বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

করোনাকারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতির শিকার হয়েছে। তবে অনেক দেশের তুলনায় এই ক্ষতির পরিমাণ কম। রফতানি ও প্রবাসী আয় মোটামুটি ঠিক থাকা এবং কৃষি উৎপাদন ব্যহত না হওয়া এর কারণ। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের সকল সেক্টরে কর্মপ্রবাহ শুরু হয়েছে। অবশ্য ভয়ও কম নেই। বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনা আঘাত হানতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন। আশংকা সত্য হলে অর্থনীতি আবারো চুপসে যেতে পারে। ওদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া দেশেও পড়ছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ-পদক্ষেপ এর ফলে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে, সেটা সহজেই বুঝা যায়। এর মধ্যেই প্রবাসী ও রফতানি আয় কমতে শুরু করেছে। আগামীতে আরো কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দু’ খাতেই রফতানি হ্রাসের বিষয়টি স্পষ্ট। এই পর্যায়ে আশার জায়গা একমাত্র কৃষি ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। কৃষিতে কৃষকের উদ্যম-উদ্যোগ ও শ্রমই প্রধান নিয়ামক। কৃষক আপন গরজেই কৃষি কাজ করে। সরকারি সহযোগিতা না পেলেও কৃষি ছাড়ে না। সরকারি সহযোগিতা এক্ষেত্রে তেমন একটা পাওয়াও যায় না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষিই আমাদের আশংকিত সংকট ও বিপর্যয় থেকে বড়মাপে সুরক্ষা দিতে পারে। কাজেই, কৃষিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো চাঙ্গা করে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ সমন্বিত ও জোরদার করতে হবে। কৃষক ও গ্রামীণ পর্যায়ে অন্যান্য পণ্যের উৎপাদকরা যাতে তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়, তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
কৃষি এবং তার উপখাতসমূহ গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তিভূমি রচনা করেছে। ধান, পাট, আখ, রবিশস্য, তেলবীজ, শাক-সবজি, তরিতরকারি ইত্যাদি চাষের পাশাপাশি মাছ চাষ, হাঁস-মুরগির খামার, গবাদী পশু পালন, দুগ্ধ খামার প্রভৃতির প্রসার ঘটেছে। আছে নানারকম কুটির শিল্প, যা গ্রামীণ জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের জীবিকার উপায়। বলা বাহুল্য, কৃষি আমাদের সমগ্র জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়াও বিভিন্ন দরকারী পণ্যের যোগান দিচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতি বৃহত্তর জনগণের অর্থনীতি। সেই হিসাবে জাতীয় অর্থনীতির প্রধান অবলম্বন। করোনাকালে বহু মানুষের চাকরি গেছে, বহু মানুষ বিদেশ থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছে, বহু মানুষের আয় কমেছে, বহু মানুষ পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছে। এইসব বেকার, কর্মহীন, অসহায় মানুষকে গ্রামই পরম আদরে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। শহর থেকে, প্রবাস থেকে যারা গ্রামে ফিরেছে তাদের কর্মের পথ দেখিয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। অনেকেই কৃষিতে হাত লাগিয়েছে, অনেকে বৃক্ষ রোপণ, ফল চাষ, সবজি চাষ, মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, গবাদী পশু পালন ইত্যাদিতে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। এতে শুধু তাদের আর্থিক সংস্থান ও উন্নতিই হয়নি, বিভিন্ন পণ্যর উৎপাদনও বেড়েছে, যার সুফল গোটা দেশের মানুষ পেয়েছে। এটা কারো অজানা নেই, খাদ্যোৎপাদনে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মাছ উৎপাদনে বিশ্বে পঞ্চম স্থান, ফল উৎপাদনে দশম স্থান লাভ করেছে। গোশত উৎপাদন, হাঁস-মুরগি উৎপাদন এবং শাক-সবজি ও তরিতরকারি উৎপাদনে রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়েছে। এইসব সাফল্য আরো উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছে, তাদের উৎসাহিত ও উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণীত করছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষিখাতে নিয়োজিত। এটা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত করা সম্ভব, যদি কৃষির বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ নিশ্চত করা যায়।
দেশের অর্ধাংশ মানুষ দরিদ্র। করোনাকারণে তিন কোটির বেশি নতুন দরিদ্র তৈরি হয়েছে। বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি, যার মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দেড় কোটির কম নয়। এইসব দরিদ্র ও বেকার মানুষের স্থায়ী আশ্রয় ও ঠিকানা হতে পারে কৃষিখাত। কৃষি ও তার উপখাতসমূহের সম্ভাবনা অপার। তা কাজে লাগাতে পারলে জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, নাগরিক জীবনমান, পণ্যসংস্থান ও গণক্রয় ক্ষমতা সন্দেহাতীতভাবে বাড়তে পারে, যাতে আমরা বিশেষভাবে সন্তুষ্ট হতে পারি। সম্ভাবনার নিরিখে কৃষিখাতকে সবচেয়ে বেশি সুযোগ ও অধিকার দিতে হবে। কৃষি ও উপখাতসমূহে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকেই এদিকে এগিয়ে আসতে হবে। কৃষিখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা, শ্রমিক ও কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশিক্ষণ উৎপদন বাড়াতে সহায়ক। এইসঙ্গে পণ্য ব্যবস্থাপনা, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। পণ্যাদির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। এই ক্ষেত্রটি অত্যন্ত দুর্বল, বিশৃংখল ও নিয়ন্ত্রণহীন। প্রায়শই উৎপাদকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। এতে তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়, বঞ্চনাবোধে উদ্যম নষ্ট হয়। পণ্যের উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা যায়। উৎপাদকরা ন্যায্যমূল্য পায় না। আর ভোক্তাদের অতিমূল্য গুণতে হয়। মাঝখানে থাকা মধ্যসত্ত্বভোগীরা লাভের কড়ি লুটে নেয়। এ অবস্থার অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন