বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আবারো কথার ফুলঝুড়ি সালাউদ্দিনের

প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : বাংলাদেশ ফুটবলের অভিভাবক হিসেবে গত সাড়ে আট বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন কিংবদন্তী ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন। এই মেয়াদে দেশের ফুটবল উন্নয়নে কথার ফুলঝুড়ি ছোটানো ছাড়া জাতিকে আর কিছুই উপহার দিতে পারেননি তিনি। সেই কথার ফুলঝুড়ি ছুটিয়েই ছয়মাস আগে তৃতীয় মেয়াদের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সালাউদ্দিন এবার দেশবাসীকে উপহার দিলেন ভুটান লজ্জা। তার এবারের মেয়াদকালে জাতীয় ফুটবল দল ১০ অক্টোবর থিম্পুতে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে-অফে ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে হেরে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে। যে হার বাংলাদেশের ফুটবলকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে। ভুটান লজ্জায় লজ্জিত এখন দেশের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী। তারা এ ব্যর্থতার জবাব চায় সালাউদ্দিন নেতৃত্বধীন বাফুফের বর্তমান কমিটির কাছে। ফুটবলপ্রেমীরা জাতীয় দলের ব্যর্থতার জবাব চাইলেও বাফুফে সভাপতি সেই আগের মতই কথার ফুলঝুড়ি ছোটালেন। ভুটানের কাছে বাংলাদেশের লজ্জাজনক হারের সাতদিনের মাথায় সালাউদ্দিন মিডিয়ার মুখোমুখী হয়ে কাঠামোকে ঢেলে সাজানোসহ দেশের ফুটবলকে আধুনিক ও কার্যকরী রূপ দেয়ার ঘোষণা দিলেন। গতকাল বাফুফে ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভুটানের কাছে হারের পর প্রচার মাধ্যম ও বিভিন্ন অঙ্গণে দেশের ফুটবলকে ঘিরে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। আমি আজ আপনাদের মুখেমুখি হয়েছি আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য। সন্দেহ নেই বাংলাদেশের ফুটবল একটা দুঃসময়ের মধ্যেই আছে। তবে আমি বলতে চাই আমি জাতীয় ফুটবল দলের এ অবস্থা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলাম। আমরা চেষ্টা করেছি খেলোয়াড়দের বিদেশী কোচসহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। কোনও লাভ হয়নি।’
সালাউদ্দিন জানান, আগামী জানুয়ারি মাসে সমন্বিত একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে বাফুফে। যে পরিকল্পনায় থাকছে দেশের ফুটবল উন্নয়নের নানামুখী কর্মসূচি। সাড়ে আট বছর আগে সভাপতি হওয়ার আগে বাফুফে সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সালাউদ্দিন। তখনকার কমিটি ফুটবল চালাতে ব্যর্থ হয়েছিল- এমন অভিযোগ তুলে ঐ কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। অথচ নিজ দায়িত্বকালে লাল-সবুজ ফুটবলের এমন দূরাবস্থা হবে- সেটা হয়তো কল্পনাও করেননি কিংবদন্তী এই ফুটবলার। তাই কাল বাফুফে ভবনে পা রেখেই জাতীয় দলের ভুটান হারের লজ্জার জন্য দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করলেন আগামী তিন বছরের ‘রোড ম্যাপ’।
সালাউদ্দিন ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, কার্যনির্বাহী সদস্য আমিরুল ইসলাম বাবু, জাকির হোসেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ এবং স্ট্র্যাটেজিক্যাল ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। বাফুফে সভাপতি যখন সংবাদ সম্মেলনে জানাচ্ছেন তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তখন ভবনের মূল ফটক ছিল তালাবদ্ধ। কারণ সেখানে একদল বিক্ষোভকারী বাফুফের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলো। তারা ফটকের সামনে অবস্থানও নেয়। এমন পারিপার্শ্বিকতায় বাফুফে সভাপতি উপস্থাপন করেন তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমাদের এখন তৃনমূলে নজর দেয়ার সময় এসেছে। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি একটা গাইড লাইন দিয়েছেন। আগামী তিন বছরের এই গাইড লাইনটি সামনে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। আশা করি নতুন বছরের প্রথম মাস থেকেই আমরা আমাদের কাজ শুরু করতে পারবো।’
আগের মতো আবারও তৃণমূলে ফুটবল প্রসারের প্রতিশ্রæতি দেন সালাউদ্দিন। তার কথা, ‘আগামী বছরই আমাকে ইয়ুথ ন্যাশনাল লিগ, স্কুল ফুটবল, সোহরাওয়ার্দী কাপ, শের-ই-বাংলা কাপ ফুটবল চালু করতে হবে। এ জন্য অর্থ দরকার। সে অর্থের জোগান দিয়েই আমি মাঠে নেমে পড়বো।’ পরিকল্পনা অনেক হলেও সেগুলো নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বাফুফে প্রধান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশেরই একটি দুঃসময় আসে এবং সেখান থেকে উতরেও যায় তারা। আমার বিশ্বাস আগামী তিন বছরের মধ্যে আমরা আমাদের ফুটবলের এ সংকটময় মুহূর্ত থেকে পরিত্রাণ পাবো। যদি আমি এই সময়ের মধ্যে দেশের ফুটবল উন্নয়নে ব্যর্থ হই, তাহলে মিডিয়ার সামনে ঘোষণা দিচ্ছি, নিজপদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াবো।’
সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘ভুটানে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স প্রত্যাশিত ছিল না। এ হারের দায় আমরাও এড়াতে পারি না। জাতীয় দল নিয়ে যে পলিসি প্ল্যান ছিল সেটা কাজে আসেনি। পাইপলাইনে আমাদের কোনো খেলোয়াড় নেই। ভবিষ্যতে বয়সভিত্তিক দলগুলোর দিকে আমরা আরো বেশি নজর দেব।’ বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি বলেন, ‘বাংলাদেশ ফুটবলের বর্তমান যে অবস্থা তা সবই আমার নজরে আছে। এটা নিয়ে আমি কাজ করছি। সমস্যার মূল খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। প্রয়োজনে ফিফা-এএফসির মতামত নেয়া হবে। আশাকরি দুই-তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ফুটবলে যে সমস্যা তা কেটে যাবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন