সুন্দরবনে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। নৌদস্যু মুক্ত সুন্দরবনে কেউ বা কোন চক্র বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আত্মসমর্পণ করে যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে তাদের বিপথে নেয়ার চেষ্টা যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে র্যাব। নৌদস্যু মুক্ত সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল রোববার র্যাবের ডিজি অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এ হুশিয়ারি দিয়েছেন। বাগেরহাটের রামপালে আত্মসমর্পণ করা নৌদস্যুদের পুনর্বাসনে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে র্যাব।
র্যাব ডিজি আরো বলেন, আমাদের সতর্কবার্তা জারি ছিল। এখনও তা জারি রয়েছে বলেই সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটক বাড়ছে, মানুষের গমনাগমন বেড়েছে, নৌদস্যুতা শূন্যের কোঠায় নেমেছে। বাঘ ও হরিণের সংখ্যাও বেড়েছে। আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে চলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সুন্দরবন উপকূলে আশির দশকে মানুষ যেতে পারত না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে একটি টাস্কফোর্স গঠনের পর সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সুন্দরবনকে নৌদস্যু মুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর থেকে নৌদস্যুরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তারা ফেরারি জীবন শুরু করে। পরে র্যাবের হাতে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া শুরু করে। পালিয়ে থাকা জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে থাকে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, র্যাব ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনে নৌদস্যু মুক্ত অভিযান শুরু করে। এ সময়ে ৪২৬টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদসহ ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ সদস্য র্যাবের হাতে আত্মসমর্পণ করে। সম্পূর্ণরূপে দস্যু মুক্ত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে ‘দস্যু মুক্ত’ ঘোষণা করেন। গত তিন বছর ধরে সেই সাফল্য র্যাব ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরপর থেকে বিভিন্ন ঈদে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও করোনার সময় মানবিক সাহায্য-সহায়তা দেয়া হয়েছে। দস্যিপনা ছেড়ে যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন তাদের প্রত্যেককে এক লাখ করে টাকা দিয়েছে সরকার। র্যাবও বিভিন্ন সময় মানবিক, আর্থিক ও সামাজিক সহায়তা দিয়েছে।
র্যাবের ডিজি বলেন, এখন সুন্দরবনে শান্তির সুবাস বইছে। অপহরণ, হত্যা আর সুন্দরবনে দেখা যায় না। জেলেদের কষ্টার্জিত উপার্জনের ভাগও কাউকে দিতে হচ্ছে না। বন্যপ্রাণিসহ সুন্দরবনের মাওয়ালি, বাওয়ালি, বনজীবী, সবাই নির্বিঘ্নে জীবনযাপন করছে। এখন পর্যটক, দর্শনার্থী, জাহাজের নাবিকরা সুন্দরবনে নির্ভয়ে যেতে পারছে। দস্যু মুক্ত সুন্দরবন ধরে রাখার জন্য দুবলার চর ও মুন্সিগঞ্জে আমরা দুটি ক্যাম্প স্থাপন করেছি। নিয়মিত ফুট-প্যাট্রল, নৌ-প্যাট্রল করছি। প্রয়োজনে হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছি। গোয়েন্দা নজরদারি রাখছি। তিনি বলেন, এবার আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১০২টি ঘর, জিনিসপত্রসহ মুদি দোকান ৯০টি, জাল ও মাছ ধরা নৌকা ১২টি, ইঞ্জিনচালিত নৌকা আটটি, বাছুরসহ ২২৮টি গবাদি পশু দেওয়া হবে। যদি অসুখ-বিসুখে গরু মারাও যায় সেজন্যও থাকবে বরাদ্দ।
সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় র্যাবের সদস্যরা কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুন্দরবনকেন্দ্রিক আগের মতো আর কোনো ঘটনা ঘটছে না। আসলে কিছুই যে ঘটে না তা নয়। তবে তা হিসাবে খুবই নগণ্য। ওই এলাকায় কাজ করা খুবই কঠিন। আমাদের সদস্যরা অপেক্ষা করে কখন বৃষ্টি আসবে, মিঠা পানি সংগ্রহ করবে। কারণ, সেখানে নোনা পানি। র্যাব সদস্যরা সেখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন