মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যার ওয়াকওয়ে দখল করে বালু-পাথরের অবৈধ জমজমাট ব্যবসা

প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নষ্ট করা হয়েছে সবুজ বেষ্টনীর অসংখ্য গাছ
তরিকুল ইসলাম নয়ন, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : সেই পুরনো চেহারায় ফিরে গেছে শীতলক্ষ্যা নদীর কাঁচপুর এলাকা। কাঁচপুর সেতুর দু’পাশ (নদীর পশ্চিম তীর) দখল করে বছরের পর বছর চলেছিল বালু ও পাথর ব্যবসা। এখন চলছে কয়েক কোটি টাকায় নির্মিত ওয়াকওয়ে দখল করে ওই ব্যবসা। বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালকের কাছ থেকে মাসিক ইজারার ভিত্তিতে চলছে ওই অবৈধ ব্যবসা। একারণে শীতলক্ষ্যা নদী দখল ও দূষণ মুক্ত রাখতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেও তা এখন বিফলে যাচ্ছে। মাসিক ভিত্তিতে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে যারা বালু ও পাথর ব্যবসা করছেন তারা তাদের ব্যবসার স্বার্থে ওয়াকওয়ের অনেক কাঠামো ভেঙ্গে ফেলেছে। বালু ও পাথর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উঠানোর জন্য ওয়াকওয়ের দেয়াল ভেঙ্গে জেটি ও কাঠের সিঁড়ি নির্মাণ করে মালামাল লোড-আনলোড করছে এ ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে বিআইডব্লিউর নিজস্ব জায়গায় লাগানো গাছগুলো তুলে ঐ স্থানে বালু ও পাথর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে করে ওয়াকওয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এতে করে সেই আগের মতই নষ্ঠ হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর পরিবেশ। বালু ও পাথরের নুড়ি শীতলক্ষ্যা নদীতে পড়ে ভরাট হচ্ছে এর তলদেশ। নদীর নাব্যতা কমে আসার সাথে সাথে সরু হয়ে আসছে শীতলক্ষ্যা। এক সময় হয়তো শীতলক্ষ্যার গতিপথও পরিবর্তন হতে পারে।
২০০৯ সালের জুন মাসে হাইকোর্ট শীতলক্ষ্যা নদীসহ রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী ৪টি নদী রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএকে নির্দেশ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক বছরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর রক্ষায় নারায়ণগঞ্জ অংশে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৭ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে (হাট-চলার জন্য) নির্মাণ ও বনায়ন করা হয়। নদী পথে মালামাল উঠানো নামানোর জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের আটি এলাকায় নদীর তীরে একটি ল্যান্ডিং স্টেশনও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ওই নির্ধারিত স্থান ছাড়াও গত কয়েক মাস ধরে ওয়াকওয়ের কাঁচপুর সেতুর উত্তর পার্শ্বে বালু ও পাথর ব্যবসার জন্য মৌখিকভাবে কমিশনভিত্তিক অনুমতি দেয়া হয়েছে। ওয়াকওয়ের রেলিং ভেঙ্গে ও ওয়াক ওয়ে দখল করে সেখানে এখন বালু ও পাথর ব্যবসা চালানো হচ্ছে।
দখলদার ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ-এর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক কে এম আরিফুর রহমান প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ২০ বর্গফুট করে ওয়াকওয়ের পাশের সরকারী জমি ভাড়া দিয়েছেন। এরকম প্রায় ৫০ জন বালু ও পাথর ব্যবসায়ী ভাড়া নিয়ে ওয়াকওয়ে ভেঙ্গে মালামাল উঠা-নামা করছেন। পাশাপাশি তারা নিজেদের প্রয়োজনমত রাস্তা তৈরি করে বনায়নের জন্য নির্ধারিত খালি জায়গায় পাথর ও বালু রেখে সেখান থেকে সেগুলো বিক্রি করছে। এসকল ব্যবসায়ীরা বনায়নের অনেক গাছ ইতোমধ্যে তুলে ফেলে দিয়েছে। কাঁচপুর সেতুর উত্তরে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় কাঠের তৈরী প্রায় ৫০টি ঘাট ও অন্তত অর্ধশতাধিক টি পাথর বালুর গদি গড়ে উঠেছে। জসিম নামে এক ব্যবসায়ী জানায়, নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম-পরিচালক কে এম আরিফুল হাসানকে মাসিক হারে টাকা দিয়ে আমরা ব্যবসা করছি। এদিকে শিমরাইলের বেঙ্গল ইলেকট্রিক ইড্রাস্ট্রিজের দক্ষিণ সীমানা থেকে উত্তরে ডেমরা সারুলিয়ার করিম জুটমিল সীমানা পর্যন্ত ওয়াকওয়ে অংশে মালামাল লোড-আনলোডের শুল্ক আদায় ও লেবার হ্যান্ডলিং কমিশন আদায়ের জন্য বিআইডব্লিউএ এর একজন ইজারাদার রয়েছে। অবৈধ দখলদারদের কারণে ইজারাদার ওই কাজে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বালু ও পাথর ব্যবসার ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম-পরিচালক কে এম আরিফ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিষয়টি শিকার করে নিউজ না করার জন্য বলেন। এক পর্যায়ে তিনি দম্ভোক্তি করে বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক, একজন সম্পাদক এবং সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের একজন মালিকের নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা তার ঘনিষ্টজন। অনেকে তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয় বলেও তিনি দাবী করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন