শামীম চৌধুরী : প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালের টিকিট পেয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের স্বপ্নের পরিধিটা ছুঁয়েছিল আকাশ। অতীতের ১৭টি হেড টু হেড লড়াইয়ে ১২-৫ এ এগিয়ে থাকায় চেনা প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফেভারিট মর্যাদায় সেমিফাইনালে অবতীর্ণ হয়ে ফাইনালে ছিল চোখ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের। তবে নিজেদের গড়া রেকর্ড ভেঙে অর্জনের চূড়ায় যেতে পারেনি মেহেদী হাসান মিরাজের দল। চেনা মাঠ আর দর্শকের সমর্থন, কোনটাতেই চাঙ্গা হতে পারেনি বাংলাদেশ যুবারা। সেমিতে এসেই থেমেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। পাকিস্তানকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে অন্য এক আবির্ভাবের জানান দেয়া উইন্ডিজ যুবাদের ক্যারিবীয় ছন্দে ৩ উইকেটে হেরে থেমেছে বাংলাদেশ যুবাদের ট্রফির লড়াই!
একমাস আগে যে দলটিকে ৩-০তে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ যুবারা, সেই প্রতিপক্ষকে নিয়ে দুর্ভাবনার কিইবা আছে? এই আত্মতুষ্টির ফলটাই হাতেনাতে পেয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। যে দলটি একমাস আগে স্বাগতিকদের বিপক্ষে সিরিজ খেলে নিয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি, প্রথম ম্যাচে ৯ ক্যারিবিয়ান যুবার অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক, সিরিজে অভিষেক ১৪ জনের! বাংলাদেশ যুবাদের কাছে হোয়াইট ওয়াশেও যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মেজাজটা রপ্ত করার সুযোগ পেয়েছে দলটি। বাংলাদেশের কন্ডিশন এবং উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সুযোগটাও যে অন্যদের চেয়ে বেশি পেয়েছে ক্যারিবিয় যুবারা। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের স্পিন বিষে নীল সেই দলটিই এক মাসের ব্যবধানে অন্য এক দলে আবির্ভূত। নিজেদের চেনা শক্তি পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশ যুবাদের পর্যুদস্ত করে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো টিকিট পেলো ফাইনালের। আশ্চর্য হলেও সত্য, দু’বারই বাংলাদেশের মাটি থেকে এমন সাফল্য ক্যারিবিয়ান যুবাদেরÑ২০০৪’র পর ২০১৬।
যে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নিয়ে এতোটা উচ্চাশা দেশবাসীর, সেই দলটিকে চেনা ছন্দে দেখেনি কেউ গতকাল। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বিসর্জন দিয়েছে দলটি তাদের অর্জন। সকালে ঘন কুয়াশায় টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে বুমেরাং। উইন্ডিজ পেস অ্যাটাক নিয়ে ভয়ের কিছুই নেই, ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে কোচ,অধিনায়কের সে অভয়বানীর প্রতিফলন ছিল না ম্যাচে। বরং ভয়ংকর পেস অ্যাটাকে ছিন্ন ভিন্ন টপ অর্ডার শুরুতেই ব্যাকফুটে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে। স্কোরশিটে ৫৮/৩ থেকে চতুর্থ জুটির ৩০, ৬ষ্ঠ জুটির ১১১ বলে ৮৫, মিরাজের টানা ৩ ইনিংসে ফিফটিতেও (৬০) প্রত্যাশিত স্কোর পায়নি যুবারা। ৪৬তম ওভারে ক্যাবিবিয় পেস বোলার কেমো পল এর পর পর ২ ডেলিভারিতে সেট ব্যাটসম্যান মিরাজ (৭৪ বলে ৬০) এবং সাইফউদ্দিন (৫৫ বলে ৩৬) ফিরে গেলে ২২৬ এ থেমেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের স্কোর। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং গতকালই করেছেন ওই বোলার (৩/২০)।
১ মাস আগে ক্যারিবিয় যুবাদের স্পিনে ঘায়েল করায় সেমিফাইনালেও স্পিন নির্ভরতা-গৎ বাধা বোলিংয়ে অফ স্পিনার মিরাজকে দিয়ে শুরু। এখানেই সর্বনাশ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে মিরাজকে ডাউন দ্য উইকেটে পোপের ছক্কা, ৩য় এবং চতুর্থ বলে ২টি বাউন্ডারিতে প্রথম ওভারে ১৪ রান তুলে টি-২০ ছন্দে ওয়ানডে ব্যাটিং যে অশনি সংকেত দিয়েছে, সেখান থেকে ম্যাচে ক্রমশ ম্যাচে পিছিয়ে পড়া শুরু। পেস বোলার মেহেদী হাসান রানার বাউন্সারে শর্ট ফাইন লেগে পোপ যখন দিয়েছিলেন স্কাই ক্যাচ, তখন তার রান ২২ সেই ক্যাচটি শাওন গাজীর হাত থেকে ফসকে যাওয়ায় ৩৮ পর্যন্ত ইনিংস নিয়েছে টেনে ওই ক্যারিবিয় ওপেনার। আর এক পেস বোলার সফিউদ্দিন মিডল অর্ডার স্প্রিংগারের রিটার্ন ক্যাচটি ১৫ রানের মাথায় হাতছাড়া করার মাশুল দিয়েছেন। ১৫ রানে বেঁচে যাওয়া সেই ব্যাটসম্যান ইনিংস টেনে নিয়েছেন ৬২ পর্যন্ত, উইনিং শটটি এসেছে তার ব্যাট থেকেই। আর প্রয়োজনীয় সময়ে দলের প্রয়োজন মেটানোর শিক্ষাটা দিয়েছেন অধিনায়ক শিমরন হেটমেয়ার (৬০ রান)। ম্যাচে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে কিছুক্ষণের জন্য ফিরিয়ে এনেছিলেন বাঁ-হাতি স্পিনার শাওন। তৃতীয় স্পেলে (২-০-৫-২) ফর্ম ফিরে পাওয়া এই স্পিনার পরপর ২ ডেলিভারিতে গুলি এবং পলকে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও ৪৬তম ওভারে অকেশনাল স্পিনার শান্তর হাতে বল তুলে দিয়ে বড় ভুল করেছেন মিরাজ। ৩০ বলে ২০ টার্গেট যাদের, তাদেরকে টার্গেটটা বরং সহজ করে দিয়েছেন মিরাজ শান্তকে বল দিয়ে। এক একটি রানের জন্য ধুঁকতে থাকা ক্যারিবিয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওই ওভারে ১০ রান জয়ের পথ করেছে সুগম। সেখান থেকে আর ধুঁকতে হয়নি উইন্ডিজ যুবাদের। ৪৯তম ওভারে সাইফউদ্দিনকে কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি, পরের বলে একই পজিশনে স্প্রিংগারের আর একটি বাউন্ডারিতে গ্যাংনাম নৃত্য ছন্দে বাংলাদেশ সমর্থকদের স্তম্ভিত করে ৮ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে জিতে ফাইনালের টিকিট পেয়েছে দলটি। ২ বছরের পরিচর্যায় গড়ে ওঠা দলটি থেমে গেলো সেমিতে এসেই। অর্জনের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে খেলতে হবে এখন আগামীকাল শ্রীলংকার সঙ্গে, তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে। সেই সান্ত¦নার খোঁজেই এখন মিরাজরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন