মোঃ হুমায়ূন কবির, আশুগঞ্জ থেকে ঃ দীর্ঘ ৭ মাস বন্ধ থাকার পর গ্যাস সরবরাহ পেলেও সহসা উৎপাদনে যেতে পারছেনা আশুগঞ্জ ইউরিয়া সার কারখানা। গ্যাস সঙ্কটের কারণে দীর্ঘ ৭ মাসেরও অধিক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানা বন্ধ থাকার কারণে যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে অকেজো হয়ে পড়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে ।
এদিকে গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার পরেও বিভিন্ন যান্ত্রিক জটিলতার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানা চালু করে ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু করতে পারছে না কারখানার কর্তৃপক্ষ। কারখানা চালু হলে শ্রমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে পুনরায় কর্ম চাঞ্চল্যতা ফিরে আসবে বলে মনে করেন শ্রমিকরা। এদিকে কারখানা প্রতিদিন ১২শ’ টন উৎপাদন ক্ষমতা হিসাবে ৭ মাস বন্ধ থাকায় আড়াই লাখ টন সার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এতে কারখানার উৎপাদন খাতে লোকসান হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা মূল্যের সার ।
তবে কারখানার বিভিন্ন বিভাগ পর্যায়ক্রমে চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্থানীয় প্রকৌশলীরা।সব বিভাগের যন্ত্রাংশ ঠিকঠাক থাকলেও পুনরায় ইউরিয়া সার উৎপাদনে ফিরে আসতে আরো ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। বিসিআইসিএর লাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি এখন বিদেশ থেকে সার আমদানী নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
কারখানার কারিগরি বিভাগ সূত্রে জানাযায়, গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক চলতি বছরের গত ৩ এপ্রিল আশুগঞ্জ সার কারখানার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার কারণে স্বাভাবিক নিয়মে কারখানার সার উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গত ৭ মাস কারখানা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ১২শ’ টন উৎপাদন ক্ষমতা হিসাবে প্রায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা মূল্যের আড়াই লাখ টন সার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। পরবর্তীতে কারখানার অধীনস্থ ৭ জেলার ডিলারদেরকে গত ৭ মাস যাবৎ বিদেশ থেকে দ্বিগুণ মূল্যে আমদানীকৃত সার সরবরাহ করতে হয়েছে। সারের ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য প্রতি টন ইউরিয়া সার ২২ হাজার টাকা দরে আমদানী করে ১৪ হাজার টাকা দরে ডিলারদের কাছে বিক্রি করতে হয়েছে। এতে কারখানাকে কয়েক শত কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে গত দুই-তিন বছর ধরে গ্রীষ্ম মৌসুমে (মার্চ-সেপ্টেম্বর মাসে) সরকারি সিদ্ধান্তে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বার বার বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে প্রতিবছরেই কোটি কোটি টাকার লোকসানের মুুখে পড়ছে কারখানা।
কারখানা সূত্রে জানা যায়, গত ৮অক্টোবর শনিবার রাতে কারখানায় পুনরায় গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইউরিয়া প্লান্টের বয়লার ইউনিট চালু করা গেলেও কারখানার সবক’টি ইউনিট চালু করা সম্ভাব হয়নি। তবে কারখানার সবকটি ইউনিট (সিওটু, অ্যামোনিয়া, সিংগেজ, প্রসেসর, পাওয়ার প্লাট ও ভ্যাপকপ বয়লার) পর্যায়ক্রমে চালু করার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। উল্লেখ্য যে, কারখানা বন্ধ হওয়ার আগে দৈনিক সাড়ে ১১শ’ টন থেকে ১২শ’ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হচ্ছিল।
এদিকে কারখানার সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদ উদ্দিন জানান, ক্যামিকেল কারখানা গুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে করে যথাসময়ে কারখানার উৎপাদন চালু করা সম্ভব হয় না। এছাড়া গত বছরও কারখানা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এতে কারখানা নির্ধারিত সময়ে চালু করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ভবিষ্যতে কারখানায় নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানান এই শ্রমিকনেতা।
এছাড়া কারখানার ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এটি এম বাকী জানান, গ্যাস সরবরাহ পেয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কারখানায় দ্রুত উৎপাদনে ফিরে যাওয়ার জন্য শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তারা স্বত:স্ফূর্ত ভাবে কাজ করছে। বর্তমানে গুদামে বিদেশ থেকে আমদানী করা ৬৩ হাজার টন সার মজুদ রয়েছে। সুতরাং ডিলারদেরকে সার সরবরাহ দিতে কোন সমস্যা হবে না। তাছাড়া সার সংকটেরও কোনো আশংকা নেই।
এ ব্যাপারে কারখানার মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) প্রকৌশলী ওমর খৈয়াম জানান, সরকারি সিদ্ধান্তে গত ৩ এপ্রিল থেকে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল। বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে কারখানার বিভিন্ন ইউনিট চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু হতে আরও ১০-১৫ দিন সময় লাগতে পারে।
তাছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা সারের গুণগত মান নিয়ে অভিযোগ করে জেলা সার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, কারখানা বন্ধ থাকায় গত সাত মাস বিদেশ থেকে প্রতিটন সার ২২ হাজার টাকা দরে কিনে ১৪ হাজার টাকা দরে ডিলারদেরকে সরবরাহ করতে হয়েছে। এদিকে আমদানি করা সারের গুণগত মান যেমন খারাপ তেমনি বস্তায়ও ওজনে কম পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া কৃষক পর্যায়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা সারের চেয়ে দেশে উৎপাদিত সারের চাহিদা অনেক বেশি। গত ৬/৭ মাস যাবত ডিলারদেরকে আমদানীকৃত ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয়েছে। এসব সার নিম্নমানের হওয়ায় কৃষকদের কাছে বিক্রি করতে নানান জটিলতায় পড়তে হয়েছে সার ব্যবসায়ীদেরকে।
এতে করে আমদানীকৃত সার কারখানা থেকে সরবরাহ নিয়ে প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছে ডিলারগণ। ডিলারগণ মনে করেন, কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক রাখলে যেমন নিজস্ব উৎপাদন বাড়বে তেমনি কারখানার সচলসহ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং পাশাপাশি লাভবান হবে। এছাড়া কারখানার সার উৎপাদন খরচ হ্রাস পাবে, ভুর্তকি কমে আসবে অনেকাংশ। এতে আমদানি-নির্ভরতাও কমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন