বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১২৮/৭
পাকিস্তান : ২০ ওভারে ১৩২/৬
ফল : পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী
দীর্ঘ ৬১৮ দিন পর মাঠে ফিরল প্রাণ। ৫০ শতাংশ হলেও ভক্ত-সমর্থকদের নিবেদনে ঘাটতি ছিল না এতটুকু। নিজেদের কণ্ঠ দ্বিগুণ করে অর্ধেক গ্যালারিকে তারা দিয়েছিলেন পূর্ণতা। তবে আরো একবার নিবেদনে ঘাটতি দেখা গেল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের। আর তাতে খুব কাছে গিয়েও জয়বঞ্চিত হলো বাংলাদেশ। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি ৪ উইকেটে হেরে গেছে রাসেল ডমিঙ্গের শিষ্যরা। আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে বাংলাদেশের দেয়া ১২৮ রান ৪ বল হাতে রেখে পাকিস্তান টপকে যায় ৬ উইকেট হারিয়েই। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল পাকিস্তান। একই ভেন্যুতে একই সময় হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি।
তবে ছোট ম্যাচে ঠিকই ছিল বড় রোমাঞ্চের রসদ। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৪৬ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। হাতে ৫ উইকেট। খুশদিল শাহ ও শাদাব খান তেমন ডাকাবুকো ব্যাটসম্যান না হলেও বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটি ছিনিয়ে নিল তারাই। ¯্রফে ১৫ বলে তাদের ৩৬ রানের জুটি গড়ে দেয় ব্যবধান। পাকিস্তান ১৮ বলে ৩২ রানের কঠিন সমীকরণে পিছিয়ে থাকতে ১৮তম ওভারে ১৫ রান দেন মুস্তাফিজুর রহমান। পরের ওভারে শরীফুল ইসলামও দেন ১৫ রান। ব্যাটসম্যানরা ভালো বল মারলে তবু কথা ছিল, দুই পেসারই নিজেদের শেষ ওভারে বাজে লাইন-লেংথে বল করেন। তার মাশুল গুণে হারল বাংলাদেশ। ছক্কায় ম্যাচ শেষ করা শাদাব করেন ১০ বলে ২১, নওয়াজ করেন ৮ বলে ১৮। দুই জনেরই ইনিংসে দুই ছক্কার পাশে একটি করে চার। বাংলাদেশের হয়ে ৩১ রানে ২ উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। শুরুটা ভালো হলেও শেষদিকে খরুচে মুস্তাফিজ ২৬ রানে নেন ১ উইকেট। একই পরিণতি শরীফুলে, ৩১ রানে শিকার ঐ ১টিই।
হারলেও অন্তত একটি সান্তনা পেতে পারে বাংলাদেশ। লড়াই করার মানসিকতা যে ফিরে পেয়েছে ক্রিকেটাররা। কারণ বিশ্বকাপে যে ন্য‚নতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাটাও করতে পারেনি তারা। অথচ টানা দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর হয়েই বিশ্ব মঞ্চে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেখানে গিয়েই যেন চুপসে যায় টাইগাররা। দুর্বল স্কটল্যান্ডের কাছে হারে শুরু। এরপর সুপার টুয়েলভে তো টানা হার। পাকিস্তানের বিপক্ষে মিশনটা ছিল তাই নিজেদের ফিরে পাওয়ার। চেনা ছন্দ খুঁজে নেওয়ার। আর সে কাজটা কিছুটা হলেও করতে পেরেছে বাংলাদেশ। লড়াই করে হারে টাইগাররা। যদিও বরাবরের মতো এদিনও বিবর্ণ সুচনাই হয় তাদের।
এদিন শুরুর ধাক্কা সামলে পাকিস্তানকে জয়ের ভিতটা গড়ে দেন ফখর জামান ও খুশদিল শাহ। তবে ১৭তম ওভারেই এ দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ তিন ওভারে তখনও পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৩২ রান। কিন্তু লেজ বের করে আনা দলটির আর বিপদের কারণ হতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। উল্টো ৪ বল থাকতেই জিতে যায় নাওয়াজ ও শাদাবের হার না মানা ৩৬ রানের জুটিতে।
তবে সাদামাটা পুঁজি নিয়ে শুরুতে উইকেট তুলে দারুণভাবেই শুরু করেছিল টাইগার বোলাররা। পুরো বছর জুড়ে অসাধারণ ক্রিকেট খেলতে থাকা পাকিস্তানি দুই ওপেনার অধিনায়ক বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান ছিল বাংলাদেশের মুল বাধা। ইনফর্মে দুই ব্যাটার সাবধানী শুরুতেও নিজেদের রক্ষা করতে পারেননি মুস্তাফিজ ও তাসকিনের দারুণ দুটি ডেলিভারিতে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ব্রেক থ্রু এনে দেন মুস্তাফিজ। ব্যাট-প্যাডের ফাঁকা জায়গা দিয়ে সরাসরি বোল্ড করে এ বছরে হাজার রান করা রিজওয়ানকে ফেরান তিনি। বাবরকে বাড়তে দেননি তাসকিন। পরের ওভারে তাসকিনের বলে ইনসাইড এজ হয়ে যান পাকিস্তানি অধিনায়ক।
দুই পেসারের বোলিংয়ে উজ্জীবিত হয়ে শেখ মেহেদী পরের ওভারে হায়দার আলীকে রানের খাতা খোলার আগেই ফেলেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। পাওয়ার প্লের শেষ বলে বিপদ ডেকে আনেন অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক। ব্যাট ফেলার আলসেমিতে রানআউট হয়ে যান তিনি! তবে দারুণ তৎপরতা দেখিয়েছেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। মালিকের মৃদুমন্দ হাঁটা দেখেই তড়িৎ থ্রোতে স্টাম্প ভাঙেন তিনি। এরপর ফখর জামানকে নিয়ে দলের হাল ধরেন খুলদিল শাহ। গড়েন ৫৬ রানের জুটি। তাতেই জয়ের পথটা তৈরি হয় পাকিস্তানের। এ জুটি ভাঙেন তাসকিন। ১৫তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে ফখরকে উইকেটের পেছনে সোহানের ক্যাচে পরিণত করেন এ পেসার। এরপর সোহানের আরও একটি ক্যাচে খুলদিলকে বিদায় করেন শরিফুল ইসলাম। তাতে লড়াই ফের জমে ওঠে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করে করেন ফখর ও খুশদিল দুই ব্যাটারই। অপরাজিত থাকা দুই ব্যাটারের রান তুলে নেওয়ার ধরণও ছিল প্রায় একই। ৩৫ বলে ৩টি চার ও ১টি চারে এ রান করেন খুশদিল। আর ৩৬ বলে ৪টি চারে নিজের ইনিংস সাজান ফখর। ১০ বলে ২১ রানের ক্যামিও খেলেন শাদাব। আর ৮ বলে ১৮ রানের ক্যামিওটি আসে নাওয়াজের ব্যাট থেকে। দুইজনই ১টি করে চার ও ২টি করে ছক্কা মারেন।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার মুলে ছিলেন ব্যাটাররা। বিশেষ করে টপ অর্ডারদের দায়টা ছিল বেশি। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাই টপ অর্ডারে এলো আমূল পরিবর্তন। মোহাম্মদ নাঈম শেখ ছাড়া বাকি দুটি জায়গাতেই বদল। কিন্তু দলের ভাগ্যের আর বদল কলো কোথায়? টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫ রান তুলতেই সাজঘরে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার। দুই ওপেনার নাঈম ও অভিষিক্ত সাইফ হাসান আউট হয়েছেন জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা দিয়ে। একজন ধরা পড়েন উইকেটরক্ষকের হাতে, অপরজন সিøপে দাঁড়ানো ফখর জামানের। আর নাজমুল হোসেন শান্ত টপএজ হয়ে তুলে দিলেন আকাশে। তাতে শুরুতেই চাপে বাংলাদেশ।
মিডল অর্ডার ব্যাটাররা অবশ্য দলের হাল ধরে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা চালিয়েছেন। এক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ছাড়া সেট হয়েছিলেন বাকি তিন ব্যাটারই। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ফলে বাংলাদেশের পুঁজিটা বড় হয়নি। শাদাব খানের গুগলি বুঝতে না পেরে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন আফিফ হোসেন। আর নুরুল হাসান আউট হয়েছেন ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে। সাত নম্বর ব্যাটার শেখ মেহেদী হাসান অবশ্য শেষ পর্যন্ত খেলেছেন। তাতে অন্তত একশ রানের কোটা পার করতে পারে বাংলাদেশ।
নিজেদের ইনিংসের অর্ধেক শেষ হতে (১০ ওভারে) বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে মাত্র ৪০ রান। তবে একাদশ ওভারের শুরুতেই পাল্টা আঘাত হানেন আফিফ। মোহাম্মদ নাওয়াজের প্রথম দুই বলেই মারেন দুটি দারুণ ছক্কা। আফিফ আউট হতে সোহানও দুটি দারুণ ছক্কা হাঁকান। তবে বাংলাদেশের পুঁজিটা সম্মানজনক স্থানে আনার মূল কৃতিত্ব শেখ মেহেদীর। ২০ বলে ৩০ রানের দারুণ ক্যামিও খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। তবে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন আফিফ। ৩৪ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় এ রান করেন। ২২ বলে ২টি ছক্কায় ২৮ রান করেন সোহান।
পাকিস্তানের পক্ষে ২২ রানের খরচায় ৩টি উইকেট পান হাসান আলী। ২৪ রানের বিনিময়ে ২টি শিকার মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন