একাদশ জাতীয় সংসদের সাবেক এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে মানব পাচারের মামলায় ফের ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন কুয়েতের শীর্ষ আপিল আদালত। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২৭ লাখ কুয়েতি দিরহাম জরিমানাও করা হয়েছে। কুয়েতের স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কারাদণ্ড ভোগের পর কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তার ৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল মাজেন আল জাররাহ এবং জনশক্তি পরিচালক হাসান আল খেদরকেও একই মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ওই মামলায় ঘুষ নেয়ার অভিযোগে কুয়েতের সরকারি এই দুই কর্মকর্তাকে তাদের পদ থেকে বহিষ্কারের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
বহুল আলোচিত এই মামলায় কুয়েতের সাবেক সংসদ সদস্য সালাহ খুরশিদকেও ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ৭ লাখ ৪০ হাজার কুয়েতি দিরহাম জরিমানা করা হয়েছে। আদালতের এই রায় চূড়ান্ত বলে জানিয়েছে গালফ নিউজ। এর আগে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে কুয়েতের একটি অপরাধ আদালত বাংলাদেশি সাবেক সংসদ সদস্য পাপুলকে ৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৯ লাখ কুয়েতি দিরহাম জরিমানা করেন।
নিজের একটি কোম্পানির মাধ্যমে কুয়েতের সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে কুয়েতে শ্রমিক পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে পাপুলের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশি কয়েক ডজন শ্রমিককে অবৈধভাবে কুয়েতে পাঠানোর মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের এই সাবেক এমপি।
কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে ৫ মিলিয়ন কুয়েতি দিরহাম মূল্যের সম্পদ গড়েছেন বলে সেই সময় জানানো হয়। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এই সংসদ সদস্যকে গত বছরের ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে দেশটির পুলিশ। সেই সময় অন্তত ৫ বাংলাদেশি প্রবাসী পাপুলের মাধ্যমে পাচার হয়েছেন দাবি করে অভিযোগ করেন। কুয়েতের আদালতের বিচারক এই অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন।
কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের জিজ্ঞাসাবাদে কাজী পাপুল কুয়েতি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে মানব ও অর্থপাচার করেছেন বলে স্বীকার করেন। দেশটিতে এমপি পাপুলের মারাফি কুয়েতিয়া নামের একটি কোম্পানি রয়েছে; যেখানে কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন।
তদন্তে তার বিরুদ্ধে অর্থ, মানবপাচার এবং বাংলাদেশি প্রবাসীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতাও পায় কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কুয়েতি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন করে তার বিরুদ্ধে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু করে।
বিদেশে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর পাপুলের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ওই আসনে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। পাপুলের পরিবার তথা স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্তে নেমেছে। তাদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন