শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নতুন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন

রেজাউর রহমান সোহাগ ও হাসান সোহেল, ম্যানচেস্টার (যুক্তরাজ্য) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে বিনিয়োগে সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের রয়েছে নানা ধরনের ছাড়। যে কোন সময় মুনাফা তুলে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বৈশ্বিক করোনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি গতিশীল রয়েছে। আমদানি-রফতানি সচল রয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগে মুনাফার সম্ভাবনা বেশি।

গতকাল সোমবার যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে সেন্টার কনভেনশন কমপ্লেক্সের এক্সচেঞ্জ হলে ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পোটেনশিয়াল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিএসইসি'র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে ম্যানচেস্টারের দ্বিতীয় রোড-শো স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ও বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় এ সম্মেলন শুরু হয়। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ম্যানচেস্টার সিটির মেয়র এন্ডো বার্নহাম, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (বিডা) মো. সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহাম্মদ রহমাতুল মুনিম এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন লন্ডনে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ইকবাল আহমেদ, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রহমত পাশা, এলআর গ্লোবাল'র সিওও রিয়াজ ইসলাম, ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রুপান্তরের কাজ চলছে। করোনার আগে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলছিল। কিন্তু পুরো বিশ্বের মতই করোনা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও আঘাত করেছে। তবে প্রধামন্ত্রীর সময় উপযোগী পদক্ষেপ ও গতিশীল নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রয়েছে। দেশের আমদানি-রফতানি, রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, দেশের বিশ্বমানের অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য নানা ধরনের কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়েছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিনিয়োগের এটি সর্বোকৃষ্ট সময়। স্বাধীনতার সময় থেকে বৃটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। স্বাধনীতা যুদ্ধে আমাদের সরাসরি সহায়তা করছে। বৃটেনের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগে নানা সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, এক দশকে বাংলাদেশের আমুল পরিবর্তিন হয়েছে। দেশের অর্থনীতি ও মাথাপিছু আয় এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের অর্থনীতি সর্ম্পকে ধারণা ছিল না সবার কাছে। এমনকি বাংলাদেশ নামটাও তাদের কাছে পরিচিত ছিল না। সবাই বাংলাদেশকে দরিদ্র রাষ্ট্র হিসেবে চিহিৃত করতো। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে ব্রান্ডিং ছিল না। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখন মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারছেন।
তিনি বলেন, বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজম্মের তরুণ প্রবাসীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য যোগাযোগ করেছেন। তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের রয়েছে নানা ধরনের ছাড়। যে কোন সময় মুনাফা তুলে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বৈশ্বিক করোনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি গতিশীল রয়েছে। আমদানি-রফতানি সচল রয়েছে। ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগে মুনাফার সম্ভবনা অনেক বেশি। গতকাল সোমবার ফুটবলের জন্য খ্যাতি পাওয়া শহর যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার সেন্টার কনভেনশন কমপ্লেক্সে ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পোটেনশিয়াল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ট ব্যাংক গ্রুপের চেয়ারম্যান বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রশংসা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রী লেরি সামার্স বাংলাদেশের অভুতপূর্ব প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে পরিবর্তীত হয়েছে। ৫০০ ইউএস ডলার থেকে মাথা পিছু আয় ২৫০০ ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজ ফ্রিল্যান্সারে বিশ্বে তৃতীয়। এখানকার (ম্যানচেস্টারের) যে নতুন প্রজম্ম আছে, তাদেরকে আমরা জানাতে যাচ্ছি নতুন বাংলাদেশে অনেকগুলো সুযোগ আছে। এখানকার নতুন প্রজম্ম আছে তারা কোনা দিন বাংলাদেশও যায়নি। দেশ সম্পর্কে জানেও না। তাদেরকে আমরা আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ভবিষ্যতের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড পিএলসি গ্রুপের চেয়ারম্যান জোসে ভিয়ালস বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী লেরি সামার্স বাংলাদেশের অভুতপূর্ব প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে পরিবর্তন করেছে। আর তাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নতুন বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল ৫০০ ইউএস ডলার। সেখান থেকে মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলার ছাড়িয়েছে।
ম্যানচেস্টার সিটির মেয়র এন্ডো বার্নহাম বলনে, বাংলাদেশের ভালো বন্ধু। ২০১৯ সালে প্রথম বাংলাদেশ যাই। সিলেট বিনিয়োগের কথা চিন্তা করছি। আমরা বাংলাদেশের বিনিয়োগ শুরু করবো। বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী এখানে ব্যবসা করেন। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, গত এক দশকে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এমনকি করোনার সময়েও আমাদের গ্রোথ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সব বেশি হয়েছে। দেশের পদ্মা সেতু, মেট্রারেলসহ বড় বড় প্রকল্প কাজ চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে মেধাবীরা নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে স্টার্ট আপস কোম্পানি পরিচালনা করছে। ফলে পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতর বড় অবদান রাখবে। দেশের অর্থনীতের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন পাবেন। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করুন।
বন্ড এখন সারাবিশ্বে জনপ্রিয় হচ্ছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ট্রেজারি, সুকুক এবং গ্রীন বন্ডসহ নতুন নতুন বন্ড বেশ কিছু বন্ড আনা হচ্ছে। এগুলোতে বিনিয়োগ করলে অনেক অনেক বেশি রিটার্ন পাবেন। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ অনুকুলে ও ব্যবসাবান্ধব সরকার রয়েছে বলে জানান তিনি। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যবাসীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান করেন তিনি। এতে উভয় পক্ষ লাভবান হবেন বলে জানান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহাম্মদ রহমাতুল মুনিম বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানান সুবিধা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১৮ খাতে কর অবকাশ রয়েছে। শিল্প ও প্রতিষ্ঠান স্থাপনে কর সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখন উপযুক্ত সময়। যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুরোধ করেন।
এছাড়াও বক্তরা জানান, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের উত্তম জায়গা। বিশেষ করে জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, লাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রো প্রসেসিং, ব্লু-ইকোনোমি, ট্যুরিজম, হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় সেক্টরে সুবিধা নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ। ব্রিটিশ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য এসব সেক্টর বা এর বাইরে যে কোনো সেক্টর বেছে নিতে পারেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
কৌশিক সরকার ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৫৩ এএম says : 0
বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের রয়েছে নানা ধরনের ছাড়।
Total Reply(0)
বিদ্যুৎ মিয়া ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৫৫ এএম says : 0
এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সেরা বিনিয়োগ গন্তব্য
Total Reply(0)
গোলাম কাদের ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৫৬ এএম says : 0
বাংলাদেশে বিনিয়োগে মুনাফার সম্ভবনা অনেক বেশি।
Total Reply(0)
চৌধুরী হারুন আর রশিদ ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৫৯ এএম says : 0
সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল।
Total Reply(0)
গিয়াসউদ্দীন একরাম ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৮:৫৯ এএম says : 0
বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি ৭ কোটি। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটিই বয়সে তরুণ। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
Total Reply(0)
হেদায়েতুর রহমান ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৯:০০ এএম says : 0
দেশের অর্থনীতি নিয়ে এখন আমরা খুব আশাবাদী
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৯:০১ এএম says : 0
বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের প্রচুর লাভ দেয়ার চেষ্টা করে। এর জন্য বাংলাদেশ পুঁজিবাজার অনেক ভালো নিয়ম করেছে। যার ফলাফল পুঁজিবাজারে ইতোমধ্যে দেখা গেছে।
Total Reply(0)
ডালিম ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৯:০১ এএম says : 0
হংকংয়ের ফ্রন্টিয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চলতি বছরের তৃতীয়প্রান্তিকে বাংলাদেশ এশিয়ার সেরা পুঁজিবাজারে উঠে এসেছে।
Total Reply(0)
উবায়দুল্লাহ ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৯:০২ এএম says : 0
বাংলাদেশের পলিসিসহ সব কিছু ব্যবসাবান্ধব। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তাসহ সবার চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসছে। তারা সবাই ব্যবসায়ীদের ও ব্যবসায়ের পক্ষে কাজ করছেন। এটি ব্যবসায়ের জন্য একটি ভালো দিক।
Total Reply(0)
Yousuf ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৯:০৪ এএম says : 0
Investors are bracing for new hopes after overcoming the liquidity and confidence crisis. The market has been on the rise for the last few months.
Total Reply(0)
Ehsan Bappy ৯ নভেম্বর, ২০২১, ৯:০৪ এএম says : 0
After a long time, the confidence of investors in the country's capital market has returned with the various steps taken by the regulator.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন