হয়েছে এবং আগুন দেয়া হয়েছে। সেই মন্দিরে পুরোহিতের সাথে কথা বলছি। কারণ আমার ধারণা সরকার অথবা স্থানীয় প্রশাসন থেকে তাদেরকে নিশ্চয় কোনো হুমকি-টুমকি দেয়ার কারণে মন্দিরের কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ কেউ কেউ উপস্থিত হননি এটা স্বাভাবিকভাবে বুঝা যায়। আশপাশের দোকানদার আছে তাদেরকে আমরা ডেকে তাদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনেছি। মন্দিরে আগুন দিয়েছে কোনো প্রাণহানি ঘটে নাই। তবে বিরাজমান আতঙ্কটা এখনো তাদের মন থেকে মুছে যায়নি। চারিদিকে মানুষের চোখে মুখে একটা আতঙ্কে ছাপ দেখেছি। কোনো কথাই তারা বলতে চায় না। কারণ তাদেরও জীবন আছে ভয় থাকতেই পারে যদি কথাগুলো প্রকাশ করে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়া একটা গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু অধ্যুসিত এলাকা, সেই টুঙ্গিপাড়াতেও একটি মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে। এখান থেকে অনুমান করা যায় যে, সরকার বড় স্পর্শকাতর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য দিয়ে জনদৃষ্টিকে অন্যদিকে সরানো এবং তার স্বৈরাতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী মনোভাব দিয়ে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার একটা হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে মৌলবাদী বা জঙ্গিবাদী বা সাম্প্রদায়িকভাবে আখ্যায়িত করা হয় এটা ষড়যন্ত্রমূলক। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি দলের প্রতিনিধি। আমি বিএনপি করি। যেই দলের দর্শন হচ্ছে- আলাদা কোনো বিভাজন নয় অর্থ্যাৎ এই ভূখ-ে জন্ম যারা নিয়েছেন সবাইকে নিয়ে আমরা সবাই বাংলাদেশী। আমরা জন্মে হিন্দু, মুসলিম হতে পারি, অনেক কিছু হতে পারি। কিন্তু আমাদের পরিচয় বাংলাদেশী। সেই বাংলাদেশী পরিচয়ের ঐতিহ্য নিয়ে আমাদের জাতি সত্ত্বার ওপর ভিত্তি করে আমরা এই চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে বর্তমান এই ফ্যাসিবাদী সরকারের এই ধরনের হীন কর্মকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আমি আহবান করছি। আমরাও মাঠে নামবো। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে বা অব্যাহত থাকলে গণতন্ত্র তো নাই, রাষ্ট্র থাকবে কিনা সন্দেহ। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখিন হবে।

 

তিনি বলেন, আমরা হিন্দু চেতনাবোধ থেকে মন্দিরে (হামলা হওয়া মন্দির) যাইনি। আমরা একটা ন্যাশনাল স্পিরিট অর্থ্যাৎ আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, আমরা একটা রাজনৈতিক দল করি সেই দলের দায়িত্ববোধ থেকে আমরা বিএনপির প্রতিনিধি হিসেব গিয়েছি এবং যাবো। এটা ভাবার কারণ নেই যে, শুধু হিন্দুদের মন্দির বা বাড়ি হামলা হয়েছে বলে আমরা সেখানে গিয়েছি। যেকোনো হামলা, যেকোনো আক্রমণে আমরা ইতোপূর্বে সেখানে গেয়েছি এবং আমরা প্রতিবাদ করেছি, প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবো অব্যাহতভাবে।

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চক্রবর্তী. মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, অমলেন্দু দাস অপু, দেবাশীষ রায় মধু, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে উপজেলার সভাপতি প্রকৌশলী মমিনুল হক ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন