শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পর্যটক টানতে নতুনভাবে প্রস্তুত হচ্ছে কক্সবাজার

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

নিজ দেশ থেকে সরাসরি ফ্লাইটে এসে সমুদ্র ছুঁয়ে কক্সবাজার নামবেন একজন বিদেশি পর্যটক। দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে কক্সবাজার থেকেই আবার ফিরে যাবেন নিজ দেশে। এমনভাবেই কক্সবাজারকে ‘সিঙ্গেল টুরিস্ট স্পট’ করতে চাইছে সরকার।

বালি দ্বীপকে দিয়ে যেভাবে ইন্দোনেশিয়াকে চিনেছে পৃথিবী, একইভাবে কক্সবাজারকে দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে নতুন করে পরিচিত হতে চায় বাংলাদেশ। আশি ও নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপের পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য ছিল কক্সবাজার। তবে দীর্ঘ দুই দশক ধরে নানা কারণে বাংলাদেশে আসছেন না তারা। সেসব বিদেশি পর্যটক ফেরাতে চেষ্টা করছে সরকার।

ট্যুরিজম বোর্ড বলছে, পরিকল্পনা মাফিক চললে আবারও আগের মতো দেখা যাবে বিদেশি পর্যটকদের। তবে দেশি পর্যটক ও ট্যুর অপারেটররা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকার পর্যটকরা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা সমুদ্র চায় না। এগুলোর পাশাপাশি তারা সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা, খাবার, প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার বিষয়টিও বিবেচনা করে। এক কথায় তাদের দরকার একটি কম্বো সার্ভিস একের মধ্যে সব। সেটি বিবেচনা করলে বিদেশি পর্যটকদের জন্য এখনও প্রস্তুত হয়নি কক্সবাজার।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের দিকে বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ৩৯ হাজার বিদেশি পর্যটক আসে। সে সময় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রতিবছর পাঁচ থেকে সাত লাখ বিদেশি পর্যটক আনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও বাড়াতে এটি সম্ভব হয়নি। ট্যুরিজম বোর্ড বলছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক এসেছিল তিন লাখ ২৩ হাজার। বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটররা বলছেন, কাগজেকলমে তিন লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক এলেও তাদের সিংহভাগই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে বিভিন্ন এনজিওর পক্ষ হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড বলছে, বাংলাদেশে যেসকল বিদেশি পর্যটক আসছেন তাদের মধ্যে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসছেন মাত্র পাঁচ শতাংশ। বাকিরা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প, উন্নয়ন প্রকল্প ও এনজিওর কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

দ্য গ্লোবাল ইকোনমির তথ্য বলছে, বাংলাদেশে যখন বিদেশি পর্যটকের খরা; সে সময় ২০১৯ সালে প্রতিবেশি দেশ ভারত ঘুরে গেছেন এক কোটি ৮০ লাখ, মিয়ানমার ভ্রমণ করেছেন ৪৩ লাখ পর্যটক। বাংলাদেশ থেকে অর্থনৈতিক সূচকে পিছিয়ে থাকা নেপালের মতো উন্নয়নশীল দেশে একই বছর ভ্রমণ করেছেন ১২ লাখ, মালদ্বীপে ১৭ লাখ, পাকিস্তানে ৯ লাখ ৬৬ হাজার বিদেশি পর্যটক। বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটর ও দেশি পর্যটকরা বলছেন, দেশে হাতেগোনা যেসব বিদেশি পর্যটক আসেন তাদের প্রধান গন্তব্য থাকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।

দক্ষিণ এশিয়ার যতগুলো দেশে সি-বিচ রয়েছে সেগুলোর চেয়ে আয়তন ও ঢেউয়ের উচ্চতার মাপ হিসেব করলে কক্সবাজার সবচেয়ে এগিয়ে। তবে এখানকার পরিবেশ এখনও বিদেশি পর্যটকদের অনুকূলে নয়। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পর্যটন করপোরেশন বলছে, থাইল্যান্ডের পাতায়া ও ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের আদলে নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে কক্সবাজার। এ দুই দেশে বিদেশি পর্যটকদের জন্য আলাদা বিচ, নাইট ক্লাব, ক্যাসিনো, বিচসাইড বার, ম্যাসাজ ও স্পা সেন্টার, বিচে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার ও গানবাজনার আয়োজনসহ সেখানে রাত কাটানোর নানা ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিচগুলোতে রাতে বেঞ্চে শুয়ে সমুদ্রের ঢেউ আর চাঁদ দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকে না পর্যটকদের। তাদের যে চাওয়া তার অনেক কিছুই বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে না গেলেও অন্তত বিদেশিদের জন্য পৃথকভাবে আয়োজনগুলো করা যেতে পারে।

দেশি-বিদেশি সবার জন্য স্বপ্নের কক্সবাজার গড়তে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (কউক) গঠন করেছে সরকার। কক্সবাজারকে ঢেলে সাজাতে কউক হাতে নিয়েছে মাস্টার প্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) প্রণয়নের কাজ। মাস্টার প্ল্যানে বিদেশি পর্যটকদের জন্য থাকবে পৃথক ফরেন ট্যুরিস্ট জোন। তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের মেরিন বিচ। বিচের পাশেই থাকবে অ্যাকুরিয়াম। বিচ অ্যাক্টিভিটি, সার্ফিং, প্যারাসিলিংয়ের জন্য থাকবে পৃথক ব্যবস্থা। থাকবে সার্ফিং ট্রেনিং সেন্টার। পাশাপাশি তাদের পছন্দের খেলা টেনিস ও গলফের জন্য কলাতলী, হিমছড়ি ও নিকটবর্তী পাহাড়ি এলাকায় গলফ-টেনিস কোর্ট নির্মাণ করা হবে। বিদেশি পর্যটকদের বিনোদনের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত হবে রিক্রিয়েশন ক্লাব। ক্লাবে রাতভর বিনোদনের সব ব্যবস্থাই থাকবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল বিভাগের সদস্য লে. কর্নেল মোহাম্মদ আনোয়ার-উল ইসলাম বলেন, ‘মাস্টার প্যান অনুযায়ী ফরেন টুরিস্ট জোন আলাদা হবে। এছাড়া আলাদা জোন করে নতুন হোটেল, রিসোর্ট, রেস্ট হাউজ, হাসপাতাল ও হাউজিং গড়ে তোলা হবে। তারা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে কক্সবাজারে ভ্রমণ করতে পারবেন। আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা বিদেশিদের জন্য কাঙ্খিত সেই কক্সবাজার গড়ে তুলতে পারব। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাবেদ আহমেদ বলেন, আমরা দেখেছি থাইল্যান্ডের ফুকেট দ্বীপে অনেক বিদেশি ট্যুরিস্ট যান। আমরাও বিদেশিদের জন্য আমাদের সোনাদিয়া ও সাবরাংকে প্রস্তুত করছি। আমরা যদি কক্সবাজারের এ দুই জায়গায় ফুকেটের মতো সুবিধা দিতে পারি, তাহলে আমাদের দেশে বিদেশি ট্যুরিস্টদের আগমন বাড়বে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্র মতে, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে পর্যটন শিল্প গড়তে মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ চলছে। এখানে ঘিঞ্জি পরিবেশ ও ভিড় থাকবে না। পাশাপাশি এ অঞ্চলের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্য ঠিক রেখে পাঁচ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। ইতোমধ্যে দ্বীপে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের জন্য পরিবেশবান্ধব মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দ্বীপের ৩০ শতাংশ এলাকায় পার্ক হবে। বাকি জমি সবুজ ও সংরক্ষিত থাকবে।

প্রকল্পের আওতায় ১০টি হোটেল-মোটেল, নির্মাণ হবে। থাকবে শিশুপার্ক, মসজিদ, জাদুঘর ও কমিউনিটি সেন্টার। এছাড়া সেখানে শৈবাল ও মুক্তাচাষসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ৩০ একর জমিতে হবে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ২৪ ঘণ্টা শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর হলিডে উইংকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। সেখানে বাংলাদেশের পর্যটনের ব্র্যান্ডিং করতে হবে। তাদের সঙ্গে দেশি এয়ারলাইন্স হিসেবে আমরাও সাপোর্ট দিতে পারি।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, কক্সবাজারের উন্নয়নে আমরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করছি। যাতে একজন বিদেশি পর্যটক নিজ দেশ থেকে সরাসরি কক্সবাজারে এসে নামতে পারেন। এছাড়া সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে হচ্ছে বিমানবন্দরের দৃষ্টিনন্দন রানওয়ে। পাশাপাশি তাদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আমরা বিশ্ববাসীকে নতুন ও নিরাপদ একটি কক্সবাজার উপহার দেব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Sheikh Abid Siddique ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
ধূসর-সাদা পানির বং নীল করা হয়েছে মনে হচ্ছে.!
Total Reply(0)
Abdullah Al Harun ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
Tourist how they will come here. Tickets frice is very high. In the world's number 1. Most of the country there given a fackge and very chip. Turkey, ajrabijan, etc 700dh/900dh. Can you imagine pakistani airlines tickets is 250dh from rak to islamabad, peshwar. Package is 650dh return. Bangladesh they will never give. They will say fuel frice very high we can't give. Pakistan, turkey what they put water!
Total Reply(0)
Aziz AL Ayan ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
নতুন করে যতই আকর্ষণ করো না কোনো লাভ হবেনা! বিয়ে করার আগে আর কক্সবাজার যাচ্ছি না!! বউ নিয়ে যাব যখন যায়
Total Reply(0)
Md.Rashadujaman ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
Very good initiative
Total Reply(0)
asad ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১১:০৭ এএম says : 0
good decision for local and international traveler
Total Reply(0)
মনিরুজ্জামান ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১১:৪৭ এএম says : 0
বাংলাদেশের পর্যটনের ব্র্যান্ডিং করতে হবে।
Total Reply(0)
টুটুল ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১১:৫৩ এএম says : 0
দেশে যেসব বিদেশি পর্যটক আসেন তাদের প্রধান গন্তব্য থাকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।
Total Reply(0)
...হাসিনা ১৯ নভেম্বর, ২০২১, ৯:৫০ এএম says : 0
একদম ই ভালো হচ্ছেনা এসব। কারণ পশ্ছিমা স্টাইলে হচ্ছে সবকিছু। ইসলামি কোনো বিধিবিধান মানেনা কেউ। বেশিরভাগ মেয়েরাই সর্ট কাপড় পরিধান করে।সবাই জাহান্নামের দিকে এগোচ্ছে এসব প্রগতির কারণে।
Total Reply(0)
নিশান ২০ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৪২ পিএম says : 0
কক্সবাজার বিচ ও শহর কে সবার আগে ময়লা আবর্জনা মুক্ত করতে হবে।একটু ময়লাও যেন কোথাও পড়ে না থাকে।
Total Reply(0)
Abdul rashid ২০ নভেম্বর, ২০২১, ৮:০৫ পিএম says : 0
বিদেশী পর্যটক আসতে হলে দুবাই, মালয়েশিয়া, কায়রো, মরোক্ক যা করেছে অনুসরন করতে হবে।......
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন