শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

চাপটাই যে নিতে পারলো না যুবারা!

প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে কামনা করেছে মেহেদী হাসান মিরাজরা, কোয়ার্টার ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে সেই কামনার কথাই মিডিয়াকে জানিয়েছেন মিডল অর্ডার জাকির। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে হেড টু হেড এ ১২-৫ এ এগিয়ে থাকা কিংবা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অতীতে ৩ ম্যাচের ২টিতে জয়টাও এই প্রতিপক্ষ সেমিতে ছিল কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ যুবাদের। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে একমাস আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইট ওয়াশ করার টাটকা সুখ স্মৃতিও ছিল সঙ্গে। ওই ৩ ম্যাচের প্রথম ২টিতে জয়ের ব্যবধান ৮ উইকেট এবং ১৭১ রানের! অথচ কি উল্টো চিত্রই না দেখেছে বিশ্বÑ স্পিন বিষে নীল হওয়া সেই উইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সে কি ইউ টার্ন! কোচ মিজানুর রহমান বাবুলের প্রধান অস্ত্র বাংলাদেশের স্পিন ছড়ায়নি আতঙ্ক। উল্টো ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস অ্যাটাকে সর্বনাশ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের।
কাঁটায় কাঁটায় এক মাস আগে যে দলটিকে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে হারিয়েছে বাংলাদেশ যুবারা ৮ উইকেটে, সেই চেনা প্রতিপক্ষের কাছেই কি না বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে হেরে যেতে হলো ৩ উইকেটে! প্রাক বিশ্বকাপ সিরিজে ৩-০তে জয়ে ফেভারিট হিসেবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মুখোমুখি হয়ে সেমিতে এসেই আটকে যেতে হলো বাংলাদেশ যুবাদের। যে দলটিকে ঘিরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন, গত ২ বছরে হোম এন্ড অ্যাওয়ে মিলে ৬টি আন্তর্জাতিক সিরিজে ৩০টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া দলটি চেনা ভেন্যুতে আরো দুর্বার দেখাবে, দর্শকের সমর্থনে আরো বেশি উজ্জীবিত দলকে দেখবে বিশ্ব। অথচ সেমিতে পরিপক্ব দলটিকেই যে দেখতে পারলো না দর্শক! উল্টো হোমের সুবিধা, হাজার দশেক দর্শকের সমর্থন যে হিতে বিপরীত হলো। কোয়ার্টার ফাইনালের হার্ডল এই প্রথম পেরিয়ে সেমিতে উঠে ইতিহাস রচনার পর রেকর্ডকে আর উঁচুতে নিয়ে যাওয়া হলো না। প্রত্যাশার চাপের সঙ্গে দর্শকের চাপ, এটাই নাকি কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কাছে সেমিফাইনালে হেরে সেই সরল স্বীকারোক্তি অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের কণ্ঠেÑ ‘আমরা যতই বলি প্রেসার নিব না, কিন্তু চাপ সব সময়ই মাঠে থাকে। এত দর্শকের সামনে আমরা কেউ কোনো দিন খেলিনি। এত দর্শক, স্বাভাবিকভাবেই চাপের মুখে ফেলে দিয়েছিল আমাদেরকে। সেমিফাইনাল ম্যাচ জিততে হবে সেই চাপ ছিল। আমাদের বয়স এখনো অল্প। এসব চাপ এখনো সামলে উঠার বয়স হয়নি। তাছাড়া এমন পরিস্থিতিতে আমরা অভ্যস্ত ও নই। এরকম প্রেসার সুচিয়েশনে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে, তার জন্য মানসিকভাবে কতোটা শক্ত হতে হবে সেটা শিখছি।’
চেজিংয়ে কতোটা পারদর্শী, কোয়ার্টার ফাইনালে ১০ ওভার হাতে রেখে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়ে তা জানিয়ে দিয়েছে উইন্ডিজ। সেই দলটির বিপক্ষে টসে জিতে কেন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। চলমান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেরা পেস অ্যাটাকের দাবিদার উইন্ডিজ বোলারদের গতির কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হলো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে। ২২৬ এ থেমে যাওয়ার পরও এই সিদ্ধান্তকে বুমেরাং মানতে নারাজ মিরাজÑ ‘উইকেট একটু শ্লো মনে হচ্ছিল। আগে ব্যাটিং করে ২৪০ থেকে ২৫০ রান করতে পারলে তা চেজ করা যে কোন দলের পক্ষে কঠিন, সে বিশ্বাস থেকেই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাছাড়া চাপের মুখে চেজ সেভাবে করতে পারিনি অতীতে, এটাও মাথায় ছিল। তাই ব্যাটিংয়ের পক্ষেই মত দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ইনিংসে ২০টা রান কম হয়েছে। আমি আর সাইফউদ্দিন আউট হওয়াতে শেষ ৫ ওভারে কম রান হয়েছে।’
ইনিংস ক্যারি করে, সাইফুদ্দিনের সঙ্গে ৮৫ রানের পার্টনারশিপকে বড় করতে না পারায় আক্ষেপটা করতে হচ্ছে মিরাজকে। ৪৬তম ওভারে কেমো পল এর পর পর ২টি ডেলিভারীতে নিজে এবং সাইফুদ্দিন ফিরে যাওয়ায় প্রত্যাশিত স্কোরের পথে হয়েছে অন্তরায়। সে আক্ষেপের যন্ত্রণায় ভুগছেন মিরাজÑ ‘আমি যদি ফিনিস করতে পারতাম তাহলে আড়াইশ স্কোর হতো। ৫ ওভার বাকি ছিল, ৬ উইকেট হাতে ছিল। ঝুঁকি নিতেই হবে। একটা দুইটা ঝুঁকিপূর্ণ শট নিয়ে যদি চার-ছয় হয়ে যায় তাহলে পরে আমার স্বাভাবিক খেলা খেলা যাব, এটাই ছিল সে সময়ের পরিকল্পনা। আমি আউট হওয়ার পরের বলেই সাইফউদ্দিন পরের বলেই আউট হয়েছে। এখানেই আমরা পিছিয়ে গেছি। ২০টা রান কম হয়ে গেছে।’
পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ ফিল্ডিং মøান করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল গতকাল। সেমিফাইনালে বোলিং চেঞ্জেও গলদ ধরা পড়েছে। পেস বোলার মেহেদী হাসান রানার ৪ ওভার হাতে রেখে দিয়ে সেখানে ৪৬তম ওভারে অকেশনাল স্পিনার নাজমুল হোসেন শান্ত’র হাতে তুলে দিয়েছেন বল মিরাজ। যখন ৩০ বলে প্রতিপক্ষের দরকার ২০, তখন কেন এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা? শান্ত’র ওই ওভারে ১০ রান খরচাই মূলত: ম্যাচ জয়ের পথ সুগম করেছে উইন্ডিজ যুবাদের। তবে পরিস্থিতির মুখে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিরাজÑ ‘শান্তকে আনা হয়েছে ও ডট বল করতে পারে। জোরে বল করতে পারে। দুই স্পিনার সাইদ সরকার ও মোসাব্বেক ভালো করেনি। বোলিংয়ে ২ ওভার শর্ট ছিল। তাছাড়া ওই সময়ে রানের থেকে উইকেট দরকার ছিল বেশি।’
গত মাসে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুবাদের পর্যুদস্ত করেছে বাংলাদেশ যুবারা স্পিনে। অথচ সেমিতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সেই স্পিন অস্ত্রকে ভোতা করে দিয়েছে ক্যারিবিয় যুবারা। মাত্র এক মাসের মধ্যে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এতোটা পরিবর্তন দেখে বিস্মিত মিরাজওÑ ‘ওরা যখন প্রথম বাংলাদেশে আসে তখন স্পিন খেলতে পারত না। আস্তে আস্তে সেই দলটিই কন্ডিশনের সঙ্গে পুরো মানিয়ে নিয়েছে। আমাদের স্পিনারদের খুব ভালোমত খেলতে পেরেছে এই ম্যাচে। ওদের দুই ওপেনার অ্যাটাকিং খেলছে ওটা কাজে দিয়েছে। ওটা ওদের চাপ কমিয়ে দিয়েছে।’
শুরু থেকে ম্যাচে এগিয়ে থাকা উইন্ডিজ যুবাদের বিপক্ষে নাকি ৪৮তম ওভার পর্যন্ত জয়ের ব্যাপারে বিশ্বাস ছিল মিরাজেরÑ ‘শুরু থেকেই বিশ্বাস ছিল যে আমরা ম্যাচটি জিতব। এমনকি ১৬ বলে ১০ রানে ৩ উইকেট লাগত তখনও বিশ্বাস ছিল আমরা পারব। কিন্তু শেষ দিকে (৪৯তম ওভার) যখন চার হয়ে গেছে তখনই মনে হল যে আমরা ম্যাচটি হেরে গেছি।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন